বাঁশি তুমি দুলছ
বাঁশি তুমি দুলছ । অথচ সে তো একটি উষর প্রাণ । আর হাড়ের ভেতরে বিষ নেচে উঠছে। তাদের কথা আমি বলতে পারি না ভয়ে । জানি এমন নয় জীবন । চন্দন দাদুরা স্থির । একমাত্র সাইকেল আর বিশ্বাসের স্বাধীনতার দলটি গিলে খাচ্ছে সততার পোস্টার । তারা বেদম পোড়াচ্ছে আমাকে। কারও ইচ্ছে হলেই আলপথে গরলের তরঙ্গ দিয়ে যায় ।
ধমনি ছিঁড়ে যাচ্ছে খুব । সত্যি কথাটা হলো – বড় অবিশ্বাস গ্রাস করছে সুরে – কাছে কাছেই একলা একলা ছায়া ।ঘোলাজলের দিঘিতে সাপ খেকো মাছের নাচন । খুবই সাবধানে নামতে হয় – বসন ভাসছে ভাসুক – আমার কোন শিকার নেই –তোমার ইচ্ছে হলে যেতে পারো –সে এক গভীর খাদক ।
বিশ্বাস করো হে সুর
তুমি তো সাপ নাচাও । অথচ কেউ তোমাকে বেদেনী বলেনি কখনও — তোমার ঝাঁপিতে অনেক শিকার । বিশ্বাস করো হে সুর — তোমার ভোরে ভাসে বেলফুল । দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসা সঙ্গমের গন্ধটা কেমন জ্যৈষ্ঠের খাল হয়ে যায় । তারপর শুকনো বোলমুখ — কপাট খোলা থাকে দখিনা বাতাসের অপেক্ষায় , তখন হাঁস ভেসে আসে ।
পায়েল বাজে না আর । ঝাঁপিতে শুকনো খড় । খটখটে হাড়ের সাথে ঘাট অবদি জলের দাগ — চলে গেছে কেউ । সেখানে তুমি স্থির । পাড়ায় পাড়ায় তোমার গর্ভপাত বটিকা – তোমার গোপন আয়ের মাঝরাত । ঘন অন্ধকারে শোনে ঢেউ পেরোনো চিৎকার । পালাতে পালাতে তুমি ভুলে গেছ সব — নাম ; তোমার বদ্বীপ অঞ্চল ।
রাত ন’টায় দুজনেই একা
চাঁদের গা’য়ে মেঘ লেগেছে । সুধাদাদু বললেন ঠিক করে বল — চাঁদটা তো লুকাচ্ছে । আমিও ভাবছি লুকাচ্ছে তো বটেই , মেঘের পেছনে দৌড়াচ্ছে একটু আড়ালের জন্য — কখনো পাতলা কখনো ঘন ছোপ কালো । আবার সটান দৌড়ে যাচ্ছে উত্তর দিকে — উত্তর কি জানিস ? উত্তর মানে সম্মূখ , উত্তর মানে ভবিষ্যৎ — যাদের জন্য অতীত অর্থাৎ আমরা বেঁচে থাকবো , উত্তরই আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে ।
রাত নটায় দুজনে একা । উনি ফিরছেন ঘরের দিকে, আমিও — ভারসাম্যহীনে হাঁটছেন , ধস পার হচ্ছেন একা একা ৷ কালচিতি সাপটা বেরিয়ে যাচ্ছে ঢালাই রাস্তার ডিঙিয়ে । গরমে চাঁদটাও ভালো নেইরে , নাহলে আকাশকে দাঁড় করিয়ে রেখে অন্য কোথাও চলে যেতে পারে — বেচারা আকাশ — কেবল বুকটা ঢাকতে পারল না কোনদিন — সরাইখানা হয়ে থেকে গেল চিরকাল ।
লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল। জন্ম- ১৯৬৯ সালের জুন মাস। পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ– হঠাৎ হঠাৎই, মানুষের নদী, খরানদীর বৃষ্টি সম্ভব, সজনেফুল ও নিঃশর্ত সমর্পণ , আঁধারের পাঁজর , কালো নৌকার তৃষ্ণা , তিলক জন্মের ছায়া , হরিত প্রাণের কম্পাঙ্ক , জাম রঙের পুরুষ , মনস্কাম ছুঁয়ে দেখো, নিঃসঙ্গ নাভিচন্দন।