বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব জেলা নেত্রকোনার এক প্রত্যন্ত ইউনিয়নের সহিলপুর গ্রামে জন্ম ভাস্কর পুষ্প রঞ্জন আচার্যের। পিতা রাধা গোবিন্দ আচার্য ছিলেন একজন মৃৎ শিল্পী এবং ঠাকুরদাদা ছিলেন উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত কবিয়াল। পরিবারের দারিদ্র্যতার কারণে স্কুলের গণ্ডি পেরোতে না পারলেও নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। পুষ্প রঞ্জন ছোটবেলা থেকে রং তুলি দিয়ে মৃৎ শিল্পের কাজ করতে পছন্দ করতেন পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে মৃৎ শিল্পের প্রতি ছিলো অন্যরকম ভালোবাসা।
তিনি ছোট বেলা থেকেই অসাধারণ হাতের নৈপুণ্যে মাটির তৈরি মূর্তি বানাতে পারতেন। তার এই প্রতিভা দারিদ্র্যতাও দমাতে পারেনি ফলে ভাস্কর্য তৈরির এই কাজ একসময় ছড়িয়ে পড়ে নেত্রকোনা জেলাসহ সারাদেশে। একসময় পুষ্প রঞ্জন আচার্য ভাস্কর্য নির্মাণের পাশাপাশি ফটোগ্রাফি প্রশিক্ষণ নিয়ে নেত্রকোনা জেলায় স্থাপন করেন চিত্রায়ণ স্টুডিও, অল্পদিনেই জনপ্রিয়তা পায় এই স্টুডিও। কিন্তু যার কাজ মাটি নিয়ে সে তো আর বসে থাকতে পারে না ফলে তিনি ফটোতোলার পাশাপাশি ভাস্কর্য নির্মাণ অব্যাহত রাখেন। বাংলার মাটি মানুষ ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করেছেন মনোযোগ দিয়ে। তিনি আর্ট পেপার, কপিল বার্নিশ, ময়দা জিংক অক্সাইড ও বিভিন্ন জাতের রংয়ের মিশ্রণ ঘটিয়ে একধরনের আঠালো পদার্থ দিয়ে ভাস্কর্য নির্মাণ করতেন। তিনি প্রায় শ খানেক ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন তার মধ্যে দুর্ভিক্ষ দিন, ভাষা আন্দোলন, ঘুর্নিঝড় , স্বাধীনতা, মাছ ধরা, মুক্তিযোদ্ধার মা, বন্দি জীবন, আজো ভুলিনি মা একাত্তরের দামাল ছেলেকে ইত্যাদির মতো বিখ্যাত ভাস্কর্য । তার মধ্যে দুটি ভাস্কর্য জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে আছে। স্থানীয়ভাবে তার কাজের একবার প্রদর্শনী হয়েছিলো ১৯৮৬ সালে। তবে পুজির অভাবে খুব বেশি প্রদর্শনী হয়নি এবং শিল্পীর এই প্রতিভাকে যথাযথ মুল্যায়ন ও সম্মান করা যায়নি। একসময় অবহেলিত নিভৃতচারী শিল্পী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে নব্বই দশকে অনারারি মৃৎ শিল্পের ওপর তিন বছর শিক্ষকতা করেছেন। পুষ্প আচার্যদের পেশাগত কাজ ছিলো মাটির তৈরি মূর্তি বানানো। মাটির তৈরি ভাস্কর্য নির্মাণের চেষ্টা করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক শিল্পকর্মগুলো সত্যিই অসাধারণ নির্মাণ ছিলো । নিভৃতচারী এই গুণী শিল্পী শেষ বয়স পর্যন্ত হারিয়ে যাওয়া ফটোগ্রাফি ও আর্টের কাজ করে জীবনযাপন করতেন । তবে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলার প্রকৃতি মাটি আর মানুষের সঙ্গে কাজ করেছেন বেঁচে থাকতে চেয়েছেন তার শিল্পকর্মে। বিশিষ্ট মৃৎ ও চিত্রশিল্পী মাটি ও রংয়ের নিখুঁত কারিগর ৬ জুন ২০১৬ সালে ৭৮ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন। আমরা বিশ্বাস করি শিল্পী তাঁর কাজের মধ্যে তাঁর চিন্তার যে প্রতিফলন ঘটিয়েছেন মাটি ও মানুষের মধ্যে নিপুন তুলির আচড় তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বেঁচে থাকবেন তার কর্মে।
মোহাম্মদ আলী মুর্তোজা-পরিবেশ কর্মি।
নিভৃতচারী শিল্পী ভাস্কর পুষ্প রঞ্জন আচার্য সম্পর্কে খুব সুন্দরভাবে এই আর্টিকেলে উপস্থাপন করেছেন। সত্যি বলতে, আপনার লেখার মাধ্যমেই আমি তার সম্পর্কে জানতে পারলাম। সেজন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অসীম কৃতজ্ঞতা।