নদীর কলকল ধ্বনি, কাদা মাটির গন্ধ আর আবারিত সবুজে তিনি বড় হয়েছেন। তার সৃষ্টির প্রতিটা সুরে, শব্দ ও ভাষায় জড়িয়ে আছে মানুষ ও প্রকৃতি। তিনি যেন শুদ্ধতম এক প্রকৃতির সাধক, বাউল সংস্কৃতির মানুষ ভজনের এক অমৃত ধারা বহমান তার সৃজনশীলতায় ও যাপিত জীবনে। তিনি কবি এনামূল হক পালাশ। তাঁর জন্ম মামার বাড়িতে। ১৯৭৭ সালের ২৬ জুন নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার চিরাম গ্রামে। পৈত্রিক বাড়ি বারহাট্টা উপজেলার বামনগাঁও গ্রামে। বামধারার ছাত্ররাজনীতি করা এনামূল হক পলাশ একাধারে একজন কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক, শিশু সাহিত্যিক ও গীতিকার। সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে নেত্রকোনায় প্রতিষ্ঠা করেন সাংস্কৃতিক সংগঠন অন্তরাশ্রম । তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১৭ টি। কবি এনামূল হক পলাশ এর সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন চাতাল এর সহকারী সম্পাদক প্রবীর সাহা। সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে শিল্প-সাহিত্য, রাজনীতি, ব্যক্তি জীবন , মানুষ , সমাজ ও প্রকৃতির নানা প্রসঙ্গ।
চাতালের পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগত। আপনার লেখক হয়ে ওঠার প্রধান প্রেরণা কী?
এনামূল হক পলাশ : আমার মতো ক্ষেত থেকে উঠে আসা একজন নগন্য মফস্বলীকে স্মরণ করার জন্য প্রথমেই আমি চাতালকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমাদের গ্রামগুলো ছিলো খাল-বিল নির্ভর। রাস্তা-ঘাট বলতে কিছুই ছিলো না। বর্ষায় নৌকা আর হেমন্তে পা-ই ভরসা। খালের ধারে হিজল, করচ, কদম, জারুল আর বনজামের পাতার ফাঁক গলে নীচে চলতো আলো-আঁধারির খেলা। বাড়ির সামনে গোপাটে কেরায়া নৌকা আর উঠানের এক কোণায় পালকি কিছুটা আভিজাত্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। ফসল মৌসুমে ধান মাড়াইয়ের কাজ পতিত উঁচু জমিতেই চলতো। বিস্তীর্ণ অঞ্চল পতিত ছিলো। সেখানে ঘাস আর ঘাস। ধান লাগানোর সময় গামছায় বেধে ভাত নিয়ে যাওয়া হতো ক্ষেতে। ক্ষেতের আইলে বসে চলতো খাওয়া দাওয়া। শীতের মৌসুমে বসতো বাউল গানের আসর, গ্রামে গ্রামে চলতো যাত্রাপালা। বিভিন্ন দোকানের মালিক বা পল্লী চিকিৎসকগণ হালখাতা করতেন। হালখাতায় গান করার জন্য জনপ্রিয় শিল্পীদের আনা হতো। সারারাত চলতো গানের আসর। কানা সিরাজ, চাঁন মিয়া, আজাদ মিয়া, সনতারা বা অনেক সাধক কবি মাতিয়ে রাখতো ভাটি বাংলা। চলতো গাজীর পালা, মনসার পালা, কিচ্ছা। সেই সাথে বর্ষায় গ্রামে ছিলো হিরালির পদচারনা। বৃষ্টির জন্য দেওয়া হতো ব্যঙের বিয়ে। চলতো ধর্মীয় উৎসব। পাড়ায় পাড়ায় চলতো সবার নিজ নিজ ধর্মের উপাসনা। এরকম একটি পরিমণ্ডলে জন্মগ্রহণ করি। জন্মের পর বেড়ে উঠাকালীন সময়ে যে প্রাণ বৈচিত্র আমি দেখেছি সেটাই আমাকে লেখক হওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছে।
![](https://www.chatalbd.com/wp-content/uploads/2023/09/WhatsApp-Image-2023-09-23-at-12.04.43-PM-200x300.jpeg)
ছেলেবেলায় কী ধরণের লেখা আপনি পছন্দ করতেন? সেই সময়ে কোনো কারণ আছে কী যা ছেলেবেলাতেই আপনার চিন্তার জগতে প্রভাব বিস্তার করেছিলো?
এনামূল হক পলাশ : আমরা যখন স্কুলে পড়তাম তখন পাঠ্য বইয়ের বাইরের বইকে আউট বই বলা হতো। আউট বই পড়া ছিল নিষিদ্ধ। স্কুলের পড়া আর ধর্মীয় পড়া ছিল অনুমোদিত। রাশিয়া থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত ম্যাগাজিন সাইজের উদয়ণ নামের একটি পত্রিকা আব্বার নামে ডাক যোগে আমাদের বাসায় আসতো। আব্বার নামে কেন এই পত্রিকা আসতো আমার জানা নেই, কারণ আব্বা সেটা পড়তেন না। আমি পড়তাম। ছেলেবেলা থেকেই আমার আউট বই পড়ার প্রবণতা ছিল। সে সময় যা হাতের কাছে পেতাম তাই পড়ে ফেলতাম। মাসুদ রানা পড়ে মনে হতো মাসুদ রানার মতো গোয়েন্দা হবো। আবার দস্যু বনহুর পড়ার পর দস্যু হওয়াটাই শ্রেয় মনে করতাম। যাই হউক, বারহাট্টা পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর আমার পড়ার দিগন্ত খুলে গেল। কী পড়েছি সেটা বিষয় না, বিষয় হচ্ছে কী পড়িনি। চিন্তার জগতে প্রভাব বিস্তার করেছেন প্রথমে সুকান্ত, পরবর্তীসময়েতে নির্মলেন্দু গুণ। আর সব চেয়ে যে বিষয়টা হলো আমার, আমি হাঁটতাম। সারা শহর আমি যেখানেই থেকেছি হেঁটে ঘুরতাম। হাঁটতে হাঁটতে আমি আমার ঐ প্রকৃতিকে উপভোগ করতাম, পৃথিবীকে উপভোগ করতাম। আর আমার সবচেয়ে ভাল লাগে মানুষ। মানুষ, মানুষের স্রোত, মানুষের সঙ্গ, মানুষ কীভাবে চলে, মানুষ কীভাবে বাঁচে এই বিষয়গুলো আমি সব সময় খেয়াল করতাম এবং এই বিষয়গুলো অবশ্যই আমার কবিতার মধ্যে বার বার ফিরে আসছে। এবং অবশ্যই সেটা প্রভাব বিস্তার করেছে।
শিল্প-সাহিত্যের সাথে মানুষের সামাজিক যাপিত জীবনকে আপনি কীভাবে বিশ্লেষণ করেন?
এনামূল হক পলাশ : গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আসলে আমি মনে করি বা বলতে পারেন বিশ্বাস করি মানুষের সামাজিক যাপিত জীবনই সাহিত্যের অনুষঙ্গ হওয়া উচিত। আমি আসলে এখন যে বিষয়টা ভাবতেছি, আমাদের ভাটিবাংলা বা আমাদের অঞ্চলের যে ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও যাপিত জীবন আমাদের সাহিত্যে উপজীব্য হতে পারে । আমাদেরতো উকিল মুন্সি, রশিদ উদ্দিন, জালাল খাঁ আছেন। এঁরা তো কবি। আমি তাঁদেরকে কবি হিসাবেই দেখি। গায়ক হিসাবে কিন্তু আমি উনাদের কোন সময় দেখি না। গায়ক তাদের একটা পার্ট। উনারা বেসিক্যালি কবি। আসলে মানুষের মানুষের শিকড়, যেখানে যে ভাষাটা মানুষ বুঝে, এই ভাষায় আমি লিখতে চাই। এবং প্রচলিত প্রমিত যে ধারণা, সেই ধারণাটাকে আমি ভেঙে দিতে চাই। এইরকম একটা টেনডেন্সী আমার ভিতরে কাজ করে। তাতে কতটুকু আমি সফল হতে পারব জানি না। আমি যখন যেটা মনে করি যে এখন আমাকে এটা করতে হবে আমি তখন সেটাই করি। এটা করতে গিয়ে আমার ক্রটি বিচ্যুতি হয় তা হয়তো পাঠকের চোখে ধরা পড়ছে। এখানে তাড়াহুড়ার একটা বিষয় আছে, আমার সব কিছুই তাড়াহুড়া। আমার পড়াশোনা, আমার কবিতা লেখা, আমার বাড়ি-ঘর তৈরি করা, আমার জীবন যুদ্ধ আমার সবকিছুর মধ্যেই আমি তাড়াহুড়ার মধ্যেই আছি। একটা কবিতাময় জগতের মধ্যে একটা ঘোরের মধ্যেই আমি আছি। এবং সেই তাড়াহুড়া করতে গিয়ে ত্রুটি বিচ্যুতি হতেই পারে। সব পরিপাটি হয়তো না। আমার চাকুরি জীবন আমার কবিতাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। আমি যখন দেখি যে আমি একটা ছকে বাঁধা জীবন। মানুষ-মানুষের সাথে আমার কাজ, মানুষকে সেবা দেয়া আমার কাজ, আমি যখন সেবাটা দিতে পারতেছি না আইনি কারণে। আমাদের বিষয়গুলি হচ্ছে টিম ওয়ার্ক। টিমের অন্যান্য লোকজনের অসহযোগিতার কারনে বা আইনি কারণে যখন আমি একজন মানুষকে প্রকৃতভাবে সেবা দিতে পারি না তখন সে অসঙ্গতিটা আমাকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়। এবং আমার বিভিন্ন কবিতায় সে বিষয়গুলির প্রভাব রাখে। আমি দেখেছি, আমি একটি কবিতাও লিখেছি এ ব্যাপারে। একজন লোকের ক্যান্সার হয়েছে যার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার। কৃষকের তো আর নগদ টাকা থাকে না। সে তখন জমি বিক্রি করে। কারণ সে হাসপাতালে যেতে হলে তার জন্য টাকা দরকার, ডাক্তারের কাছ থেকে সেবা নিতে হলে তার টাকা দরকার। তো টাকাটা সে পাবে কীভাবে? তাঁকে জমি বিক্রি করতে হবে। দেখা গেল এই কাজটা করতে গেলে সে আমার কাছে আসে জমির কাগজ ঠিক করতে। আমার কাছে যখন আসে তাহলে কী দাঁড়াল- একজন ক্যান্সার রোগী সে হাসপাতালের সেবা নেওয়ার আগে আমার কাছে সেবা নিতে আসে। মানে আমি প্রথম সেবা দাতা এবং সে সেবা গ্রহীতা। তারপর এখান থেকে কাগজ ঠিক করে, ট্রান্সফার করে তারপর তার চিকিৎসা শুরু করে। তো এই বিষয়টা যখন আমি অনেক সময় এই রকমও দেখি যে আইনি কাঠামোর কারণে নির্দিষ্ঠ সময়ে সে সেবাটা পায় না। সে যখন এটা না পায় তখন চিকিৎসার অভাবে মারাও যায়। এইটাও আমার কবিতার মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। আবার অনেক সময় আমি খুব আপ্লুত হই যখন দেখি যে দীর্ঘদিন একটা মানুষ জটিলতায় ভোগতেছে আর এসেছে আমার কাছে সমাধানের জন্য। আর যখন আমি একটা ছোট সেবা দিয়ে ভাল আচরন করে তার কাজটা করে দেই তখন সে হাসি মুখে বিদায় নেয় এটা আমার কাছে অত্যন্ত ভালো লাগে।
![](https://www.chatalbd.com/wp-content/uploads/2023/09/WhatsApp-Image-2023-09-23-at-12.04.51-PM-300x200.jpeg)
আপনি বহুমূখী সৃজনশীল কাজ করেছেন। সাহিত্যের কোন ধারাটিতে কাজ করতে আপনি বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
এনামূল হক পলাশ : আমি আসলে একজন কবি। নিজেকে কবি হিসেবে পরিচয় দিতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করি। এর বাইরে আমি অনেক কাজ করে থাকি যেগুলো সিম্বলিক কাজ বলতে পারেন। যেমন আমি দুইটি ভাস্কর্য নির্মাণ করিয়েছি ভাস্কর অখিল পালকে দিয়ে। কবিতাকুঞ্জ প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকেই জড়িত ছিলাম, অন্তরাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছি, গায়েন বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেছি, কিছু গান লিখেছি, কিছু অনুবাদ করেছি। এগুলো সবই সিম্বলিক। যে বিষয়টা যেমন হওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি তা নিয়ে আমি কাজ করি। আমার কোন কাজই চূড়ান্ত নয়। তবে আমি এটাও মনে করি, যে কাজটা করা হয়নি তা হয়নি। কিন্তু যে কাজটা একবার করা হয়ে গেছে সেটাই আমার কর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। কে কী ভাবলো তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। কর্মই আমার ধর্ম।
আপনি অন্তরাশ্রম নামে পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন এবং একই নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন পরিচালনা করেছেন। অন্তরাশ্রম নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
এনামূল হক পলাশ : আমি একটি স্কুলের স্বপ্ন দেখি। পৃথিবীকে পাঠশালা জ্ঞান করি। আমি মনে করি-মোরাল সাইন্স পাঠ্যপুস্তকে থাকা খুবই জরুরি। অন্তরাশ্রম মানবিক জীবনের পাঠকে গ্রহণ করে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কাজ পরিচালনা করবে। আমি স্বপ্ন দেখি অন্তরাশ্রম সকল কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করবে। আমরা সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্তর্জাতিকতাবাদী চেতনায় অনন্ত জীবনের গান গাইব। এর জন্য যা যা পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন তার জন্য অন্তরাশ্রম সিম্বলিক কাজ করে যাবে।
প্রকৃতি নিয়ে আপনি লেখালেখি করেছেন। মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ককে আপনি কীভাবে দেখেন?
এনামূল হক পলাশ : আমরা প্রথমত প্রকৃতির সন্তান। আমাদের মা বাবা যেভাবে আমাদেরকে লালন করেন ঠিক তেমনি প্রকৃতির কোলে পিঠে করেই আমরা বাঁচি। আমি আবার প্রকৃতিকে স্রষ্টা বলতে চাই না যেমন আমাদের পিতা মাতা আমাদের স্রস্টা না। আমরা তাদের মাধ্যমে এসে তাদের আশ্রয়ে বেড়ে উঠি। সে অর্থে প্রকৃতি আমাদের এক ধরণের পিতা-মাতা। আমরা যদি অবাধ্য হই তাহলে আশ্রয় হারাবো। আমাদের উপর নেমে আসবে ভয়াবহ বিপদ।
ছাত্রজীবনে লেখালেখির পাশাপাশি আপনি সক্রিয় ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। আপনার সময়ের ছাত্ররাজনীতি এবং বর্তমান সময়ের ছাত্ররাজনীতি মধ্যে কোন পার্থক্য চোখে পড়ে?
এনামূল হক পলাশ : হ্যাঁ, আমি সক্রিয় ছাত্ররাজনীতিতে ছিলাম। শ্রমিক শ্রেণির রাজনীতির সমর্থক হিসেবে কাজ করতাম। সময়টা আমাদের অনুকূলে ছিল না। তবে আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি। ছাত্ররা টেন্ডারবাজি বা চাঁদাবাজি করবে এমন ভাবনা আমাদের সময়ে কারো ভেতরে ছিল না। বর্তমান ছাত্ররাজনীতি নিয়ে আমি হতাশ। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।
আপনি গণতন্ত্রের গান ও রাত্রির গান নামে জনপ্রিয় গানের গীতিকার। আগামীর বাংলাদেশকে আপনি কেমন দেখতে চান?
এনামূল হক পলাশ : এই দুটি গানের পরে আমার আরো দুটি গান জনপ্রিয় হয়েছে যেমন, বাউল জন্ম ও চট্টনের গীত। এই দেশ আমাদের। এখানেই জন্ম এখানেই মৃত্যু। আবহমান কালের সহজ ধারা আমাকে প্রশান্তি দেয়। আগামী বাংলাদেশকে আমি সহজ, সরল আর সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী অবস্থানে দেখতে চাই। এর জন্য দরকার একটি কালচারাল রেভ্যুলেশন। সাংস্কৃতিকভাবে আমরা একটি সংকটকাল অতিক্রম করছি।
বর্তমান শিল্প-সাহিত্যে কোনো সংকট আছে কি? যদি থাকে তবে তাকে কীভাবে বিশ্লেষণ করেন?
এনামূল হক পলাশ : হ্যাঁ, সংকট আছে। আমার বন্ধুরা হয়তো আমার চিন্তাটাকে মানবেন না। বর্তমান শিল্প-সাহিত্য একটি ভয়াভহ সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। বাংলা কবিতা ইতিমধ্যে দুর্বোধ্য তকমায় আটকে আছে। সকল শিল্প ও সাহিত্য গণবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। জনগণের সংস্কৃতি বা গণমূখী সংস্কৃতির চর্চা এখন মৃতপ্রায়। আধুনিক সাহিত্য মুখে মুখে সাহিত্য রচনাকে গ্রাম্যতা বলে বিদায় দিয়েছে। যেটুকু পাওয়া যায় তা ফাইন এবং ফোক আর্টের পার্থক্য সৃষ্টির মাধ্যমে; ফলে তৈরি হয়েছে ‘অপর’ ভাষা; যা আমাদের নয়। ভাষার রাজনীতিতে পরাস্ত আজ লৌকিক সাহিত্য। এলিটের ভাষায় যে চর্চা হয় তা নিয়ে গড়ে উঠেছে সাহিত্য সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট নির্ধারণ করে দেয় কে ভালো সাহিত্যিক আর কে খারাপ সাহিত্যিক। এই সিন্ডিকেটের মধ্যেও আবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাফিয়া গ্রুপ আছে। এরা বুর্জোয়া সাহিত্যের এজেন্ট হয়ে বিদায় জানাচ্ছে গণমানুষের সংস্কৃতি ও চেতনাকে। ফলে, একটি সংস্কৃতিহীন সময় ও সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠছে মাকাল ফলের মতো। ভেতরে সার না থাকা চর্চার ভেতর যে অপসংস্কৃতি বেড়ে উঠছে তার ফাঁক দিয়ে মাথাচাড়া দিচ্ছে জঙ্গীবাদ, মৌলবাদসহ নানা ধরনের সমস্যা। এই আকালের যুগে সমাজের স্বাভাবিক বিকাশ ঘটাতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে স্বতস্ফূর্ত সাহিত্যের কাছে। ফিরতে হবে মানুষ আর প্রকৃতির কাছে।
ধন্যবাদ, সময় দেওয়ার জন্য।
এনামূল হক পলাশ : আপনাকেও ধন্যবাদ। ধন্যবাদ চাতাল সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি।
![](https://www.chatalbd.com/wp-content/uploads/2023/09/WhatsApp-Image-2023-09-23-at-12.46.21-PM-200x300.jpeg)
সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী
প্রবীর সাহা– সহকারী সম্পাদক, চাতাল।