Circle of desire
”ইতিহাস সাক্ষী হত্যা আর নির্যাতন করে কোনো শাষকই বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না…
ইয়াহিয়াও পারবেনা”
কী আশ্চর্য,তাই না!মুক্তিযুদ্ধের ৫০বছর পর আজও এ কথা কতোই না প্রাসঙ্গিক। পরিচালক হাবিবুর রহমান অলাতচক্র চলচ্চিত্রটিতে এর যথার্থ রূপায়নই করেছেন,৫০বছর পর আজও কোন সে ইয়াহিয়ার ভূত যেনো কাধে চেপে বসে আছে।
এই প্রথম সে জেনেছিলো নারীর লাশ ভাসে উপুড় হয়ে আর পুরুষের চিত হয়। শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে ভেসে আসছিলো এরকম শত শত নরনারীর লাশ।
অলাতচক্র চলচ্চিত্রটিতে তায়্যেবা চরিত্রে মুক্তিযুদ্ধের সেই ভয়াল বর্ণনা আমাকেও শিহরিত করেছিলো। সাহিত্যকে চলচ্চিত্রে রূপ দেয়াটা এখন খুব একটা হয় না। কিন্তু আমাদের কিছু পরিচিত মুখ, তারা এতো সুন্দর করে সাহিত্য নিয়ে গোটা চলচ্চিত্র বানিয়ে ফেললো, তা সত্যি প্রশংসনীয়। আহমদ ছফার অলাতচক্র পড়ে এটা অনেকেরই মনে হতে পারে, ছফা হয়তো কেবল ত্যায়েবা চরিত্রের জন্যই এতো বড় একটা ইতিহাসের বাস্তবচরিত্রকে ধারণ করতে পেরেছিলো। ডাক্তার মাইতির ভাষায় এখন বোধহয় তার নিজের কাউকে হারানোর সময় এসে গেছে। এই ‘৭১এ সবাই কিছু না কিছু হারিয়েছেই,আর এখন লেখকের নিজের সেই আত্নত্যাগের সময় এসেছে।
শরনার্থী শিবিরে এসেও এপার বাংলার ত্যায়েবা যেনো অবিরত যুদ্ধ চালিয়ে গেছে তার দূরারোগ্য রোগের বিপরীতে। সেই রোগও শত্রুর ন্যায় তার শরীরে আগুনের বলয় তৈরী করেছে, একাকীত্বের বিষযন্ত্রণা তার জীবনের সবকটি আলোকে ঝড়োয়া হওয়ায় শীতল করে কেবল প্রাণ শক্তিটাকে শুষে নিচ্ছে। ছফার লেখায় ত্যায়েবা যেনো এক বিশাল হাহাকার, বিশাল উদাহরণ শরনার্থী জীবনের।
হাবিবুর রহমানের অলাতচক্র চলচ্চিত্রটিতে এমনটাই প্রতিটি চরিত্রই যেনো আজও কোনো নির্মম বাস্তবতাকে আমাদের সামনে ইঙ্গিত করছে।
সর্বোপরি বাংলাভাষায় নির্মিত এই চলচ্চিত্রে থ্রীডি প্রযুক্তির ব্যবহার কেবল কালজয়ী ইতিহাসই নয়, বরং অলাতচক্রকে বাস্তবে তুলে ধরার এক উপলব্ধিও বটে। হয়তো এই প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের কাছে সাহিত্য কে আরো ভালভাবে অনুভব করার চূড়ান্ত প্রয়াস। আমার মতে একজন দর্শক হিসেবে আমি এর পুরো আস্বাদটুকুই নিতে পেরেছি। তাই এখনো যারা অলাতচক্র দেখেন নাই, দেখে আসতে পারেন।
অলাতচক্র Alatchakra: The Circle of Desire দেশে এখন চলচ্চিত্রটির দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে । ঢাকায় বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্স, যমুনা ব্লকবাস্টার, সীমান্ত স্কয়ার (রাইফেলস স্কয়ার) এ থ্রীডিতে চলচ্চিত্রটি দেখানো হচ্ছে।