Friday, June 13, 2025
  • Login
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ
No Result
View All Result
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ
No Result
View All Result
No Result
View All Result
Home প্রবন্ধ

প্রবন্ধ।। ‘লিচুর বাগানে’ গানের গীতিকার কে? ।। সঞ্জয় সরকার

Chatal by Chatal
June 9, 2025
in প্রবন্ধ
A A
0
প্রবন্ধ।। ‘লিচুর বাগানে’ গানের গীতিকার কে? ।। সঞ্জয় সরকার

রায়হান রাফি নির্মিত ও শাকিব খান এবং সাবিলা নূর অভিনীত ‘তাণ্ডব’ সিনেমাটি ইতিমধ্যে ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। আর এ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে প্রীতম হাসান, জেফার রহমান, মঙ্গল মিয়া ও আলেয়া বেগমের গাওয়া ‘লিচুর বাগানে’ টাইটেলের একটি লোকগান। ট্রেইলার হিসেবে গানটি প্রকাশের পরপরই দর্শক-স্রোতারা তা লুফে নিতে শুরু করেছেন। আর এরই মধ্যে শোরগোল শুরু হয়েছে গানটির প্রকৃত গীতিকারের নাম নিয়ে। কেউকেউ গানটির একক ও মূল গীতিকার হিসেবে ছত্তার পাগলার নামটি প্রতিষ্ঠিত করতে রীতিমতো ওঠেপড়ে লেগেছেন। এর স্বপক্ষে কিছু প্রমাণপত্রও হাজির করেছেন তারা, যা একেবারেই ঠুনকো।

প্রকাশিত গানটিতে গীতিকার হিসেবে ছত্তার পাগলার নামের পাশাপাশি আরও তিনজনের নাম যুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন: প্রীতম হাসান, মেহেদি আনসারি ও ইনামূল তাহসিন। এর কারণ তারা তিনজনও গানটির কথায় কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করেছেন। আবার গানটির বিবরণে (ডেসক্রিপশনে) লেখা হয়েছে: ‘লিচুর বাগানে (কে দিল পিড়িতের বেড়া) একটি প্রচলিত ঘাটুগান। এই লোকগানটির লিরিকে ছত্তার পাগলা কিছু অংশ যুক্ত করে গাইতেন। তার মাধ্যমেই এ গানটি বিখ্যাত হয়।’

আমরা মনে করি, সিনেমার নির্মাতা বা গানটির কম্পোজারের এই বক্তব্য অনেকটাই সত্য। সত্যিই এটি একটি বহুল প্রচলিত ঘাটুগান। ছাত্তার পাগলা কিছুটা পরিবর্তন করে তাঁর মতো ঢঙে গাইতেন। কিন্তু তাঁর মাধ্যমে গানটি বিখ্যাত হয়েছে সে কথা পুরো সত্য নয়। এটি এর আগে থেকেই বহুল প্রচলিত। নেত্রকোনা তথা পূর্ব-ময়মনসিংহ অঞ্চলের অনেক প্রবীণ লোকের মুখস্ত গান এটি। উনিশ শতকে নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ অঞ্চলে ঘাটুগান খুব রমরমা ছিল। বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত টিকেছিল সেই রমরমা ভাব। এরপর আস্তে আস্তে তা স্তিমিত হয়ে আসে। আজকের দিনে ঘাটুগান একেবারেই বিলুপ্ত একটি লোকসাংস্কৃতিক প্রকরণ। তবে মূল সমস্যা এখানে না, সমস্যা হচ্ছে, যারা ছত্তার পাগলের নামটি এই গানের মূল গীতিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন তাদের নিয়ে। ছত্তার পাগলার নামটি প্রতিষ্ঠিত করার মধ্য দিয়ে তারা এই লোকগানটির পরম্পরা বা বিবর্তনের প্রকৃত ইতিহাসটিকেই যেন অস্বীকার করতে চাচ্ছেন। আর এসব করে ছত্তার পাগলার মতো একজন গুণী গায়েনকে অযথাই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন।

এই কথিত গবেষকেরা হয়তো জানেনই না, এর বাইরেও আরও কিছু প্রমাণপত্র আছে, যা দেখার পর নিশ্চিতভাবে বলতে হবে যে, গানটির মূল গীতিকার ছত্তার পাগলা নন। অথবা এটি ছত্তার পাগলার একক রচিত গান নয়। অন্যান্য লোকগানের মতো এটিও কাল থেকে কালান্তরে, স্থান থেকে স্থানান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে, তেমনি আবার ঘটেছে সংযোজন-বিয়োজনও। এটিই লোকগানের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য। তবে ছত্তার পাগলা যে গানটি গাইতেন এবং তিনি নিজেও যে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করেছেন- তা সত্য।

এবার একটু সুলুক সন্ধান করা যাক। নেত্রকোনার জনৈক কবির বরাত দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক লিখেছে, ‘লিচুর বাগানে গানটির গীতিকার ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তিনি জীবদ্দশায় পাণ্ডুলিপিতেও গানটি রেখে গেছেন।’ ছত্তার পাগলার গানের গবেষক দাবিদার এই কবি আরও বলেন, ‘গানটা আশির দশকের আগে কেউ কোথাও শোনেননি। গানটা প্রথম জনসমাজে নিয়ে এসেছেন ছত্তার পাগলা।’ মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখানে কবি শুধু ছত্তার পাগলাকে গীতিকারই বলেননি, গানটির সুরকারও বলেছেন।

আমরা যতটুক জানি, ছত্তার পাগলা খুব একটা লেখাপড়া জানতেন না। তবে তিনি গান বাঁধতেন (রচনা করতেন)। ‘কাঙাল মাইরা জাঙাল দিলে’, ‘হারভেইচ্ছারে, তর বল খেলাডা তওতবা কইরা ছাড়’, ‘ইঞ্জিন ছাড়া ঠেলাইয়া নেই মালগাড়ি’- এরকম আরও কিছু জনপ্রিয় গান তাঁরই রচনা এবং সুর করা। কিন্তু তাঁর নিজের লেখা কোনো পাণ্ডুলিপি নেই। মোহনগঞ্জের দন্ত চিকিৎসক আল মামুন ছত্তার পাগলার মৃত্যুর (২০১৪) তিন বছর আগে তাঁর কাছ থেকে শোনা কিছু গান একটি খাতায় লিখে রেখেছিলেন। বর্তমানে খাতাটি সেখানকারই আরেক কবির কাছে সংগৃহীত আছে। ছত্তার পাগলার কাছ থেকে শোনা এবং আল মামুনের লেখা সেই খাতাটিকেই এখন তারা ছত্তার পাগলার পাণ্ডুলিপি হিসেবে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। প্রকৃত পক্ষে আল মামুন বা ওই খাতার সংগ্রাহক- কেউই লোকসংস্কৃতির গবেষক নন। লোকগানের উৎস বা ইতিহাস সন্ধানের গবেষণা তারা কখনও করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। কাজেই আরেকজনের শোনা এবং লেখা একটি গানের খাতাকে ভিত্তি হিসেবে ধরে ‘লিচুর বাগানে’ গানটির রচয়িতা হিসেবে সম্পূর্ণ ক্রেডিট ছত্তার পাগলার ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা একটি খোঁড়া যুক্তি ছাড়া আর কিছু নয়।

আরেকটি খোঁড়া যুক্তি হচ্ছে, পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে ছত্তার পাগলাকে লেটো গানের শিল্পী হিসেবে দাবি করা। নেত্রকোনা অঞ্চলে কখনও লেটু গানের প্রচলন ছিল না। ঘাটু গান ছিল। লেটো আর ঘাটু গান এক নয়। প্রখ্যাত লোকসংস্কৃতি গবেষক চন্দ্রকুমার দে, সিরাজুদ্দিন কাশিমপুরী ও রওশন ইজদানীসহ যারা এ অঞ্চলের লোকসাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করেছেন- তারা একজনও বলেননি যে, এ অঞ্চলে লেটো গান ছিল। ছত্তার পাগলাকে বড় করে তুলে ধরতে গিয়ে এসব অবান্তর প্রসঙ্গ সামনে আনা হচ্ছে।

এবার আরেকটু ডানে-বামে তাকানো যাক। গানটি যে একটি ঘাটুগান এবং ছত্তার পাগলার অনেক আগে থেকেই বহুল প্রচলিত, তার স্বপক্ষে কিছু প্রমাণপত্র উপস্থাপন করা যাক।

বিভিন্ন রেফারেন্স বই

১. ময়মনসিংহ জেলা বোর্ড থেকে ১৯৭৮ সালে শাকির উদ্দিন আহমদের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘ময়মনসিংহের সাহিত্য ও সংস্কৃতি’ গ্রন্থে ‘ময়মনসিংহের লোকগীতি ও লোকসঙ্গীত’ শিরোনামের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লিখেছিলেন মোহাম্মদ আজিজুল হক্ চৌধুরী। গ্রন্থটির ২০৪ পৃষ্ঠায় ‘গাডু বা ঘাটু গান’ পরিচ্ছেদে ‘লিচুর বাগানে’ গানটির সবকয়টি দিশার (সম্পূর্ণ গানটি) উল্লেখ আছে। দিশা-১ এ সুষ্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে প্রথম স্তবকটি: ‘কে দিল পিড়িতের বেড়া, লেচুর বাগানে/ লেচুর বাগানে সই গো লেচুর বাগানে/ ছোট ছোট লেচু গুলি, বঁধু তুলে আমি তুলি/ বঁধু দেয় আমার মুখে, আমি দেই বঁধুর মুখে।/ কে দিল—।’ প্রবন্ধে লেখক আরও উল্লেখ করেছেন, ‘—বলাবাহুল্য, গানগুলো মুখে গীত হওয়াতে বহু পরিবর্তন এসেছে। তথাপি ঘাটুগানের যেসব অংশ অবিকৃত বলে ধারণা করা হয়, তার কিছু উদ্ধৃতি দিচ্ছি।’ আর সেই উদ্ধৃতি হিসেবেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটির উদাহরণ আনেন তিনি। ১৯৭৮ সালের ওই প্রবন্ধে ছত্তার পাগলার নাম উল্লেখের প্রশ্নই আসে না, কেননা ছত্তার পাগলা তখন এতটা পরিচিতই হয়ে ওঠেননি। কাজেই স্বাবাভিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে- গানটি বহুল প্রচলিত না হলে এই প্রবন্ধে আসল কী করে?

২. নেত্রকোনার লোকসাহিত্য গবেষক গোলাম এরশাদুর রহমানের নামটি স্থানীয় কারও অজানা নয়। ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘নেত্রকোনার লোকগীতি পরিচয়’ গ্রন্থেরও ১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে ‘লিচুর বাগানে’ গানটির কথা। তিনিও প্রচলিত একটি ঘাটুগান হিসেবেই এটির উল্লেখ করেছেন। মোহনগঞ্জ রেল স্টেশনের প্রায় প্রতিদিনকার ‘মজমা গায়ক’ ছত্তার পাগলাকে নিশ্চয়ই চিনতেন গোলাম এরশাদুর রহমান। কারণ রেল স্টেশন আর তাঁর নওহাল গ্রাম একেবারেই কাছাকাছি। এই গানটি ছত্তার পাগলার লেখা হলে তিনি তা উল্লেখ করতে ভুলতেন না। বইটির বেশিরভাগ গানেই গীতিকারদের নাম উল্লেখ করেছেন তিনি।

৩. বিলুপ্তপ্রায় ঘাটুগানকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার সাংবাদিক ও লোকসংস্কৃতি গবেষক সন্তোষ সরকার। স্থানীয়ভাবে ঘাটুগানের একটি দলও পরিচালনা করতেন তিনি। সেই দল নিয়ে একাধিকবার ঢাকায়, জেলা সদরে এবং ভারতে পরফর্মও করিয়েছেন। সন্তোষ সরকার ঘাটুগানসহ এ অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি নিয়ে লেখালেখিও করেছেন বিস্তর। ২০০২ সালে স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতি থেকে স্বপন কুমার পালের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘নেত্রকোনার লোকজগত’ সংকলনে (৯ পৃষ্ঠায়) তিনি ঘাটুগান নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখেন। সেখানেও উল্লেখ আছে ‘লিচুর বাগানে’ গানটির কথা। তবে কথার কিছুটা ভিন্নতা আছে, যেমন: কে দিল পিড়িতের বেড়া/ আমার লেচুরও বাগানে/ লেচুরও বাগানে নারে কমলার বাগানে/ ছোডু ছোডু লেচুগুলি বন্ধু তুলে আমি তুলি/ বন্ধু দেয় গো আমার মুখে/ আমি দেইগো বন্ধুর মুখে।’ ঘাটু গানের নিরলস গবেষক সন্তোষ সরকারও কি ছত্তার পাগলার নাম এড়িয়ে গেছেন?

৪. ময়মনসিংহ অঞ্চলের আরেক লোকসংস্কৃতি গবেষক মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার। তিনিও ঘাটুগান নিয়ে লিখেছেন। ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর গবেষণা গ্রন্থ ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহের লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি’। গ্রন্থটির ১১৬ পৃষ্ঠায় আছে ‘লিচুর বাগানে’ গানটি। আর তাতেও আছে কথার ভিন্নতা। যেমন: ‘কে দিল পিড়িতের বেড়া সাধের লিচু বাগানে/ সাধের লিচু বাগানে গো মজার লিচু বাগানে ॥/ ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্ধু তুলে আমিও তুলি/ বন্ধু দেয় আমার মুখে গো, আমিও দেই বন্ধুর মুখে/ আরে কে দিল পিড়িতের বেড়া—।’ মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তারও কোনো রচয়িতার সন্ধান দিতে পারেননি।

৫. বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে মোহাম্মদ নূরুল হুদার সম্পাদনায় ২০০৭ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সমীক্ষামালা-১০’ এর ‘লোকসঙ্গীত’ খণ্ডের ‘ঘাটুগান’ অংশের (২৫১ পৃষ্ঠায়) লেখক ফরিদুল হক দুলাল এই গানটির দুটি ভার্সনের কথা উল্লেখ করেছেন। একটি ময়মনসিংহের ত্রিশালের ভার্সন, আরেকটি টাঙ্গাইলের মধুপুরের ভার্সন। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা থেকে সংগৃহীত ভার্সনটির সঙ্গে মোহাম্মদ আজিজুল হক চৌধুরীর সংগৃহীত গানটির মিল আছে। কিন্তু টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার আংগারিয়া গ্রামের কিতাব আলী বয়াতীর কাছ থেকে সংগৃহীত গানটির কথা একটু ব্যতিক্রম, যেমন: কে দিল পিড়িতের বেড়া/ লিচু কমলার বাগানে/ ও লিচু কমলার বাগানে গো/ লিচু কমলার বাগানে/ হায়রে মনে যদি ইচ্ছা করি/ বেড়া ভাইঙ্গা যাইতে পারি/ কমলার বাগানে—/ কমলার বাগানেতে যাইয়া গো/ কমলা খাব দুজনে।’ অর্থাৎ এবার দেখা গেল, শুধু নেত্রকোনা বা পূর্ব ময়মনসিংহেই না, সূদূর টাঙ্গাইল বা ময়মনসিংহের ত্রিশালেও বিস্তৃত ছিল এই গানের পরিধি। বলাবাহুল্য, সেখানেও নেই ছত্তার পাগলা বা অন্য কারও নাম।

৬. লোকসংস্কৃতি গবেষক হিসেবে ড. ওয়াকিল আহমদের নাম সবাই জানেন। ২০১৪ সালে তাঁর ‘ঘাটু গান’ শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। সে গ্রন্থেরও ৪৪ পৃষ্ঠায় আছে ‘লিচুর বাগানে’ গানটির তিনটি ভার্সন। কিন্তু রচয়িতার নাম নেই। সংগ্রহের যেসব রেফারেন্স উল্লেখ করেছেন, তাতেও আসেনি নির্দিষ্ট কারও নাম।

৭. ২০১৭ সালে সঞ্জয় সরকারের ‘নেত্রকোনার লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি’ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটির দ্বিতীয় প্রবন্ধটি ‘ঘাটুগান’ নিয়ে লেখা। সেটিরও ৪২ পৃষ্ঠায় বহুল জনপ্রিয় ‘লিচুর বাগানে’ গানটির পুরোটা (সবকয়টি দিশা) উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানেও আসেনি কোনো একক গীতিকারের নাম।

৮. সর্বশেষ ২০২১ সালে প্রকাশিত হয় ড. আমিনুর রহমান সুলতানের ঘাটুগান বিষয়ক গ্রন্থ ‘লোকনাট্য ঘাটুগান’। সেটিরও পরিশিষ্টের ৯৮ পৃষ্ঠায় সংগৃহীত গান হিসেবে সংযোজন করা হয়েছে ‘লিচুর বাগানে’ গানটি। কথায় কিছুটা ভিন্নতাও আছে। কোনো গীতিকারের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

উপরোক্ত আলোচনায় এটি স্পষ্ট যে, ১৯৭৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত এসব বইপত্রের একটিতেও ছত্তার পাগলার নাম নেই। ছত্তার পাগলা মারা গেছেন ২০১৪ সালে। আর এসব প্রকাশনার বেশিরভাগই প্রকাশিত হয়েছে তিনি জীবিত থাকাবস্থায়। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, এসব গ্রন্থ রচয়িতার একজনও কি তাঁর নাম জানতে পাননি? আরও একটি প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে, এতদিন পর্যন্ত ওই গবেষকেরা কোথায় ছিলেন? দন্ত চিকিৎসকের হাতে লেখা একটি খাতাই কি গানটির গীতিকারের নাম প্রমাণের জন্য যথেষ্ট?

লোকসংস্কৃতি গবেষকরা মনে করেন, ঘাটুগানের উৎপত্তি ষোড়শ শতকে। শ্রীহট্টের আজমিরিগঞ্জের একজন বৈষ্ণবাচার্য এই গানের প্রবর্তক। বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ ছাড়াও বৃহত্তর হাওরাঞ্চলে এই গানের ব্যাপক প্রচলন ছিল। তখনকার সময়ে খুব কম মানুষই লেখাপড়া জানতেন। এ কারণে এসব গানের কোনো লিখিত রূপ ছিল না। আজকের দিনে ওই গানগুলোর রচয়িতা-বা গীতিকারের নাম খোঁজা নিরর্থক।

তবে ‘লিচুর বাগানে’ গানটির কথা ও সুর যে নেত্রকোনা তথা পূর্বময়মনসিংহ অঞ্চলের, এ নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। আবার এটিও সত্য যে, ছত্তার পাগলাও এ গানটি গাইতেন। কিন্তু তিনি তাঁর মতো করে গাইতেন। তাঁর কণ্ঠে গানটি শুনতে আগ্রহও দেখাতেন শ্রোতারা। নিজের মতো করে গানটির কথা ও সুর কিছুটা পাল্টে নিয়েছিলেন তিনি, যার প্রমাণ পাই দন্ত চিকিৎসকের হাতে লেখা ওই কথিত পাণ্ডুলিপিটিতেও। তাই আমরা সর্বোচ্চ এ কথাটি বলতে পারি যে, এটি আরও অনেক ভার্সনের মতো ছত্তার পাগলার একটি ভার্সন। কিন্তু তাই বলে গানটির গীতিকার হিসেবে এককভাবে ছত্তার পাগলার নাম প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা অবান্তর। কেননা, এটি আরও অনেক আগে থেকে প্রচলিত একটি ঘাটুগান। ছত্তার পাগলার ভার্সনটির মতো আরও একাধিক ভার্সন প্রচলিত আছে এই নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ অঞ্চলেই, যা আগে দেয়া বিভিন্ন রেফারেন্সে প্রমাণিত। তাই যদি আমরা ছত্তার পাগলাকে গানটির একক গীতিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করি, তাহলে অন্যদের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হবে। লোকগানের চিরায়ত বৈশিষ্ট্যকেই অস্বীকার করা হবে। একটি ভুলকে জোর করে প্রতিষ্ঠা দিয়ে আমাদের কী লাভ?

বরং এটি আমাদের নেত্রকোনা তথা পূর্ব-ময়মনসিংহের লোকগান, তা নিয়েই গর্ব করি। বড়জোর এটি বলি যে, ছত্তার পাগলা এই জনপ্রিয় লোকগানটির একজন ধারক-বাহক ছিলেন। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা কি খুব জরুরি?

 

সঞ্জয় সরকার-সাংবাদিক, ছড়াকার ও লোকসংস্কৃতি অন্বেষক। জন্ম নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার বলরামপুর গ্রামে। ১৯৯৫ সালে ‘দৈনিক বাংলার দর্পণ’ পত্রিকায় সাংবাদিকতার শুরু। পরবর্তীতে কাজ করেছেন ‘দৈনিক সংবাদ’, ‘সাপ্তাহিক ২০০০’, দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে। ২০০৪ সাল থেকে কর্মরত আছেন দৈনিক জনকণ্ঠে।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিয়মিত ছড়া ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ক লেখালেখি করেন। প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে: সোনামুখী সুই (২০১২), ফাগুন দিনের আগুন ছড়া (২০১৯), স্বপ্ন আমার আকাশ সমান (২০২১), নেত্রকোনার লোক-লোকান্তর (২০১০), নেত্রকোনার লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতি (১৪২৪ বঙ্গাব্দ), রবীন্দ্রসঙ্গীতাচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদার (২০২০), পরী ও তার গুড্ডু (২০২০) এবং বাউল সিরাজ উদ্দিনের জীবন ও গান (২০২২)। অনিয়মিতভাবে সম্পাদনা করেন ‘ছড়াছড়ি’ নামের একটি ছড়ার কাগজ। বাংলা একাডেমি ও এশিয়াটিক সোসাইটির কয়েকটি গবেষণা প্রকল্পে গবেষক হিসেবেও কাজ করেছেন।
জলসিঁড়ি পাঠাগার প্রবর্তিত ‘জলসিঁড়ি সম্মাননা-২০১৭’, ‘বাউলতরী’ প্রবর্তিত ‘বাউল রশিদ উদ্দিন পুরস্কার-২০১৭’, এআরএফবি গ্রন্থাগার প্রবর্তিত ‘সম্মাননা ২০২০’ ও ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব প্রবর্তিত ‘বর্ষসেরা সাংবাদিক পুরস্কার-২০২২’ অর্জন করেছেন।
Tags: চাতালপ্রবন্ধসঞ্জয় সরকার
Previous Post

কবিতা।। তিথি আফরোজ

Chatal

Chatal

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • About
  • Advertise
  • Privacy & Policy
  • Contact
বাংলামটর, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
ই-মেইল: [email protected]

© 2021 Chatalbd - Design & Developed By Developer Rejwan.

No Result
View All Result
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ

© 2021 Chatalbd - Design & Developed By Developer Rejwan.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In