শ্রাবণ সন্ধ্যা জুড়ে আতরের ঘ্রাণ
বৃষ্টি ফুরালে এক শ্রাবণ সন্ধ্যায় আকাশের দিকে চোখ তুলে দেখি
আবির ছড়িয়ে রংয়ের খেলা খেলছে গোধূলি বিষন্ন আলো,
এই আলোর মধ্যে দেখি মৃত্যুর আহ্বান।
তখন পৃথিবীর জন্য অদ্ভুত এক মায়া অনুভব করি
কিছুতে পৃথিবীর পক্ষ থেকে সরিয়ে
নিজেকে দাঁড় করাতে পারি না মৃত্যুর দিকে
অচেনা এক বাতাস এসে এই চিরসত্যকে
উপেক্ষা করার মিথ্যা আশ্বাস দেয় বারবার।
চির পরিচিত শহরের ফুটপাত ধরে হেঁটে যেতে যেতে
পৃথিবীর জন্য অদ্ভুত এক মায়া অনুভব করি,
শৈশবের কথা খুব বেশি মনে পড়ে
মনে পড়ে শিউলি ফুলের মতো সাদা
কোমল নরম ধোঁয়া ওঠা ভাত আর মায়ের মুখ।
মায়ের মুখ আর সাদা ভাতের চেয়ে পৃথিবীতে আর কিছু প্রিয় নেই।
মা কথা বললে অদ্ভুত এক সুর ধ্বনিত হয়,
মায়ের শরীর জুড়ে মিষ্টি আতরের ঘ্রাণ
শৈশবে মিষ্টি আতরের লোভে মা’র চারপাশে ঘুরঘুর করতাম সারাবেলা
শ্রাবণ সন্ধ্যায় হঠাৎ সেই মিষ্টি আতরের জন্য মন আনচান করে ওঠে
তখন শহরের খুব চেনা ফুটপাত অচেনা হয়ে যায়
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি অস্ত আকাশে আবির খেলা
গোধূলি বিষন্ন আলো, আলোর মধ্যে মৃত্যুর আহ্বান
তখন পৃথিবীর জন্য অদ্ভুত এক মায়া অনুভব করি।
তারপর মৃত্যুর পক্ষ থেকে সরে দাঁড়িয়ে যায়
মায়ের মুখ আর শিউলি ফুলের মতো ভাতের দিকে,
আর এক সুর আমার ঠোঁটে গুনগুন করে আর আমি আতরের গন্ধ খুঁজি।
মায়ের মুখ আর সাদা ভাতের চেয়ে পৃথিবীতে আর কিছু প্রিয় নেই।
বৃষ্টিহীন শ্রাবণ আকাশ
বৃষ্টিহীন শ্রাবণ আকাশ
সোনা রং রোদ ঝরে পড়ছে শহর জুড়ে
বড় রাস্তায় দাঁড়ালে বহু দূর পর্যন্ত দেখা যায় ফাঁকা।
তোমাকে দেখা গেল হুট খোলা রিক্সায় কোথাও যেন যাচ্ছো,
তোমার হাতে এক গুচ্ছ ফুল
রোদ চশমায় ঢাকা তোমার চোখ
বাতাসে উড়ছিল তোমার চুল
মনে হচ্ছিল মেঘের মতো ভেসে ভেসে কোথাও তুমি চলে যাচ্ছো
তোমার খোলা চুলে লুটোপুটি খাচ্ছিলো সোনা রং রোদ।
রোদ কি তোমার আগেকার দিনের প্রেমিক ছিলো?
হুট খোলা রিক্সায় শহরের বড় রাস্তায়
দিনের আলোয় তার সাথে এমন তুমুল মাখামাখি, কেনো?
নাকি আজ রোদের জন্মদিন ছিলো?
তুমি তার জন্যে সব ব্যস্ততা ফেলে ওমন ত্রস্ত হয়ে ছুটছিলে!
মনে হচ্ছিল মেঘের মতো ভেসে ভেসে কোথাও তুমি চলে যাচ্ছো
শহর জুড়ে ঝরে পড়ছে সোনা রং রোদ
বড় রাস্তা ফাঁকা, যত দূর চোখ যায় খাঁ খাঁ করছে
রাস্তায় একা আমি দাঁড়িয়ে আছি
আমার হৃদয় জুড়ে কেবল হাহাকার
আমারও একটা পাহাড় ছিল
আমারও একটা পাহাড় ছিল সেই কথা কোথাও বলা হলো না।
আমারও একটা পাহাড় ছিল
পাহাড় ঘিরে স্বপ্ন ছিল, অভিমান ছিল
বর্ষা ছিল তুমুল, ঝর্ণা ছিল ছন্দ হারা
রামধনু ছিল ঘোমটার মতো,
শেষরাতে মেঘ ঝুকে পড়ে
সেই পাহাড়টার কপালে চুমু খেত,
পূর্ণিমাতে ভেসে যেত দিকদিগন্ত
আকাশ ছিল নীল
পাহাড়ের পায়ের কাছে
সবুজ ছিল নতশির।
আমারও একটা পাহাড় ছিল সেই কথা কোথাও বলা হলো না।
সেই পাহাড়টা এখন প্রতিদিন অন্ধকারে ধ্বসে যায়
ধ্বসে যাবার শব্দটা কেবল আমি টের পাই
করুণ বেদনাকে গোপন করে সেই পাহাড়ের ঝর্ণাটা ঝরে যায় অবিরত
সেই করুণ সুর বারে বারে আমাকে ছুঁয়ে যায়
অথচ কোথাও বলা হয় না আমার একটা পাহাড় ছিলো
কোথাও লেখা হয় না পাহাড়টার ঝর্ণা ছিল
করুণ বেদনাকে গোপন করে দিন রাত গড়িয়ে পড়ত।