একুশের প্রথম প্রহরে
পরাজিত নোঙরের নামে নেমে যাই হাওয়াডাঙার পথে౼এই দ্যাখো
আলোহীন পায়রাডানা কিংবা শান্তির গান তোমাদের ভোরে নেচে যায় একা
দোয়েল কিংবা শালিক গৌরবে যে এঁকে যাবে লাল লাল ঘুড়ির গল্প;
আরক্তিম কণ্ঠোচ্চারিত
অ আ ক খ…
তারো ঢের বেশি শোক লেপ্টে থাকে পতাকা জুড়ে লাল-সবুজের নামে
সেই কবে ভালোবাসার নামে তোমার অতলে দিয়েছি আজন্মিক সাঁতার
ভৈরবীর আলোকোজ্জ্বল ভোরের গান লিখে যেতে যেতে কতোবার ডুবে গেছি ভুল জলে
আয়োজনের তীরোধানিক লীলা শেষে নেমেছি বর্ণমালার প্রেমে একাকি নিশ্চুপ!
মহাকাল চিনে গেছে সবটুকু তার
তুমি সতত অনশ্বর জীবনবার্তা লিখে যাও প্রশ্বাসে প্রশ্বাসে
আমার উঠোনে একুশের ভোরে হও উচ্চারিত চিৎকার
চোখের কার্ণিশে লেগে থাকা ঊনিশ শ’ বায়ান্নের কৃষ্ণচূড়া; বরকত,সালাম…
রক্তে ভেজা চিঠির সুবাস লেগে থাকে মানচিত্রে,জলে,হাওয়ায়
এই সব সুর জেগে থাকে নির্বিবাদ সংসারে
পোস্টারে ফেস্টুনে লেগে থাকা নাগরিক বিজ্ঞাপনে আধুনিকতার পোশাকি সংস্কৃতি
তবু সমুজ্জ্বল তুমি চেতনার আলপনায়,কলম-কাগজের প্রগাঢ় দুঃসময়ে
পরাজিত নোঙরের নামে নেমে যাই হাওয়াডাঙার পথে
দ্যাখো এঁকে যাই শহিদ মিনার করুণ সুন্দর পাঁজরের ক্যানভাসে।
জগতি
অনন্ত এ এক যাপিত রূপকথা౼দূর অতীতের মায়ায়
ধাবমান প্রহরের অভিনয় জেনেছে সময়,
করুণরঙা দিন;সেও গিয়েছে চুপচাপ বিপন্ন বিস্ময়ে!
অমলিন রোদ ফিকে হয়ে আসে
আসে গর্বিত আলো-আঁধারের মায়া ষড়ৈশ্বর্য রূপে
পথের সবুজে সবুজে লেপ্টে আছে কালো তীরন্দাজ
অতীত নিঙড়ে দিয়েছে আহ্বান সবটুকু\
মায়াময় প্রাণ তবু ভুলেছে কী?
সবুজাভ এই সুর ভালোবাসা হয় কখনো কখনো…
কোথাও জেগে থাকে প্রাণান্ত চিহ্ন -প্রাচীণ!
সে ঘুম নিত্য আকাশ সরোবরে স্পর্শ এঁকেছে কবেই
ধূসর দূরত্ব তার অক্ষত হৃদয়ে জাগে
সেখানে মুছেছে আয়োজন সকরুণ।
রাঙা ভোর ক্ষয়েছে ঐ শোকে…
তবুও তো কথা থেকে যায়, দূরত্ব বাড়ায় পথ,বোধের অঙ্কুর।
প্রামাণ্য
মিথ্যে সুরের জলসায় থাকুক জীবন
ও সবে পিপাসার্ত নই
মাকড়সার জালের মত চারদিক ছড়ানো দুঃখ জাপ্টে ধরেছে
তারাই বা কম কিসে?
মন কিংবা মনস্তাত্তিকতা থেকে দূরে
জীবনাচারে অপরূপ করুণ ¯স্পর্শ ঝুলে থাকে,
মগজ আর কলমের জৌলুসেই যার মৃত্যু ঘটেছে।
প্রমাণ হলো কেউ কবিতা বোঝে না।
যতটুকু চেনা এই প্রেম, দুঃসময়ের ব্যর্থ আহাজারি
ততটুকু বোঝেনা প্রেমিকা সময় সুন্দর।
ঢের আগেই যে পালিয়েছে নিউরনের প্রতিধ্বনি থেকে
সত্যিই শুনেছিলাম,সে কোনোদিন পড়েনি
রাতভর টসটসে আঙুরের পাশে জেগে থাকা ছুড়ির গল্প।
প্রমাণিত এই যে, কেউ দুঃখ খোঁজে না।
যতটা খোঁজে উপহাস আর নিরস যৌবনের স্মৃতিগদ্য,
হাস্যকর হলেও বোধগম্য তার পাঠ-পরিকল্পনা।
সস্তায় পাওয়া সেইসব অক্ষরগুলোকে
কাব্যভাষা বলে স্রোতের মতো ভালোবেসেছে
যদিও কোনদিন খুঁজে দেখেনি
কালশিটে পরা চোখের রাত জাগা গল্প।
প্রমাণিত, কেউ শিল্প বোঝে না।
এমরান হাসান-জন্ম: ১৩ নভেম্বর ১৯৮৭, টাঙ্গাইল। কবি,প্রাবন্ধিক।গবেষণা করছেন লালন পদাবলি ও দর্শন নিয়ে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: হাওয়াঘরের মৃত্যুমুদ্রা ।