Friday, May 9, 2025
  • Login
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ
No Result
View All Result
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ
No Result
View All Result
No Result
View All Result
Home গল্প

নিষিক্ত গল্প।। পূরবী সম্মানিত

Chatal by Chatal
March 22, 2022
in গল্প
A A
1
নিষিক্ত গল্প।। পূরবী সম্মানিত

পারভেজের ফোন কলে ঘুম ভাঙল তনুশ্রীর । দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালো, সাতটা দশ । মনে শঙ্কা নিয়ে কলটা রিসিভ করলো।

গুড মর্নিং,কেমন আছিস?

ভেরি গুড মর্নিং। কিরে,এত সকালে কী ব্যাপার? আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে তনুশ্রী বলল ।

তোর ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম?

নারে, এমনিতেই উঠতাম এখন, বল।

বাসায় চলে আয়,এক সঙ্গে নাস্তা করবো।সারপ্রাইজ আছে।

বলনা, প্লিজ।

বলে দিলে কী আর সারপ্রাইজ থাকে, দোস্! তোর অফিসের তাড়া  নেইতো?তুইতো আবার আলট্রা বিজি লেডি।

কী যে বলিস,তোদের মতো আমরা? এখনি ছুটতে হবে। চব্বিশ ঘন্টার চাকরি,রাতে ঘুমালেও চাকরি করি।

হা হা হা-দুজনেই হাসে।

শুনতে পারলে ভলো হতো। গুরুত্ব বুঝে সন্ধ্যায় মেয়েকে নিয়ে যাওয়া যেতো।

পারভেজটা যে কী! এখনো যেন ছোটটিই আছে।  সরকারি চাকরি,বউ বাচ্চা নিয়ে সংসার।তবু ছেলেমি যায়না। ছেলেবেলার বন্ধুদের একজন পারভেজ, একই পাড়ায় বড় হওয়া,একই স্কুল,কলেজ,আবার আলাদা ডিপার্টমেন্ট হলেও দুজনের একই ভার্সিটি।পারভেজ দু’বছর হল বদলি হয়ে এখানে এসেছে। যদিও এখানে তনুশ্রীর শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়রা আছেন,তবু পারভেজ এখানে আসার পর বাবার বাড়ির সম্পর্কের এক জনের মতো হয়েই আছে। বন্ধুত্বের গাঢ়তা আরো বেড়েছে।তাই পারভেজের আবদারের গুরুত্বটা তার কাছে অনেক বেশি।

শর্মিষ্ঠাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে মা-মেয়ে রেডি হয়ে নিল।মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে পারভেজের বাসায় আসলো তনুশ্রী। গেট খোলা ছিল,ভেতরে ঢুকতেই দামি গাড়ি চোখে পড়ল। খালাম্মা দরজা খুললেন।

ভেতরে আয়। কিরে,কেমন আছিস? ক’দিন আসিস না যে!

 খালাম্মা সেদিন না এসে গেলাম! আপনি কেমন আছেন?

ভুলে যাই সবকিছ,কিছু মনে থাকেনা রে। আছি আর কি!তোরা আসলে তো ভালো লাগে।

সময়ই তো পাইনা খালাম্মা,পারভেজ কোথায়?

তোদের বন্ধু ,কি যেন নাম! রাতে এসেছে।গেস্ট রুমে শুয়েছে। পারভেজ ওর সাথেই আছে। ডাকবো?

না, আমিই যাচ্ছি খালাম্মা।

বারান্দা পেড়িয়ে গেস্টরুম। জাহিদকে দেখে তনুশ্রী স্তব্ধ হয়ে যায়।

জাহিদ!

কেমন আছিস?তোকে দেখতে এলাম।

তনুশ্রী টলতে থাকে,যেন পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। শর্মিষ্ঠার ফেভারিট গেমের সেই হীরক চোরটার মতো সে ছুটছে-প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে-লাফাচ্ছে। বাজপাখিটা কী তাকে ধরে ফেলল?

কিরে,আমাকে দেখে অবাক হয়েছিস?নাকি তুই অসুস্থ ফিল করছিস? জানি এক্সপেক্ট করিসনি, তবু চলে এলাম।

নো,নো,আই’ম অল রাইট।তুই কেমন আছিস? তনুশ্রী নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলল।

ভালো আছি,আর তোকে তো দেখতে পাচ্ছি,আগের মতোই হেব্বি আর ফিট আছিস। বডিকে  ধরে রেখেছিস। আমাকে দেখ কেমন মোটা হয়ে গেছি।

কথা বলার ক্ষেত্রে, জাহিদ সেই আগের মতোই আছে। নোংরামি মাখানো কথা বলার ঢংটা পাল্টায়নি।

কিরে,কেমন সারপ্রাইজ দিলাম?তোরা কথা বল,আমি আসছি। বলে পারভেজ অন্য রুমে চলে গেল।

সত্যি সারপ্রাইজই বটে! এখানে আসার আগে, মুহুর্তের জন্য ভাবেনি এমন সারপ্রাইজ তার জন্য অপেক্ষা করছে।সারপ্রাইজ আবার ঝড়ে রূপ নেবে নাতো?জীবনের ঝড় ঝাপটাগুলি এভাবেই উড়ে আসে কিনা! যেগুলি জীবনে বাঁক এনে দেয়।জীবনকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়।তবে পরিস্থিতি সামলে চলতে সে এখন অভ্যস্ত।নিজেকে দ্রুত একটা ফরমাল মুডে নিয়ে আসে। জাহিদের তাগিদেই থেমে থেমে কিছু কথা হয়,বন্ধুদের কথা,পারিবারিক কথা, কয়েকজনের ফোন নম্বর, ফেসবুক আইডি নেয়া হয়।

চল, নাস্তা রেডি। পারভেজ রুমে  ঢুকলো।

নারে, আমি নাস্তা করে বেরিয়েছি। শেষে সবার কথায় তনুশ্রীকেও বসতে হল।

তোমরা যে কিছুই খাচ্ছনা,আমারে লজ্জা পাইতাছ?

না না খালাম্মা,সব ঠিক আছে।জাহিদ বলল।

কী যেন নাম তোমার?

খালাম্মা,আমি জাহিদ।

ও আচ্ছা,দেখ আমি ভুলেই গেছি। রাতে তো বলছিলা। তোমার আব্বা-আম্মা আছেন?উনারা কেমন আছেন?

জী,আছেন। বয়স হলে যা হয়,প্রায়ই অসুস্থ থাকেন।

খালাম্মা সাধারণ জিজ্ঞাসাবাদ সেরে অন্য রুমে চলে গেলেন। পারভেজের ওয়াইফ নার্গিস খাবার পরিবেশন করল ।

 খেতে খেতে পারভেজ, জাহিদের সক্রিয় অংশগ্রহনে আড্ডা চলল। তনুশ্রী পারভেজের কাছেই শুনেছিল,ওদের বাচ্চাটা মারা যাবার পর মুন্নির সাথে জাহিদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। অবাক ব্যাপার,আজ মুন্নির প্রসঙ্গই এলো না!মুন্নি যে তাদের জীবনের কোন  একটা অংশে নিজের অস্তিত্ব বিস্তার করে জীবনের ভাল-মন্দে জড়িয়ে ছিল,এটা কী তারা ভুলে গেল?নাকি ইচ্ছে করেই কী তারা এসব এড়িয়ে গেছে?মুন্নি আর তাদের জীবনের আবশ্যকীয় কেউ নয় বলে? তাইতো, এখন আর এসব ভেবেই কী হবে?সময় আর সময়ের ঘটনা ঠিকঠাক হয়ে ফিরবেনা নিশ্চিত। মানুষ পিছন ফিরে অতীতকে দেখে আবেগকে প্রশ্রয় দিয়ে,সময়কে সমৃদ্ধ করতে।অতীত যখন খামচে ধরে এমন অতীতকে কে ঘাটাতে চায়?

ঘড়ি দেখে চমকে ওঠে তনুশ্রী।নয়টা পঁয়ত্রিশ! অলরেডি পঁয়ত্রিশ মিনিট লেট।

কিরে, ঘড়ি দেখছিস যে। ছুটি নিয়ে নে আজ-বন্ধু আসা উপলক্ষ্যে। সারাদিন আড্ডা হোক,কি বলিস? জাহিদ বলল।

নারে,অফিসে প্রচুর কাজ ,যেতে হবে। উঠে দাঁড়ালো তনুশ্রী। সবার কাছে বিদায় নিয়ে বাইরে আসলো।জাহিদ এগিয়ে দিতে বেরোল।

আজ সারাটা দিন আমার কাছে থাকনা,তনু। আগের মতো,অন্তত একটু সময়।প্লিজ, আমাকে ক্ষমা করতে পারিসনা ?জানি, ভুল হয়ে গেছে। প্লিজ ক্ষমা কর,চল চীনামাটির পাহাড় থেকে ঘুরে আসি।জাহিদের আকুতিমাখা অনুরোধ।

নারে, বললাম না অফিসে ব্যস্ততা আছে।তাছাড়া এমন আবেগকে প্রশ্রয় দেয়ার কোন মানে হয়না। ভালো থাকিস।বলে নিজের স্কুটিতে স্টার্ট দেয়।

পাঁচ মিনিটেই অফিসে পৌছায়। নিজের রুমে পৌছার আগে ডেস্কের পত্রিকাগুলিতে চোখ রাখে।বেশ ক’টা পত্রিকার শিরোনাম কাছাকাছি।

★ মন্ত্রণালয়ে রদবদলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

★  দিল্লিকে মমতার হুশিয়ারি-আগুন নিয়ে খেলবেন না।

★ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে রেজুলেশন হচ্ছে।

★  প্রতিদিনই গুম নিখোঁজের তালিকা বড় হচ্ছে।

★  কথিত প্রেমিকও তার বন্ধুরা মিলে দশম  শ্রেণির ছাত্রিকে ধর্ষণ।

 ধর্ষিতা মেয়েটির ছবি দেয়া হয়েছে।মেয়েটির ঠোঁটের লিপস্টিক দেখে মনে হয় মেয়েটি লিপস্টিকের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে।মেয়েটিকে এভাবে উপস্থাপন করার মানেটা বোঝা গেল না।তনুশীর খারাপ লাগলো।কেউ ধর্ষণ করে আর কেউ ধর্ষনের মানসিকতা ধারণ করে,এ সমাজে কবে যে নারীরা বেঁচে থাকার  একটা সুস্থ পরিবেশ পাবে!নিজের কামরায় ঢুকে টুকটাক গুছালো।নোটবুক দেখে দিনের কর্ম পরিকল্পনা করলো।

★  প্যানেল আইনজীবিদের সাথে আলোচনা

★  ধর্ষনের পর আর খুন-মামলাটির আসামী ধরতে তালবাহানা হচ্ছে।পুলিস সুপারের সাথে দেখা করে বিষয়টা নিয়ে কথা বলা।

★  বেলা বারোটায় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের সাথে মিটিং।

★  নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের দ্বিমাসিক সভা আগামীকাল। সুতরাংপ্রতিবেদন শেষ করতে হবে আজকেই।ইনকমপ্লিট প্রতিবেদনটায় চোখ বুলায়-

★ খুন নেই।

★ ধর্ষণ ১৭টি।মামলা হয়েছে ৯টি ,হয় নাই ৬টি,মিমাংসা হয়েছে ২টি।এসিড নিক্ষেপ নাই।

★ পারিবারিক বিরোধ১৭টি,মামালা হয়েছে ৫টি মামলা হয় নাই ৮টি, মিমাংসা হয়েছে ৪টি।

নাহ্, আর পারছেনা সে।জাহিদ, মুন্নি, ভার্সিটির হল,ওখানকার দিনগুলি,মাথায় যেন ফিল্ম চলছে।উফ্, জোর করে নিজের কাজে মনোযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করছে।তবু বারবার হারাচ্ছে।

একই ডিপার্টমেন্টে তিনজন। তনুশ্রী-মুন্নি-জাহিদ ।তিন বন্ধুতে ত্রিভূজ প্রেম লোকে বলতো। মুন্নি কবিতা লিখতো,কবিতা পরিষদ করতো, আর জাহিদকে ভালবাসতো। জাহিদের তখন তনুশ্রীকে প্রয়োজন ছিল, কবিতা নয়। তাই মুন্নি বিরহের কবিতা লিখতো।জাহিদ তনুশ্রীর প্রেম,ওদের ঘনিষ্ঠতা  দেখে মুন্নি কাঁদতো।

মাস্টার্স পরীক্ষা শেষে তনুশ্রীসহ অনেকেই হলে থেকে গিয়েছিল বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য।মুন্নি হল,হাল,কবিতা, কবিতা পরিষদ সব ছেড়ে দেওয়ানগঞ্জ,নিজেদের বাড়িতে চলে গিয়েছিল।হয়তো সে আরো বেশী করে বিরহের কবিতা লিখছিল।‘বাবা আমার জন্য পাত্র খুঁজছে,খুব দ্রুতই আমি বিয়ে করছি,তোরা ভাল থাকিস্’মুন্নি ওখান থেকে জাহিদ-তনুশ্রীকে চিঠিতে জানিয়েছিল।

বড়িতে দুর্গা পূজা,কোনো অজুহাতেই আর পুজার ছুটিতে হলে থাকা গেল  না।মায়ের আদেশে বাড়িতে আসতে হল। ছুটি শেষ হওয়ার আগেই পারভেজ, তনুশ্রীকে জাহিদ-মুন্নির বিয়ের  খবর জানিয়েছিল।জাহিদ, বিয়ের আসর থেকে মুন্নিকে উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছে।কি জানি, হয়তো জাহিদের মুন্নিকেও প্রয়োজন ছিল। কোনো কোনো ছেলেদের অনেক মেয়েকে প্রয়োজন, শততম ধর্ষণও তো পালিত হয় এ সমাজেই!তনুশ্রী আরো শুনেছিল, জাহিদ নাকি বন্ধুদের বলে বেড়াচ্ছে- তনুশ্রীর মতো মেয়েদের সাথে প্রেম করা যায়, বিয়ে নয়।

তনুশ্রী-জাহিদ- মুন্নির গল্পটা এ পর্যন্ত সাদামাটা প্রেমের কমন গল্প,কোন নতুনত্ব নেই। তবে গল্পটা ভেতরে ভেতরে নিষিক্ত হয়েছিল। অতঃপর গল্পের ভ্রুণ হল, অঙ্গের কুঁড়ি হল,অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হলো, গল্প ভূমিষ্ট হল। সময়কে অস্বীকার করে গল্প এগিয়ে চলল অথবা গল্পকে ফিরে তাকাতে হলো সভ্যতার আদিতে। তনুশ্রীর ভাবনার মাঝেই প্রোগ্রাম অর্গানাইজার শওকত রুমে ঢুকল।

দিদি,নারীর অর্থনৈতিক,সামাজিকও রাজতিক ক্ষমতায়ন-কর্মশালাটার বিষয়ে আবার বসতে হবে। তেইশ-চব্বিশ তারিখেই তো কর্মশালা।

ঠিক আছে,বসবো না হয়।

পাঁচটা বাজে , ক্লান্তি লাগছে নিজের ভেতরে-বাইরে। মেয়েটাকে ফোন করা হয়নি।পিসির ওখানে ঠিকমতো পৌছেছে কিনা! চারদিকে যা হচ্ছে।মেয়ে শর্মিষ্ঠা নিজের স্কুল-কোচিং শেষ করে কাছেই পিসির ওখানে চলে যায়। তনুশ্রী কিংবা সমীর অফিস শেষে, বাসায় ফেরার সময় নিয়ে ফেরে।

বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এ বছর বৃষ্টির সময় অসম থাকছেনা। অনাকাঙ্কিত, অপ্রয়োজনীয় ঝুমঝাম বৃষ্টি হচ্ছে-জলবায়ু পরিবতর্নের প্রভাব।অফিসের পুরোনো স্টাফ সারোয়ার এসে বলল-দিদি যাবেন না? বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই।

অপেক্ষা করে দেখি, যদি বৃষ্টি থামে। বৃষ্টি থামলে স্কুটি রেখে রিক্সা নিয়ে যেতে হবে।রিক্সা না পাওয়ার ঝামেলা। রিক্সা আনার জন্য সারোয়ারেরকে কিংবা দারোয়ানকে বলতে হবে। নিজের অধস্তনদের অযথাই হয়রানি করতে চায়না সে।

জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় তনুশ্রী। তখনও ঝড়ো বৃষ্টি ছিল- টানা চার পাঁচ দিন।  জাহিদ হলে থাকতোনা। শহরে বাসা ভাড়া করে থাকতো। বন্ধুদের সবার যাতায়াত ছিল ওখানে। জয়েন্টলি একটা নোট করবে বলে তনুশ্রী জাহিদের ওখানে গিয়েছিল সেদিন।বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ,আবহাওয়ার খবর জানা ছিল না। প্রথমে হাল্কা বৃষ্টি,ক্রমশ ঝড়ো । দরজা জানালা খোলা যাচ্ছিল না ।বৃষ্টির ঝাপটা সব কিছু ভিজিয়ে  দিচ্ছিল । তনুশ্রী হলে ফিরতে পারেনি।জাহিদের সেল ফোনটা থেকে হলের ল্যান্ডফোনে  কল করে রুমমেট ঝুমুরকে কোনভাবে বুঝাতে পেরেছিল-আমি আটকে গেছি জাহিদের ওখানে।

টানা দু’দিন দু’রাত ফিরতে পারেনি সে। ফেরার জোর চেষ্টাও কি করেছিল তনুশ্রী?এ সময় ও সম্পর্কটার কোন নাম নেই সমাজে। কিন্তু সে সময় ও সম্পর্কটাকে তনুশ্রী বহন করে চলছে। সে কী পারতো একে প্রতিষ্ঠিত করার যুদ্ধটা চালিয়ে যেতে?কিইবা করার ছিল তার?শ্রোতের বিপরিতে দাঁড়িয়ে লড়তে পারে ক’জন ?

অফিস থেকে বেরোবার সময় তানিয়া দেখা করে গেল।

দিদি, প্যাপারস আর আমন্ত্রনপত্র গুলি নিয়ে যাচ্ছি।আমার কাল আসতে একটু দেরি হবে। ছেলেটার স্কুলে যেতে হবে।ওদের স্কুলের হেডমাস্টার টপটেনে আছে যেসব বাচ্চারা, তাদের মায়েদের ডেকেছেন। যাচ্ছি যখন ওদিকের চিঠিগুলি দিয়ে আসবো।

ঠিক আছে এসো। এগারোটায় ফরেনাররা স্টেশনে পৌছাবে। ট্রেনের রিজার্ভ কামরায় আসবে।তুমি ওখানেই চলে যেও।

ওকে, দিদি বা-ই।

বা-ই।

 

সন্ধ্যা নেমেছে। অফিসের সবাই একে এক বৃষ্টি মাথায় নিয়েই চলে গেছে।আয়া, পিয়ন আর দারোয়ান আছে।প্রায়ই এমন হয়। নিজের রুমে একা একা একা কাজ করে সন্ধ্যার পর বাসায় ফেরা।

জাহিদ-মুন্নির বিয়ের মাসখানেকের মধ্য, পারিবারিক সিদ্ধান্তে তনুশ্রীরও বিয়ে হয়।বাবার বয়স হয়েছে,এদিকে নিজেরও বিপর্যস্থ মানসিক অবস্থা । সে আর  আপত্তি করেনি। পুজোর ছুটিতে আসার পর থেকে আর পিরিয়ড হয়নি। বিয়ের মাস দেড়েক পর লক্ষণ দেখে সমীর প্রেগনেন্সি টেস্ট করায়। পজিটিভ হওয়ায় পুরো পরিবার আনন্দে ভাসে। তনুশ্রীরও শ্রোতে ভাসা ছাড়া উপায় থাকে না। শর্মিষ্ঠা কোলে আসে আটমাসে।ডাক্তার মত দেয়-‘আটাশে বাচ্চাও সুস্থ সবল হতে পারে।’তনুশ্রীও নির্ভার নিঃশ্বাস ছাড়ে।তারপর শুধু গতানুগতিক জীবনে মানিয়ে নেয়া।

আজ এতদিন পর জাহিদের উপস্থিতি,মেয়ের ভবিষ্যত চিন্তায় তাকে কী বিচলিত করে তুলছে? আজকাল বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে, কারো বায়োলজিক্যাল পিতা সনাক্ত করা তেমন কঠিন কিছু নয়। এজন্যই কী?

পারভেজ, জাহিদকে কিছু বলেছে? শর্মিষ্ঠা,কিংবা ওর চেহারার ব্যাপারে? পারভেজ একদিন রসিকতা করে বলেছিল-তোর মেয়েটা জাহিদের মতো হয়েছে রে। সে প্রশ্রয় দেয়নি,স্ট্রংলি প্রতিবাদ করেছিল। যত আপনেই হোক এসব ক্ষেত্রে কার কাছে দূর্বল হবার মানে অন্যের ভান্ডারে অশ্র রেখে আতঙ্কে থাকা।পৃথিবীর ইতিহাসে একটা দীর্ঘ সময় পুরুষরা তাদের সন্তানদের আইডেন্টিফাই করতে পারতোনা।ছিল যৌথ পিতৃস্নেহ,যৌথ অপত্য লালন।

জাহিদ আবার বিয়ে করছে। পাত্রী ঠিক হয়ে আছে,বিরাট বড়লোকের একমাত্র কন্যা। এই মেয়েটির সাথেও নাকি জানাশোনা বহুদিনের! জাহিদও পাল্টেছে ব্যবসায়িক সাফল্যে।গাড়ি বাড়ি,রাজনৈতিক ক্ষমতা। এই একটু ক্ষণে তনুশ্রীর কাছে নিজের প্রাচুর্যতার অহমিকা তুলে ধরার কি প্রানান্ত চেষ্টা ! মুন্নির মুখটা মনে পড়ছে,বেচারি মুন্নি!প্রেম কিংবা বিরহ,কোনো কবিতাই লিখতে পারছে না হয়তো। ভালই হল জাহিদের সাথে দেখা হয়ে,অস্বচ্ছ পর্দাটা সরে গেল। অতীত সম্পর্কে একটা মোহাচ্ছন্নতা কেটে গেল।

পারভেজ দুবার ফোন করেছিল। কিরে আসবি না? জাহিদ সন্ধ্যায় চলে যাবে। দেখা করবি না? জাহিদও ফোন করেছিল। ওরা চীনা মাটির পাহাড় দেখতে চলে গেছে। যাক না চীনামাটি অথবা চান্দের পাহাড়ে! আটকাচ্ছে কে?শুধু এখানে আসা কেন? মা মেয়েকে বিব্রত করতে? নাউ শি ইজ তনুশ্রী চৌধুরী,মাদার অব শর্মিষ্ঠা চৌধুরী। সমীর চৌধুরী আর শর্মিষ্ঠাকে নিয়ে ছোট্ট সুখের সংসার।এ ছোট জীবনে সে ভাল আছে। এখানে জাহিদের কোন অস্তিত্ব নেই,থাকবেনা কিছুতেই। না-না-না,তুই চলে যা জাহিদ,তনুশ্রীর ভেতরটা প্রায় আর্তনাদ করে ওঠে।

সমীর আজই ফিরছে,অফিসিয়াল ট্যুর ছিল চিটাগাংয়ে। মেয়েটা দেখতে দেখতে অনেক বড় হয়ে গেল। বাবার ন্যাওটা হয়েছে খুব। সমীর আর তার মেয়ে গলায় গলায় ভাব। মেয়েকে আনতে ননদের বাসায় যেতে হবে।এখনও ঝির ঝির বৃষ্টি পড়ছে।কি আর করা! এরকম বৃষ্টি সহজে থামে না। তনুশ্রী স্কুটিতে স্টার্ট দেয়।

 

পুরবী সম্মানিত-গল্পাকার, জন্ম নেত্রকোনার পূর্বধলায়। পেশায় কলেজ শিক্ষক। প্রকাশিত গল্প গ্রন্থ-আকালি বাড়ি যায় (২০১৮), অতপর একটি পোট্রেট (২০২২)
Tags: গল্পচাতালপুরবী সম্মানিত
Previous Post

চীন জাপানে যা দেখলাম।। কৃষ্ণ কান্ত বিশ্বাস।। চতুর্থ পর্ব।।

Next Post

কবিতা।। আসাদ আল আমিন

Chatal

Chatal

Next Post
কবিতা।। আসাদ আল আমিন

কবিতা।। আসাদ আল আমিন

Comments 1

  1. তওহিদ মাহমুদ হোসেন says:
    3 years ago

    গল্পটা বেশ ঝরঝরে। থামতে হয়নি। খুব সাধারণ কাহিনী বলে গিয়েছেন চমৎকারভাবে। জাহিদ আর তনুশ্রী এবং জাহিদ-মুন্নীর সম্পর্কটা আরেকটু বিস্তৃত হলে ভালো হতো। ঠিক বোঝা গেল না, জাহিদ কেন তনুশ্রীকে বেছে নিল, কেন মুন্নীকে অবহেলা করলো, আবার কেনই বা হুট করে পুরো উল্টোভাবে বিয়েটা করলো। এই তিনজন যে ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সেটা আরেকটু ভালোভাবে চিত্রায়িত করা যেত। তনুশ্রীর জীবন, সংসারটাও যেন খুব অল্পভাবে এলো। মোদ্দা কথা, চরিত্রগুলো আরও পরিণত হতে পারতো।

    জাহিদের রুমে দুদিন কাটানোর ন’মাস পর যদি শর্মীষ্ঠার জন্ম হয় আর সেটা যদি হয় সমীরের সাথে বিয়ের অষ্টম মাসে, তার মানে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে জাহিদ-তনুশ্রীর গাঢ় সম্পর্ক ভেঙ্গে আবার বিয়েও হয়ে গিয়েছে স্বাভাবিকভাবে। এটা যৌক্তিক হলো কি?

    নামকরণ পার্ফেক্ট।

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • About
  • Advertise
  • Privacy & Policy
  • Contact
বাংলামটর, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
ই-মেইল: [email protected]

© 2021 Chatalbd - Design & Developed By Developer Rejwan.

No Result
View All Result
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ

© 2021 Chatalbd - Design & Developed By Developer Rejwan.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In