Friday, May 9, 2025
  • Login
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ
No Result
View All Result
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ
No Result
View All Result
No Result
View All Result
Home প্রবন্ধ

প্রবন্ধ।। মুজিবের দৃষ্টিতে মুজিবীয় দর্শন।। কৃষ্ণ কান্ত বিশ্বাস

Chatal by Chatal
August 15, 2023
in প্রবন্ধ
A A
0
প্রবন্ধ।। মুজিবের দৃষ্টিতে মুজিবীয় দর্শন।। কৃষ্ণ কান্ত বিশ্বাস

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সারা জীবনের চিন্তা-চেতনা, কর্ম, ভালোলাগা, ভালোবাসা সব কিছুই ছিলো বাঙালি কেন্দ্রিক। তিনি ছোট বেলা থেকেই মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও মমত্ব দেখিয়েছেন এবং মানুষকে ভালোবেসে মানুষের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য কাজ করেছেন সারা জীবন। সর্বোপরি বাঙ্গালি জাতিকে দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত করার জন্য বরণ করেছেন জেল, জুলুম, অত্যাচার ও নিপীড়ন। তাঁর আজীবন সংগ্রামের সার্থক রুপায়ন একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ছোট বেলা থেকে মাঝ বয়স পর্যন্ত ঘটনাবলি লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁর আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থ- অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে। সে গ্রন্থেই ফুটে উঠেছে তাঁর বিশ্বাস, আদর্শ, কর্ম ও দর্শনের কথা।  সেখান থেকেই এ প্রবন্ধে  তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মুজিবের দৃষ্টিতে মুজিবীয় দর্শনের কথা।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থের ভূমিকায় তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, “এই মহান নেতা নিজের হাতে স্মৃতিকথা লিখে গেছেন যা তার মহাপ্রয়ানের ঊনত্রিশ বছর পর হাতে পেয়েছি । সে লেখা তাঁর ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া, পরিবারের কথা, ছাত্র জীবনের আন্দোলন, সংগ্রামসহ তাঁর জীবনের অনেক অজানা ঘটনা জানার সুযোগ এনে দেবে। তাঁর বিশাল রাজনৈতিক জীবনের এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা এই গ্রন্থে তাঁর লেখনীর ভাষায় আমরা পাই”।

প্রাচীন ঐতিহবাহী এক বনেদী মুসলিম পরিবারে শেখ মুজিবের জন্ম টুঙ্গিপাড়ায় ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। তিনি নিজেই জানিয়েছেন ছোট সময় তিনি খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলেন। খেলাধূলা করতেন, গান গাইতেন ও খুব ভালো ব্রতচারী করতে পারতেন। তাঁর গৃহশিক্ষক কাজী আব্দুল হামিদ প্রতিষ্ঠিত ‘মুসলিম সেবা সমিতি’ র সদস্য হিসেবে থলি নিয়ে বাড়ি বাড়ি থেকে চাল উঠিয়ে আনতেন এবং এই চাল বিক্রি করে গরিব ছেলেদের বই এবং পরীক্ষার অন্যান্য খরচ দিতেন। ঘুরে ঘুরে জায়গিরও ঠিক করে দিতেন। হঠাৎ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে সেই শিক্ষক মারা যান। তখন তিনি এই সেবা সমিতির ভার নেন এবং অনেক দিন পরিচালনা করেন।

তিনি কিশোর বেলায় অনেক গুলো খবরের কাগজ পড়তেন। তাঁর আব্বা খবরের কাগজ রাখতেন। আনন্দবাজার, বসুমতী, আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী ও সওগাত। তিনি জানান “ছোটকাল থেকে আমি সকল কাগজই পড়তাম”। গোপালগঞ্জে এক বন্ধুকে মারপিট করছে শুনে কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে বন্ধুকে উদ্ধার করতে মারামারি করায় থানায় মামলা হয়। জীবনে প্রথম গ্রেফতার হন এবং জেল হাজতে যান। সাত দিন পর জামিন পান। পরে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনাক্রমে পনের শত টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে মামলা তুলে নেয়া হয়েছিল। বন্ধুর জন্য শেখ মুজিবের ভালবাসার নির্দশন এতে পাওয়া যায়।

১৯৪১ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেয়ার পর ভীষণভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সভা করেন, বক্তৃতা করেন। পাকিস্তান আনতেই হবে, নতুবা মুসলমানদের বাঁচার উপায় নাই। ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষ হয়। গ্রাম থেকে লাখ লাখ লোক শহরে চলে আসে। খাবার নাই কাপড় নাই। এমন দিন নাই রাস্তায় লোকমরে পড়ে থাকতে দেখা যায়না। শেখ মুজিব তখন সিভিল সাপ্লাই মন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর কাছে গিয়ে বললেন, “কিছুতেই জনসাধারনকে বাঁচাতে পারবেননা, মিছামিছি বদনাম নেবেন”। তিনি বললেন দেখি চেষ্টা করে কিছু করা যায় কিনা, কিছু লোক তো বাঁচাতে চেষ্টা করব”।

দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় মানুষকে সহায়তার জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তমিজুদ্দিন খান, মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ, মোয়াজেম হোসেন চৌধুরী (লাল মিয়া) প্রমুখের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত কনফারেন্স আয়োজনের মূল ভূমিকা শেখ মুজিব পালন করেন। দেশের মানুষকে সহায়তার জন্য শেখ মুজিবের আন্তরিকতা তখনই বোঝা গেছে।

পাকিস্তান সৃষ্টির পেছনে শেখ মুজিবের দর্শন তাঁর নিজের লেখনিতে, “অখন্ড ভারতে যে মুসলমানদের অস্তিত্ব থাকবেনা এটা আমি মন প্রান দিয়ে বিশ্বাস করতাম। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হিন্দু নেতারা ক্ষেপে গেছেন কেন? ভারতবর্ষেও মুসলমান থাকবে এবং পাকিস্তানেও হিন্দুরা থাকবে। সকলেই শাসন অধিকার পাবে। পাকিস্তানের হিন্দুরাও স্বাধীন নাগরিক হিসাবে বাস করবে। ভারতবর্ষের মুসলমানরাও সমান অধিকার পাবে। পাকিস্তানে মুসলমানরা যেমন হিন্দুদের ভাই হিসেবে গ্রহণ করবে, ভারতবর্ষের হিন্দুরাও মুসলমানদের ভাই হিসাবে গ্রহণ করবে”।

বাঙ্গালিদের মানসিকতা শেখ মুজিবের দৃষ্টিতে ফুটে উঠেছে তার নিজের জবানিতে,“আমাদের বাঙালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হল আমরা মুসলমান, আর একটা হল, আমরা বাঙালি”। পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাস ঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধ হয় দুনিয়ার কোন ভাষায়ই এই কথাটা পাওয়া যাবে না, ঈর্ষা দ্বেষ সকল ভাষায়ই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে কিন্তু বাঙ্গালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাই ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না। এই জন্যই বাঙ্গালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনভর অন্যায় অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। সুজলা সুফলা বাংলাদেশ সম্পদে ভর্তি। এমন উর্বর ভূমি দুনিয়ার খুব অল্প দেশেই আছে। তবুও এরা গরিব। কারন যুগ যুগ এরা শোষিত হয়েছে নিজের দেশে। নিজকে এরা চেনেনা আর যতদিন চিনবেনা এবং বুঝবেনা এতদিন এদের মুক্তি আসবেনা”।

ভ্রমণের মাধ্যমে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান দর্শন, জনগনের সাথে আলাপের মাধ্যমে তাদের অবস্থা ইত্যাদি জানা বঙ্গবন্ধুর শখের মধ্যে অন্যতম ছিল। তিনি জিন্নাহ সাহেবের আহ্বানে ভারতবর্ষের মুসলিমলীগ পন্থী কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের কনভেনশনে দিল্লীতে অন্যান্য নেতাদের  সংগে যোগদান করেন। আগ্রা থেকে ট্রেনে ওঠার সময় অনেক ভিড়ের মধ্যে তাড়াহুড়া করতে গিয়ে ট্রেনে উঠতে না পেরে এক ফার্স্ট ক্লাসের দরোজার হাতল ধরে দাঁড়ালেন। সাথে আরেক বন্ধু ছিল। অনেক ধাক্কাধাক্কি করলেও প্রথম শ্রেণীর ভদ্রলোক দরজা খোলেননি। ট্রেন ভীষণ জোরে চলেছে, তাদের ভয় হতে লাগলো, একবার হাত ছুটে গেলে আর উপায় নাই। তিনি দুই হাতলের মধ্যে দুই হাত ভরে দিলেন, আর তার বন্ধুকে বুকের কাছে রাখলেন। এভাবে বিপদের সময় অসহায় মানুষকে বুকে আগলে রাখা তার মানসিকতা, এটাই বঙ্গবন্ধুর দর্শন।

ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের কর্মচারীরা তাদের বিভিন্ন দাবী দাওয়া নিয়ে ধর্মঘট করেছে। শেখ মুজিব কয়েকজন ছাত্র নেতাকে নিয়ে ভাইস চ্যান্সেলরের সাথে দেখা করে অনুরোধ করে যাতে কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত না করা হয় এবং কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে তাদের ন্যায্য দাবী পূরনের জন্য। তাদের আন্দোলনে সমর্থন দেয়ায় শেখ মুজিবসহ সাতাশ ছাত্রকে বিভিন্ন মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করেছে। তবে চারজন ছাড়া বন্ড ও জরিমানা দিলে লেখাপড়া করতে পারবে। শেখ মুজিব এই চারজনের মধ্যে ছিলেননা। ছাত্রনেতাদের বহিস্কারের প্রতিবাদে আন্দোলন করায় শেখ মুজিবসহ আট জনকে গ্রেফতার করে। শেখ মুজিব নতি স্বীকারও করেননি, বন্ডও দেননি। আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।

কারাগারের জীবন সম্পর্কে শেখ মুজিবের অনুভূতি শেখ মুজিবের বয়ানে, “সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে সমস্ত কয়েদীর কামরায় বাহির থেকে তালা বন্ধ করে দেয়া হয় গণনার পর। আমি কয়েদীদের কাছে বসে তাঁদের জীবনের ইতিহাস ও সুখ দু:খের কথা শুনতে ভালবাসতাম”।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন কর্মী সম্মেলনে পুরাতন মুসলিম লীগকে বাদ দিয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করা হল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারন সম্পাদক জনাব শামসুল হক এবং শেখ মুজিব জয়েন্ট সেক্রেটারী। তিনি তখন কারাগারে। তাঁর ভাবনা ছিল একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হবে। তিনি জানান “ভাবলাম সময় এখনো আসে নাই, তাই যাঁরা বাইরে আছেন চিন্তা ভাবনা করেই করেছেন”।

ঢাকা জেলখানায় ফুলের বাগান করেছিলেন শেখ মুজিব। জেলখানার পাশে সরকারি প্রেস ছিল। তার মত প্রকাশে স্বাধীনতা ছিলনা। তাই শেখ মুজিব বলেন ওদের দেখলেই আমার মনে হতো যে ওরা বড় জেলে আর আমরা ছোট জেলে আছি। স্বাধীন দেশের মানুষের ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই, এর চেয়ে দু:খের বিষয় আর কি হতে পারে?

১৯৫২ সালের অক্টোবরে চীনে শান্তি সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলায় ভাষণ দিয়ে ছিলেন। বাংলায় ভাষণ দেয়ার পক্ষে তিনি বলেন- “ কেন বাংলায় বক্তৃতা করবনা? ভারত থেকে মনোজ বসু বাংলায় বক্তৃতা করেছেন। পূর্ব বাংলার ছাত্ররা জীবন দিয়েছে মাতৃভাষার জন্য। বাংলা পাকিস্তানের সংখ্যাগুরুর ভাষা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে না জানে এমন শিক্ষিত লোক চীন কেন দুনিয়ার অন্যান্য দেশেও আমি খুব কম দেখেছি। আমি ইংরেজীতে বক্তৃতা করতে পারি। তবু আমার মাতৃভাষায় বলা কর্তব্য”।

১৯৫২ সালে চীন দেশে ভ্রমণের সময় শেখ মুজিব দেখেছেন কমিউনিস্ট সরকার জমিদারি বাজেয়াপ্ত করে চাষিদের মধ্যে জমি বিলি বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন। ফলে ভূমিহীন কৃষক জমির অধিকার পেয়েছে। চেষ্টা করে ফসল উৎপাদন করছে, সরকার সাহায্য করছে। ফসল উৎপাদন করে এখন আর অকর্মন্য জমিদারদের ভাগ দিতে হয়না। শেখ মুজিবের এসব দেখে বাংলাদেশের কৃষকদের প্রতিও তাঁর অনুভূতি গভীর হয়েছে।

চীনদেশে ভ্রমণের সময় বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেন। তিনি জানান “ দলনেতা পীর সাহেবকে নিয়ে এক বিপদই হল, তিনি ধর্ম মন্দির, প্যাগোডা আর মসজিদ এইসব দেখতেই বেশি আগ্রহশীল। আমরা শিল্প কারখানা, কৃষকদের অবস্থা সাংস্কৃতিক মিলনের জায়গা ও মিউজিয়াম দেখার জন্য ব্যস্ত। তিনি আমাদের দলের নেতা, আমাদের তাঁর প্রোগ্রামই মানতে হয়। তবুও ফাঁকে ফাঁকে আমরা দুইজন এদিক ওদিক বেড়াতে বের হতাম”। চীনদেশে যে জিনিস তৈরি হয় না তা লোকে ব্যবহার করবেনা। পুরনো আমলের ক্ষুর দিয়ে দাড়ি কাটা হয়। এরা শিল্প কারখানা বানানোর জন্যই শুধু বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে। আমাদের দেশে সেই সময়ে কোরিয়ার যুদ্ধের ফলস্বরুপ যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছিল তার অধিকাংশ ব্যয় হয় জাপানি পুতুল, আর শৌখিন দ্রব্য কিনতে। দৃষ্টিভঙ্গির কত তফাৎ আমাদের সরকার আর চীন সরকারের মধ্যে”। এ রকম রাষ্ট্রীয় দর্শন তিনি মনে মনে পোষণ করে নিজ দেশেও প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন।

একটা জাতীয়করনকৃত টেক্সটাইল মিল তাদের দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল। তার নিজের জবানিতে,“আমরা স্বাধীন হয়েছি ১৯৪৭ সালে আর চীন স্বাধীন হয়েছে ১৯৪৯ সালে। যে মনোভাব পাকিস্তানের জনগণের ছিল, স্বাধীনতা পাওয়ার সাথে সাথে আজ যেন তা ঝিমিয়ে গেছে। সরকার তার জনগনকে ব্যবহার না করে তাকে চেপে মারার চেষ্টা করছে। আর চীনের সরকার জনগনকে ব্যবহার করছে তাদের দেশের উন্নয়ন মূলক কাজে। তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য হল তাদের জনগন জানতে পারল ও অনুভব করতে পারল এই দেশ এবং এদেশের সম্পদ তাদের। আর আমাদের জনগন বুঝতে আরম্ভ করল, জাতীয় সম্পদ বিশেষ গোষ্ঠীর আর তারা যেন কেউই নয়। ফলে দেশের জনগণের মধ্যে ও রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। একটা মাত্র পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছিল সাদা চামড়ার জায়গায় কালো চামড়ার আমদানি হয়েছে”।

তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, “আমি নিজে কমিউনিস্ট নই। তবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করিনা। একে আমি শোষণের যন্ত্র হিসাবে মনে করি। এই পুঁজিপতি সৃষ্টির অর্থনীতি যতদিন দুনিয়ায় থাকবে ততদিন দুনিয়ায় মানুষের উপর থেকে শোষণ বন্ধ হতে পারেনা। যুগ যুগ ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে যারা আবব্ধ ছিল সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যাদের সর্বস্ব লুট করেছে তাদের প্রয়োজন নিজের দেশকে গড়া ও জনগনের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পুঁজির দিকে সর্বশক্তি নিয়োগ করা। বিশ্বশান্তির জন্য জনমত সৃষ্টি করা তাই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের রাজনৈতিক চেতনার পার্থক্য তিনি নিজের জবানিতে বলেছেন “পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিরাট প্রভেদ রয়েছে। সেখানে রাজনীতি করে সময় নষ্ট করার জন্য জমিদার জায়গিরদার ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা। আর পূর্ব পাকিস্তানে রাজনীতি করে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়। পশ্চিম পাকিস্তানে শক্তিশালী মধ্যবিত্ত না থাকার জন্য জনগন রাজনীতি সম্বন্ধে বা দেশ সম্বন্ধে কোন চিন্তাও করে না। জমিদার বা জায়গিরদার বা তাদের পীর সাহেবরা যা বলেন, সাধারণ মানুষ তাই বিশ্বাস করে”।

যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সময় শেখ মুজিবের নির্বাচনী প্রচারে গোপালগঞ্জে বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে বেড়ান। তিনি জানান,“ আমার মনে আছে খুবই গরিব এক বৃদ্ধ মহিলা কয়েক ঘন্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, শুনেছে এই পথে আমি যাব, আমাকে দেখে আমার হাত ধরে বলল, বাবা আমার এই কুঁড়ে ঘরে তোমার একটু বসতে হবে”। আমি তার হাত ধরেই তার বাড়িতে যাই। অনেক লোক আমার সাথে, আমাকে মাটিতে একটা পাটি বিছিয়ে বসতে দিয়ে এক বাটি দুধ, একটা পান ও চার আনা পয়সা এনে আমার সামনে ধরে বলল” খাও বাবা, আর পয়সা কয়টা তুমি নেও, আমার তো কিছুই নাই”। আমার চোখে পানি এল। আমি দুধ একটু মুখে দিয়ে সেই পয়সার সাথে আরও কিছু টাকা তার হাতে দিয়ে বললাম, তোমার দোয়া আমার জন্য যথেষ্ট, তোমার দোয়ার মূল্য টাকা দিয়ে শেষ করা যায় না”। টাকা সে নিলনা, আমার মাথায় মুখে হাত দিয়ে বলল,“ গরিবের দোয়া তোমার জন্য আছে বাবা”। নীরবে আমার চক্ষু দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে ছিল, যখন তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি। সেই দিনই আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম “ মানুষেরে ধোঁকা আমি দিতে পারবনা”।

তিনি জানান “আমি ইলেকশনে নামার পূর্বে জানতামনা, এ দেশের লোক আমাকে কত ভালবাসে। আমার মনের একটা বিরাট পরিবর্তন এই সময় হয়েছিল”।

ক্ষমতার প্রতি শেখ মুজিবের লোভ ছিলনা। তিনি জানান তিনি যখন তাঁর বাড়ি টুঙ্গিপাড়া থেকে নির্বাচনের পরে ফিরে আসেন শহীদ সাহেব তাঁকে একলা ডেকে বললেন, “তুমি মন্ত্রীত্ব নেবা কি না?” আমি বললাম “ আমি মন্ত্রীত্ব চাই না? পার্টির অনেক কাজ আছে, বহু প্রার্থী আছে দেখে শুনে তাদের করে দেন”। ক্ষমতার প্রতি লোভ শেখ মুজিবের কখনো ছিলনা যা তিনি ৭ই মার্চের ভাষণেও বলেছিলেন”। আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাইনা, বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা চাই”।

এভাবেই বঙ্গবন্ধুর জীবন আবর্তিত হয়েছে। মানুষ, সমাজ, রাজনীতির টানে। তিনি ছিলেন এক মহামানব যার হৃদয়ে ছিল শুধুই মানুষ, দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্র। তাঁর দর্শন ছিল মানবতা, আসাম্প্রদায়িকতা, মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, শোষণ, বঞ্চনা ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম। মানুষের কল্যাণ ও মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন আজীবন এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর নিজ দর্শন । তারপর শুরু হয় সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রাম। যা পূর্ণ করার আগেই ঘাতকের বুলেট তাঁর প্রাণ কেড়ে নেয়। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর কিউবার মহান বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো অনুভূতি ব্যক্ত করেন, “বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে পৃথিবীর শোষিত মানুষ হারালো তাদের মহান নেতাকে, আমি হারালাম বিশাল হৃদয়ের এক অকৃত্রিম বন্ধুকে”। জর দেহের মৃত্যু হলেও তিনি চেতনায় আমাদের মাঝে অমর, তাঁর আদর্শ আমাদের পাথেয়। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি  আমাদের জাতির পিতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

 

কৃষ্ণ কান্ত বিশ্বাস– জন্ম মাদরীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার শশিকরে এক মধ্যবিত্ত হিন্দু পরিবারে। পিতা হরিবর বিশ্বাস ও মাতা মনতারা বিশ্বাস। শশিকর থেকে এসএসসি ও এইচএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক সম্মানসহ স্নাতকোত্তর এবং বিএড ও এমএড, এসইউবি থেকে এনভায়রনমেন্টাল সাইন্সে মাস্টার্স এবং এনএপিডি থেকে পিজিডি অন প্লানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট কোর্স করেন। মাঠ প্রশাসনে ম্যাজিস্ট্রেসি, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছাড়াও পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে উপ-পরিচালক (পুনর্বাসন) ও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে যুগ্মসচিব পদে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে মেট্রোরেল প্রকল্পে অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি আমেরিকা, ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, সিংগাপুর, জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম ভ্রমণ করেন।
প্রকাশিত গ্রন্থ : ভ্রমণকাহিনী পার্ল হারবার থেকে মানালি , কাব্যগ্রন্থ : প্রিয় পৃথিবী ভাল থাকো ,নীলাঞ্জনা পরিবেশ বিষয়ক গ্রন্থ : আমরা শিশু অন্যরকম পৃথিবী চাই।
Tags: ১৫ইআগস্টকৃষ্ণ কান্ত বিশ্বাসচাতালপ্রবন্ধবঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমান
Previous Post

প্রবন্ধ।। আলোকিত মানুষের স্বপ্নদ্রষ্টা।। শিশির রাজন

Next Post

কবিতা।। রাজিব উল হুদা

Chatal

Chatal

Next Post
কবিতা।। রাজিব উল হুদা

কবিতা।। রাজিব উল হুদা

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • About
  • Advertise
  • Privacy & Policy
  • Contact
বাংলামটর, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
ই-মেইল: [email protected]

© 2021 Chatalbd - Design & Developed By Developer Rejwan.

No Result
View All Result
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ

© 2021 Chatalbd - Design & Developed By Developer Rejwan.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In