আত্ম
সন্ন্যাসিনী সে ছিল যদিওবা, দেয়নি হারিয়ে
যেতে, ধমনী শিরায় তার ছিল যত মাতৃগুণ;
তাই তো হিমানী, ধ্বস পেরিয়ে সে আসে
ত্বরা ক’রে; ভাবে আজও আমাদের: শিশু নারায়ণ।
কিন্তু, অগোচরে, আমরা দেখেছি রায়ট্; অনেক
ম-কার যোগে নিজেদের ব্যাপৃত রেখেছি;
উন্মনা হয়ে উঠি দ্বন্দ্ব না-রেখে —
আমার আমি-কে দেখি মরে যেতে, নিদারুণভাবে!
রক্তবমি মুছি নিজেই নিজের, নিজের জন্য
নিজে উপমা খুঁজি; অবশেষে, বলে উঠেছি: সোহং।
আদিম
আমাকে নিহত ক’রে হাওয়ায় ছড়িয়ে দাও
ফুৎকার। সে ধ্বনি ভাবীজন্মে পৌঁছনোর
আগেই, তাকেও আহত করো, খুলে নাও
অলঙ্কার যাবতীয়, এবং ভাষাহীন করো —
অথবা এমনও কথা ছোটে বাজারে:
আমি তো নিজের অজান্তে আমাকেই
হত্যা ক’রে ফেলেছি! এখন শুধু কপটতা
ক’রে সেসবই করে একদল দস্যু। এমন
দিনগুলি সাধারণ নয়। শত্রুরা বন্ধুর
আচরণ করে। কত দুর্লভ! আহা! যেন
কত সাধনার ফল। চক্ষুটি নামিয়ে রেখে,
সম্ভ্রম বজায় করো। এসো, সমবেত হয়ে
বসি, চড়কগাছের তলায়। উন্মাদ হয়েছি, এবং
বুঝেছি: নিজের হত্যা নিজে করেছি কত আগে!
সরল
সকল সত্যি মিথ্যে। সকল মিথ্যে সত্যি। মোড়কে
মুড়ে আজ চড়া দামে বাজারজাত। অভিনবত্বের
উঠোন পেরিয়ে যে পৃথিবী, বলয়ে এসেছ, সেখানে
একাকী তুমি এবং আশাহত? অরণ্যে ভয় নেই,
আছে আমাদেরই মাঝে — ভীতি প্রদর্শনকারী এবং
ভীত, দুই-ই আমরাই। মুখের অতীতে মুখ, মুখের
ভবিতব্য নব্য কিছু মুখ — এটুকুই আশার সংসার?
প্রফেটিক আজ এই নিস্তেজ থাকা — নিঃসাড়,
তবুও, নিজের ভেতর তুমি সবচেয়ে বেশি চলমান।
উভয় প্রজন্মই পীড়িতা; — না জেনে, সন্ততি এসে বলে:
‘আয়োজন, উদ্যোগ এত এত যদি, আমরা বিচার পাব — বলো, মা?’
নির্বাক
তুমি কী দারুণভাবে নিঃসরণের মাঝে বাঁচো।
তুমি কী দারুণভাবে ‘নেই’ হয়ে এভাবেই
ভবিষ্যকালেও থেকে যাবে — অনির্বাণ আমাদের
সেসকল স্মৃতি, মনে পড়া। গড়পড়তা লোকে
শিস্ দেবে ক্ষয় দেখে তার… সে দীর্ঘদিন
হল মাটির তলায় — তলিয়ে গিয়েছে নাকি
জানে না কেউই। মা চিরজাগরূক; যেভাবে
নৌকা নয়, আশরীরজুড়ে কেবলই পাটাতন
জলের গভীরে অতন্দ্র থেকেছে — বাঁচা ভালো,
এ-কথা জানে সকলেই; কিন্তু, জানে না কেউই
কেন তুমি এতভাবে বাঁচো! এ যেন তোমারই
দায় — খুচরো কথার গুণে স্বভাব বিলানো —
এবং জানিয়ে দেওয়া: বাঁচতে চেয়েই বাঁচো, কিন্তু
কেন, আশাতীতভাবে আশাহত করো আর এত বেশি বাঁচো!
রাতুল
পরশ পায়নি দেবতাও। চরণ দু’খানি তার
তেমনই রাতুল। এত প্রেম কেন আনো?
অন্যদিকে ছল! এই যে সুষুপ্তি নেই,
তোমার উৎকণ্ঠা হয়? কথা নয়, শব্দ
নয়, কী বার্তা দিতে চাও, তা-ই মুখ্য,
পূজ্য। আঙুলে সামান্য ছোঁয়া, আংটির
দাগ; তুমি তারও চেয়ে বড়ো! মহান
কতটা? হৃদয়ে রক্ত ছল্কায় — এমন
গহীনে সে নির্বাক, যেকোনোরকম বনিতা।
নিষিক্ত আলো তাকে ধোয়। তার পুণ্য,
তার স্নানে কী শান্তি, কী অবলীলায়
ক্ষমাহীন যুগ কেটে যায় — পারে না
সে তারওপর বাহিরে সদর্পে হেঁটে যেতে —
দূর্বাদল আর হেমন্তকালীন প্রিয় ফুল মরে যায়!

