বাবার চশমা
বাবার রেখে যাওয়া চশমাটায়
এখনোও লেগে আছে সবক’টা আঙুলের ছাপ।
বাবা, তোমার দর্শনের আলোয় রোজ
আমাদের জীবনের গল্পগুলো ফোকাস হতো।
বছর কয়েক হলো
স্নেহ, মায়া লোপাট করে তুমি লোকান্তরিত হলে।
আজ নিজ হাতে
চশমার গ্লাসের ময়লাগুলো ঝেড়ে
মুছে ছন্দে ফিরাতে গিয়ে দেখি…!
প্রতিবিম্বের স্বপ্নগুলো
ভাবনার অন্ধকারে ডুবে গেছে।
কোথাও কিচ্ছু নেই
শুধু বুকের ভিতর জমা হওয়া
অস্তরাগের কষ্টগুলো পোড়া বাঁশির
সুর হয়ে বেজে চলেছে অহর্নিশ।
মাছ
টিপ টিপ বৃষ্টিতে
রান্না ঘরের পুবের জানালা দিয়ে
ঠিকরে পরা
একটুকরো আলোয় বসে, মা…
বটির দু’ দিকের চকচকে ধারে
মাছটাকে কাটার জন্য যেই তুলে ধরলো।
হাতের মুঠোর থাকা নিস্তেজ মাছের
বিস্মিত মুখ তাকিয়ে রইল মায়ের দিকে।
বিমূর্ত চোখে মা
মাছের আশঁ ছাড়িয়ে, মাথা কেটে,
হৃদপিন্ডটা আলাদা করে খন্ড খন্ড করে কেটে নেয়।
তাঁরপর কলের নিবিষ্ট জলে রক্তমাখা মাছ
ভালো করে ধুয়ে নুন, হলুদ মিশিয়ে
তেলঢালা টগবগে কড়াইয়ে ছেড়ে দেয়।
একহাতে কড়াইয়ের হাতল আর
অন্য হাতে থাকা খুন্তি দিয়ে নাড়তে
থাকা মাছের একটা ঝাঁঝ মায়ের নাকে এসে লেগে
জীবনবোধকে ক্ষত করে তুললো
আর দগদগে অনুভূতিগুলো গেথেঁ
গেলো রক্তাক্ত বটির গাঁয়ে!
লক্ষ্মীপেঁচা
পূর্ণিমার রাতে
জঙ্গল থেকে ছুটে আসা কালো গোখরা
খুব জোরে ছুটছে।
নদীর তীরের অর্জুন গাছে তখন
লক্ষ্মী পেঁচার তুমুল ডানা ঝাপ্টানোর থেমে থেমে শব্দে
স্থবির হয়ে গেলো হৃদপিন্ড।
ঝাপসা বাদামি কুয়াশায়
গোখরাটি গাছ থেকে নেমে
ধীরে ধীরে জল সিঁড়ি বেয়ে চলে গেলো নদীর দিকে।
চাঁদগলা ফুটফুটে আলোয়
নদীটাকে আমি দেখি
তাঁর কোন ঢেউ নেই
আছে বিশাল মাপের দুটো তীর।
এক তীরে পরে আছে ব্যবচ্ছেদ
আর অন্য পাড়ে লক্ষ্মী পেঁচার
অশ্রুবিন্দু শিশিরবিন্দু হয়ে জমে আছে
এক নদীর ব্যবধানে।
মধুমিতা বিশ্বাস- কবি, ফরিদপুর।