Tuesday, June 24, 2025
  • Login
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ
No Result
View All Result
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ
No Result
View All Result
No Result
View All Result
Home প্রবন্ধ

প্রবন্ধ।। সৃষ্টিশীলতার নৈতিকতা এবং সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।। আল মাকসুদ

Chatal by Chatal
June 23, 2025
in প্রবন্ধ
A A
0
প্রবন্ধ।। সৃষ্টিশীলতার নৈতিকতা এবং সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।। আল মাকসুদ

লেখকের ব্যক্তিগত নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। লেখক কী লিখবেন, কেন লিখবেন, কীভাবে লিখবেন౼এসব কোনোটারই ব্যাখ্যা লেখক দেন না। দেয়ার প্রয়োজনও নেই। তবে লেখকের সৃষ্টিশীলতার একটি নৈতিকতা থাকে। এ-ধরনের নৈতিকতা কখনো রাজনৈতিক, কখনো মতাদর্শিক। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি মতাদর্শিক লেখক। বলা বাহুল্য লেখালেখি শুরু করেছেন কলামনিস্ট হিশেবে। ষাটের দশক থেকে তাঁর যাত্রারম্ভ। লেখালেখিকে ঠিক কোন দায় থেকে ব্রত হিশেবে কবুল করেছিলেন, সেটি বোঝা যায় তাঁর বিস্তৃত সৃষ্টিকর্ম পাঠান্তে। আবার লিখতে গিয়ে যে তিনি আদর্শের প্রচারক হয়ে ওঠেননি, তার পেছনেও কারণ౼ওই নৈতিকতাই। উদযাপিত জীবনের কথা বলেছেন, যাপনের কথা বলেছেন౼এবং বলেন অসংকোচ ভঙ্গিতে। বলার মধ্যে কোনো ভড়ং রাখেন না౼তিনি সত্যিটাকে যেভাবে বোঝেন, তার সঙ্গে দশজনের মিল না-ও হতে পারে; কিন্তু দশজন তাঁকে ভুল বোঝেন না। ভুল না বোঝার কারণটা বিচিত্র। লক্ষ করলে দেখা যায়, তিনি কারো পক্ষেও বলেন না; বিপক্ষেও না। তবে বলেন ঠিক উচিত কথাটাই। এভাবে বলতে পারাটা নতুন। এবং অনেকক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জ। ইতোমধ্যে বাংলা প্রবন্ধের সৌম্য গতি তিনি নির্মাণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ যে অর্থে বহুমাত্রিক লেখক, অধ্যাপক চৌধুরী সেরকম কিছু নন; কিন্তু প্রবন্ধের বিচিত্রতায় তাঁর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মিল রয়েছে। আত্মসত্তার সাংস্কৃতিক চৈতন্য তাঁর লেখা ও কর্মের মুখ্য নৈতিকতা।

যুক্তি ও প্রজ্ঞার অনুশীলন হয়তো প্রাবন্ধিকমাত্রই করে থাকেন। তবে প্রবন্ধটাকে পাঠকের দ্বার অব্দি পৌঁছে দিতে পারেন না অনেকেই। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রবন্ধের দৌড় এবং দৈর্ঘ্য পাঠকের দ্বার স্পর্শ করে। কোনো অলৌকিক ম্যাজিক নয় এটি। সমাজ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে আন্তঃসম্পর্ক হলো বাস্তবতার’౼সেই আন্তঃসম্পর্কটাকে তিনি তাঁর প্রবন্ধে উপস্থাপন করেছেন গভীরভাবে। মানুষ মাত্রই কোনো না কোনো শ্রেণির অংশ। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এই শ্রেণিটাকে গুরুত্ব দিয়েছেন অন্যদের চেয়ে ভিন্নতর আঙ্গিকে। তিনি মনে করেন শ্রেণিটাকে ভাঙতে হবে। শ্রেণির যে বিভাজন, এ-বিভাজন সবক্ষেত্রেই অসাম্যের বীজ বপন করে। মধ্যবিত্ত শ্রেণিটাকে তিনি অবশ্য রাখতে চান। মধ্যবিত্তের অবদান সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে সবচেয়ে বেশি౼যা উচ্চবিত্ত বা অন্ত্যজ শ্রেণির মাঝে পাওয়া মুশকিল౼এটি একটি কারণ। মধ্যবিত্ত শ্রেণি সমাজের ক্ষতিও করে। ক্ষতিটা হলো౼এদের হারাবার ভয় বেশি। প্রাপ্তি ও প্রত্যাশাটা মধ্যম কিন্তু অতৃপ্ত। কিন্তু যারা স্বশ্রেণির সীমাকে ভাঙতে পেরেছেন, তাঁদেরকে তিনি দিয়েছেন উঁচু আসন। নজরুল পেরেছেন, সুকান্ত পেরেছেন౼রামমোহন পারেননি; পারেননি রবীন্দ্রনাথও। এমনকি বিদ্যাসাগরও। এই যে সংকটাকীর্ণ পথরেখা অথবা সমাজবাস্তবতা, এখানে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আপন দ্রোহিতার আলোকে স্বমতের পক্ষে থেকেছেন অবিচল।

রাষ্ট্র, সমাজ, সংস্কৃতি ও শিক্ষার পাশাপাশি তিনি উপলব্ধি করেছেন শিল্পের সঙ্গে নারীর যে যোগাযোগ, সে যোগাযোগে  বাস্তবতার নৈকট্য ও দূরত্ব কেমন। নারী কি শিক্ষায় এগিয়ে থাকবেন, নাকি অর্থনীতিতে, নাকি রূপজ আকর্ষণে, নাকি কোমল মাতৃত্ব ও স্ত্রীসত্তায়? শিল্পপুরাণ, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের আধুনিক সাহিত্যের অসংখ্য নারী চরিত্রকে তিনি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন নারীর শুদ্ধতার তেজ আছে; তেজ সততারও আছে౼সবচেয়ে বেশি আছে সাহসিকতার। সাহসিকতার ভিতটা কোনো পুরুষ তৈরি করে দিবে না; দেয় না। নারীকেই তৈরি করতে হবে। করাটা সহজ নয়; তবে অসাধ্যও নয়। অর্থনৈতিক শক্তি ও ঋদ্ধিকে তিনি নারীর অন্যতম সংস্থিতি হিশেবে দেখেন। বিবেচনাবোধে তিনি প্রাচ্যের নারীর জন্য প্রাচ্যের কালচারকেই মানদণ্ড রাখতে আগ্রহী। পুরুষতান্ত্রিকতা দ্রৌপদীকেও নিয়ন্ত্রণ করবে, কুমুর ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলবে কিংবা নোরা ঘর থেকে বেরিয়ে ঠিক কোথায় যাবে౼তারও পথ যদি পুরুষই নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে ওই পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে নারীর লড়াইটাকে তিনি সমর্থন করেন। নারীমুক্তির প্রশ্নে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের চেষ্টার প্রতি তাঁর যে অকুণ্ঠ সমর্থন౼তার কারণ হলো, রোকেয়া নিজে কেবল নারীর মুক্তি চাননি; পুরুষকেও বন্দিত্ব থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছেন। এবং রোকেয়ার প্রচেষ্টার আড়ালে ধর্ম কিংবা প্রচল প্রথা কখনো বেড়া হিশেবে দাঁড়াতে পারেনি। শরৎচন্দ্র যে ‘কমল’কে নির্মাণ করেন, সে ‘কমল’ অবশ্যই স্বতন্ত্র; কিন্তু সে ইউরোপীয় ধ্যান-ধারণাকে লালন করেও ভারতীয় বাঙালি নারীর বৃত্তাবদ্ধ জীবনের আদর্শ হয়ে ওঠে। এখানেই আপত্তি তোলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। প্রত্যক্ষ করি౼জীবনের পাটাতনটা যেন পিতৃতান্ত্রিকতার শক্তিকে মূল্য না দিয়ে কোনোভাবেই বলীয়ান হয়ে উঠতে পারে না। এর পেছনে কারণটা কী? অধ্যাপক চৌধুরী মনে করেন, ব্যবস্থাটা বদলায়নি। হয়েছে অনেককিছু౼যাকে আমরা উন্নতি বলি, সে উন্নতি বাস্তবিক অর্থে নারীর সামূহিক নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে পারেনি; স্বাধীনতা তো অনেক পরের কথা।

সাহিত্যের রাজনীতিটা সবসময়ই একতরফা হয়েছে। এটির দায়িত্বে ছিলেন কুলীন হিন্দু লেখকগণ। তাঁরা কৌশলে রাজনীতি করেছেন, তাতে বিনষ্ট হয়েছে সৃষ্টিশীলতার নৈতিকতা। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ-প্রসঙ্গে বলতে চেয়েছেন, মুসলমানের সংখ্যা বেড়ে যাবে বলে বঙ্কিম শঙ্কিত হয়েছেন, শরৎচন্দ্রের নায়ক রমেশ বিচলিতবোধ করেছে। স্বামী বিবেকানন্দও দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারেননি’౼তবে ব্যতিক্রম ছিলেন মাইকেল। কিন্তু তাঁরও ছিল রাষ্ট্রপ্রীতি; মানে রাষ্ট্রের আনুকূল্য তিনি চেয়েছেন। এতে প্রথাগত চিন্তার পাশাপাশি রাজনীতি ছিল, সম্প্রদায়গত স্বার্থচিন্তা ছিল౼এবং সবচেয়ে বেশি ছিল সৃষ্টিশীলতার অনৈতিকতা। এসব অনৈতিকতাকে অধ্যাপক চৌধুরী তুলে ধরতে সংকোচবোধ করেননি। সাম্প্রদায়িক চিন্তাপ্রসূত সাহিত্যের সংখ্যা আমাদের দেশে অপ্রতুল নয়। যারা এ-ধরনের সাহিত্য রচনায় ব্রতী হয়েছেন, তাঁদের সৃষ্টিকর্ম কালজয়ী হয়েছে সত্য; এখনো মানুষ তা পাঠ করে, আনন্দ পায়౼একই সঙ্গে খুঁজে পায় চিন্তার সংকীর্ণতা ও স্বসম্প্রদায়প্রীতির দিকটাও। সে-অর্থে মুসলমান লেখকগণ সৃষ্টিশীলতার উদার পথে হাঁটতে পারেননি কেন? পারেননি, তার নেপথ্যে কি শিক্ষার অভাব; নাকি দারিদ্র্য, নাকি বোধের চাঞ্চল্যের অভাব౼সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব নিয়ে ভেবেছেন। তিনি দেখেছেন, নজরুলের শিক্ষা ছিল না; কিন্তু বোধের চাঞ্চল্য ছিল౼তিনি টপকে গেছেন তাঁর সময়ের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত লেখক শ্রেণিটাকে। পুঁজিবাদী চক্রের হাতে পড়ে মারখাওয়া কলকাতার এক কুলিমজুরের কষ্টকে সমস্ত দুনিয়ার মেহনতি মানুষের অপমান হিশেবে দেখার চোখটি নজরুলের ছিল। অন্যদিকে রোকেয়াও ছিলেন এগিয়ে। মীর মশাররফ এগিয়ে ছিলেন উদারতা বিবেচনায় বঙ্কিমের চেয়ে বেশি। সৃষ্টি ও ব্যক্তি মনীষায় কখনো কখনো বুদ্ধদেবের চেয়ে নজরুলের অন্তর্বীক্ষণ ছিল অধিক সর্বজনীন; সার্বরাষ্ট্রিক। তুলনামূলক বিচার করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘১৮২৪ সালে জন্ম না নিয়ে মধুসূদন যদি নজরুলের মতো ১৮৯৯ সালে জন্ম নিতেন, তাহলে কি নজরুলের মতো সমাজবিপ্লবী হতেন? মোটেই না। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। সেটি পিতৃতান্ত্রিক। রাষ্ট্রের কাছ থেকে তিনি তাঁর মেধার স্বীকৃতি চেয়েছেন, রাষ্ট্রকে ভাঙতে চাননি। নজরুল কিন্তু ভাঙতে চেয়েছিলেন।’

অলৌকিক, অবাস্তব সৌন্দর্যকে অবজ্ঞা করার সাহস রাখেন জনাব চৌধুরী। যেখানে সত্যের বালাই নেই; মিথ্যা বিলক্ষণ টিকে থাকে, সেখানে তিনি দেখেন পুঁজির অহমিকা; আগ্রাসন। এই আগ্রাসনকে ঠেকানো না গেলে সাধারণের বিজয় আসবে না। মানুষে মানুষে বৈষম্য বাড়বে। তৈরি হবে সামাজিক অসাম্য। এবং বাড়বে অগণতান্ত্রিক শক্তির প্রভাব। যে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়, সে বাংলাদেশে বৈষম্য কমেনি। অথচ লড়াইটা ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে। স্বাধীন বাংলাদেশ যে তারুণ্যকে গ্রহণ করতে পারেনি, তাদের সামনে মেলে ধরতে পারেনি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’౼তার আড়ালেও রয়েছে রাষ্ট্রনৈতিক ষড়যন্ত্র। রাষ্ট্র মানেই প্রবল শক্তিধর একটি প্রতিষ্ঠান। এ-ধরনের প্রতিষ্ঠানের অভিপ্রায় সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, রাষ্ট্র বলে౼ ‘ঘুমিয়ে থাকো এবং আমাদের শাসন মেনে নাও। সব বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রই এটা চায়। বাংলাদেশ ব্যতিক্রম হবে কেন!’ রাষ্ট্রিক ও সামাজিক বিকাশে আমাদের চিন্তার দীনতা ছিল। দীনতা এখনো আছে। এ দীনতাকে অতিক্রম করতে না পারলে, রাষ্ট্র নিপীড়কদের নিরাপদ ভূমি হবে; সাধারণ মানুষের জন্য হবে কারাগার। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর এমনতর ভাবনার সাদৃশ্য এ রাষ্ট্রের দিকে তাকালে সত্য বলে জ্ঞাত হয়। মানুষের ভেতরের সত্তাকে আবিষ্কার করার হেতু থেকে নয়, মানুষের ভেতরের শক্তিকে আবিষ্কার করার হেতু থেকে তিনি লিখতে সচেষ্ট হয়েছেন বলে মনে করি। সাধারণের যাপিতজীবনকে তিনি দেখেছেন বুদ্ধিজীবিতার আলোকে। ফলে, রাষ্ট্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পেরেছেন। এখানে তিনি অনেক বেশি বস্তুবাদী। তবে তাঁর বস্তুবাদিতা কোনোক্রমেই পার্থিব বিলাসনির্ভরতাকে প্রশ্রয় দেয়নি। প্রয়োজনিক সত্যটাকে উন্মোচন করার দৃঢ়তা তাঁর প্রকৃত মূলধন বলে মনে করতে পারি।

তিনি তাঁর কোনো লেখায় সাধারণত কারো যুক্তি খণ্ডন করতে আগ্রহী নন। তাঁর আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহ সামাজিক স্পৃহাকে জাগিয়ে দেয়ার প্রতি। এজন্য তাঁর সমগ্র সাহিত্যচিন্তায় কোনো আকুলিবিকুলি নেই; আবেগিক পরিপ্রেক্ষিত থেকেও কোনো লেখা লিখেছেন౼এমন ভাবার সুযোগ খুব কম। আবেগিক ক্ষেত্রটাকে উপেক্ষা করার সুযোগ থাকে যখন লেখকের নৈতিকতাটা লৈখিক সত্যের আলোয় আলোকিত হয়। লৈখিক সত্যতা কোনো ইতিহাসনির্ভর সত্যতা নয়; এ-ধরনের সত্যতা মূলত ঐতিহ্যচেতনা ও সমকালীন বাস্তবতার সমন্বিত রূপ। যেমন লক্ষ করলে দেখা যাবে, অধ্যাপক চৌধুরীর রাজনৈতিক বিশ্লেষণ কাউকে রাজনীতিবিমুখ করবে না, রাজনীতিবিদ করেও গড়ে তুলবে না౼কিন্তু রাজনীতি সচেতন করে তুলবে বিলক্ষণ। এখানে তাঁর প্রকাশ স্বচ্ছতার বিষয়টিই মুখ্য হয়ে ওঠে। সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি তাঁর অনড় আস্থা নিয়ে যে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন। এ আদর্শ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের বাস্তবতার সঙ্গে কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ, কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য অথবা, এর প্রয়োজনীয়তাই বা কতটুকু? ౼এসব প্রশ্নের সহজ উত্তর হতে পারে, একটি ব্যবস্থাপত্র তিনি দিয়েছেন, তার যথাযথ প্রয়োগ কখনো হয়নি। যদি প্রয়োগ হতো, আর কিছু না হোক সুষম মানবিক সমাজ তৈরির যে বৃহৎ সম্ভাবনাগুলো খুলে যেত౼তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রসঙ্গক্রমে বলতে পারি, তাজউদ্দীন আহমদের কথা,’౼তিনি মনে করতেন, তাজউদ্দীন আহমদকে শুধু একজন রাজনীতিক বিবেচনায় মনে রাখতে হবে, তেমন নয়। তিনি মনে করেন, তাজউদ্দীনকে মনে রাখতে হবে, কারণ’౼‘তাঁকে জানলে আমরা একটি দৃষ্টান্ত পাবো। দৃষ্টান্ত স্থির লক্ষ্যে অগ্রসর হবার; শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা ও অধ্যবসায়ের ভেতর দিয়ে নিজেকে গড়ে তুলবার।’ তাঁর মাঝে তিনি দেখেছেন ‘বুদ্ধি ও হৃদয়ের সংযোগ’౼যা আমাদের সমাজে, সংস্কৃতিতে সাধারণত লক্ষ করা যায় না। রাজনীতি ও রাজনীতিককে এভাবে তিনি জনবান্ধব প্রজ্ঞার চোখে দেখেছেন; অপছন্দ করেছেন তথাকথিত ক্ষমতাগৃধ্নু রাজনীতিকাতরদেরকে।

বাঙালি মুসলমান অভিধাটাকে তিনি খুব গুরুত্ব দিয়েছেন এমন নয়। তবে বাঙালি মুসলমানের উত্থান-পতনের গল্প বলতে গিয়ে দেখিয়েছেন, কারা বাঙালি মুসলমানের উত্থানের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিনি বলেছেন, ‘গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি’র প্রাণপুরুষ ছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, আবুল ফজল, আবদুল কাদির, কাজী মোতাহার হোসেন প্রমুখের মতো তাত্ত্বিকগণ। বস্তুত শিল্পীর চেতনা থেকে তিনি সবকিছুকে দেখার বিপক্ষে। তিনি লেখক বটে, কিন্তু তাঁর লেখকসত্তা আকাশচারি নয়। অপসংস্কৃতি বাংলা সংস্কৃতিকে গ্রাস করলে তার বিরুদ্ধে তিনি লিখেছেন, তাই বলে সংস্কৃতির অবাধ প্রবহমানতাকে অস্বীকার করেননি। নদী, খাল-বিল দখলকারী লুটেরা চক্রের বিরুদ্ধে তিনি সামাজিক ঐক্য গড়ে তুলতে চেয়েছেন; সবসময় সবাই তাঁর ঐক্যচিন্তার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেননি বলে তিনি দমে যাননি; যারা যুক্ত হতে পারেননি তাদের সমস্যা আর কিছুই নয়౼ সমস্যাটা হলো, ভয়। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে সে বিষয়টি অজানা ছিল না। তিনি নিজে অবশ্য সে ধরনের ভয়কে উপেক্ষা করতে সক্ষম ছিলেন। পাকিস্তানপর্ব-সহ বাংলাদেশের প্রায় সবকটা জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে তাঁর পরিচয় আছে। এসব ঘটনাপ্রবাহের প্রতি কোথাও ছিল তাঁর মৌন সমর্থন, কোথাও প্রকাশ্য, কোথাও নিজেই ছিলেন প্রথমসারির একজন। আলোচনা কিংবা সমালোচনা তাঁকে বিব্রত করেছে হয়তো, তাতে তিনি তাঁর চলার গতিকে মন্থর করেননি। অনেকক্ষেত্রেই তাঁর সক্রিয়তা অথবা উপলব্ধির ধরনটা সাধারণের চোখে ইতিবাচক মনে হয়নি। জাতীয় বুদ্ধিজীবিতার জায়গা থেকে তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময় নিয়েছেন। সময় নেয়ার কারণে তিনি কখনো স্বার্থচিন্তা দ্বারা তাড়িত হননি౼এটি মানতে হবে। অনুপূরক অজস্র ভাবনাকে বরং তিনি সাহিত্যের আশ্রয়ে পাঠকের সামনে এনেছেন সৃষ্টিশীলতার নৈতিকতা থেকে। অবোধ্য শক্তির সঙ্গে লড়াই নয়; যারা লড়াইয়ের মর্ম বোঝেন, তাদের সঙ্গে অবশ্য তিনি প্রতিনিয়ত লড়াই করেছেন। এতে নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন; অপরকে রক্ষা করেছেন আসন্ন বিপদ থেকে। গত ২০২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে তাঁর সমর্থন ছিল; জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে তিনি লিখেছেন উন্নতি উত্থান অভ্যুত্থান (২০২৫) শিরোনামের একটি গ্রন্থ। তিনি যে-কোনো স্বৈরতা ও অপশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে পছন্দ করেন। পছন্দ করেন কর্তৃত্ববাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জনগণকে যুক্ত করতে। কর্তৃত্ববাদের ভেতরে-বাইরে থাকে গণতন্ত্রহীনতা, জনবিচ্ছিন্নতা౼এটি তিনি স্বীকার করেন; বিশ্বাস করেন মনেপ্রাণে। মানবসান্নিধ্য তিনি শুধু কামনাই করেন না, সেই মানবচৈতন্যের নিত্যতার সঙ্গে তাঁর সরল সহবাস আশ্চর্যরকম প্রাণবন্ত এবং চলিষ্ণু।

২৩ জুন ২০২৫, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর নব্বইতম জন্মদিন। একজন মানুষের জন্য এটি একটি দীর্ঘ সময়। পরিপূর্ণতাও নিশ্চয়। অধ্যাপক চৌধুরীর ক্ষেত্রে বিষয়টি শুধু পূর্ণতার নয়, একটি সফল সুন্দর জীবনের আলোকিত রূপ। তিনি লেখাকে গুরুত্ব দিয়েছেন; সেই সঙ্গে জাতির ক্রান্তিলগ্নে শিল্পসাহিত্য সংস্কৃতি রাজনীতি নিয়ে লিখেছেন নিরন্তর। মার্কসবাদী চেতনার বহিঃপ্রকাশ তাঁর প্রায় সব লেখাতেই বিদ্যমান। কিন্তু তাঁর মার্কসবাদ বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষের জীবনচিন্তাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে। সেখানে বৈশ্বিকতা আছে; তবে সে বৈশ্বিকতার আড়ালে বাংলাদেশ হারিয়ে যায় না। হারিয়ে যায় না বাংলা সাহিত্য ও বাংলাদেশের মরাবাঁচার লড়াইয়ের চিত্র। লেখক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী যে ব্যক্তিজীবনকে বেছে নিয়েছেন, সে জীবনের প্রতি অনেকেরই কোনো আকর্ষণ না-ও থাকতে পারে; তবে সে জীবন যে পুঁজিবাদী সমাজে যাপন করা একটি বড়ো চ্যালেঞ্জ౼সেটি কেউ অস্বীকার করবেন না। যে নৈতিকতা তাঁকে লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছে, সে নৈতিকতা মূলত সাধারণের জীবনাকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরবার সাহসী প্রয়াস। কোথাও ক্লান্তিবোধ না করা, তাঁর স্বভাববৈশিষ্ট্য। ভেঙে পড়েননি; চলিষ্ণু পথচলায় রাজনীতির অপদিকটাকে পাঠকের সামনে তুলে ধরতে গিয়ে তিনি সবসময়ই লড়াকু মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। রাষ্ট্রশক্তিকে উপেক্ষা করে সমকালীন ভাবনাগুলো যে মাত্রায় তাঁর লেখার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে, তাতে সহজেই তাঁকে চিহ্নিত করা যায়౼বলা যায় তিনি সমকালীন; এবং ভবিষ্যৎ পাঠকের জন্য ক্লাসিক্যাল আর্টিস্ট। সচেতন ইচ্ছা ও মননশীলতার রূপকার জনাব চৌধুরী চিন্তাশীল পাঠকের কাছে প্রতিনিয়ত নতুন মানুষ; নির্মাণপ্রজ্ঞায় তিনি কখনো কোনোদিন পুরোনো হয়ে যাবেন౼এমন করে ভাবার উপায় আছে বলে মনে হয় না। তাঁর সৃজনধর্মের মাত্র একটি অংশকে  এ-প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। তাঁর বহুধাবিভক্ত সৃষ্টিযজ্ঞের আলোচনা এখানে অনুপস্থিত। একজন মননশীল সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে বিচার করতে গিয়ে সবকিছুর পুনরাবৃত্তি করার প্রয়োজন হয় না। এর কারণ হচ্ছে তাঁর বিচিত্রপ্রয়াসী ভাবনা ও বিবেচনাবোধ।

বাঙালি মুসলমানদের অনেকের মাঝে ছিল ‘শিক্ষাগত প্রস্তুতি ও সাংস্কৃতিক মূলধনের’ সীমাবদ্ধতা। তথাপি কেউ কেউ এগিয়ে ছিলেন ইহজাগতিকবোধের কারণে। তারাই তৈরি করেছিলেন একটি উত্থানসরণি। মধ্যবিত্ত মুসলমান বাঙালি লেখকের এ-উত্থানপর্বে কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদদীন, আবুল ফজল, আবুল মনসুর আহমদ, কাজী মোতাহার হোসেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর মতো মনীষীগণ সোচ্চার ছিলেন। তাঁরা সমাজচিন্তক হিশেবে, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অভিভাবক হিশেবে ছিলেন মহীরুহ। সেই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী কালখণ্ডে বাঙালি মুসলমানের খাঁটি প্রতিনিধিত্ব করেছেন দুজন ব্যক্তি౼একজন আহমদ শরীফ, আর-একজন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী; এঁদের ঠিক অব্যবহিত পরেই অবশ্য এসেছেন আহমদ ছফা। প্রশ্ন উঠতে পারে উভয়ের ধর্মীয় বিশ্বাস বা আমরা যাকে প্র্যাক্টিসিং মুসলিম নাম দিয়েছি, তাঁরা তেমন কেউ কি না? এমন প্রশ্নের অবতারণা উল্লিখিত মনীষীদের ক্ষেত্রেও সমভাবে করার সুযোগ রয়েছে। আমরা সে প্রশ্ন করি না। কারণ সে প্রশ্ন অবান্তর, অবাঞ্ছনীয়। কারো বিশ্বাসের সঙ্গে বিরোধ হলেই তিনি সম্প্রদায়চ্যুত হয়ে পড়েন না। হতে পারে তাঁদের চিন্তার সমান্তরাল আমরা হয়ে উঠতে পারিনি। কিন্তু তাঁরা মুসলিম সম্প্রদায়েরই অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা সেক্যুলারিজমকে গুরুত্ব দিয়েছেন সৃষ্টিতে ও দৃষ্টিতে। সেখানে ধর্ম বড়ো হয়ে ওঠেনি। আবার ধর্মকে খাটোও করেননি। ধর্মের বাহ্যিক শক্তির বাহাদুরি এবং পারলৈাকিক বিশ্বাসবোধের চাইতে, ধর্মের ঐহিকতাকে অধিকতর জরুরি মনে করেছেন তাঁরা। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীও তাঁদের মতো ভাবতে পছন্দ করেন। এবং তিনি তাঁদেরই একজন। উত্তরসূরি না হলেও, তাঁদের চিন্তাশক্তি দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছেন।

আল মাকসুদ-পেশা : অধ্যাপনা, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ।লেখালেখির বিষয় : কবিতা ও প্রবন্ধ।

Tags: আল মাকসুদচাতালপ্রবন্ধ
Previous Post

প্রবন্ধ।। সুফিয়া কামাল: ইতিহাসের সামগ্রিকতায় অনিবার্য এক নাম।। স্বপন পাল

Next Post

প্রবন্ধ।। কবি রওশন ইজদানী-বিস্মৃতপ্রায় এক নাম ।। স্বপন পাল ।। প্রথম পর্ব

Chatal

Chatal

Next Post
প্রবন্ধ।। কবি রওশন ইজদানী-বিস্মৃতপ্রায় এক নাম ।। স্বপন পাল ।। প্রথম পর্ব

প্রবন্ধ।। কবি রওশন ইজদানী-বিস্মৃতপ্রায় এক নাম ।। স্বপন পাল ।। প্রথম পর্ব

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • About
  • Advertise
  • Privacy & Policy
  • Contact
বাংলামটর, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
ই-মেইল: [email protected]

© 2021 Chatalbd - Design & Developed By Developer Rejwan.

No Result
View All Result
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ

© 2021 Chatalbd - Design & Developed By Developer Rejwan.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In