দুঃখের হালখাতা
রঙের বদলে জীবন পদদলিত হলে
আমরা দুঃখের হালখাতা নিয়ে বসি
কার চেয়ে কে বেশি দুঃখী
ক্যালকুলেটর হেসে উঠে বলে
গণিতের খাতা অবলা;
বরং তোমরা সুখ দেখাও
তাতে রৌদ্রের মুখ ওম দিবে শীতে।
এক মাঘে শীত গেলেই ভুলে যাই
আমাকেও পৌষ পিঠা খাওয়াতো
উনুনে পুড়ে মায়ের স্নেহ অমৃত হতো;
সানু অথবা সীমার মা-মরা মুখের মতো
পানসে তিথির মুখ আরশি ভেদ করে
স্ক্রিনশট হলে আবার আমরা বিতর্কে মাতি
তখন নিঝুম রাতও কুয়াশার মতো কেঁদে বলে
না রে সখি আমিই বেশি দুঃখী,
মা আর উনুনে হৃদয় জ্বালিয়ে গরম ভাতের বাষ্পে সুখের সুবাস আনবেই না, তাহলে বলতো সখী, কে বেশি দুঃখী?
চিন্তা
যেদিন খুব মেঘ জমবে বিধ্বস্ত চোখে সেদিন বৃষ্টি হবো;
স্বচ্ছতা অঙ্গে মেখে গেয়ে ওঠবো ঝর্ণার গান। পৃথিবীর সকল নদীর গায়ে লেখা হবে মায়া নাম।
কানের ডাকবাক্সে ফেলবে না কেউ হত্যার ভয়মাখা অমানবিক হরফের চিঠি। বন্য উন্মাদ ঘোড়ার জোড়া পা উঠবে না আঘাত হয়ে।
সকল মৃত্যু এসে আমার টলটলে জলে বিলীন হবে।
সকল অসহায়ত্ব প্রবলবেগে নিজের করে নিবে প্রমত্ত সাগর।
বাস্তব পরাবাস্তব ইতিহাস এসে তুফানে রূপ নিলে সেদিনের ঘূর্ণিঝড় ঘর রক্ষার জন্য অশ্রু ফেলবে না;
সেখানে সহস্র অশ্রুকণা দামামা বাজিয়ে বলবে, ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে!’
মেঘ সব আকাশেই জমে কয়েকদিন আগে বা কয়েকদিন পরে।
হৃদয়ে ঘন ঘন মেঘ করে আর মরুতে বছরে কেবল একবার?
মেঘ করলেই বোঝা যায় মাটির বুকে কতো পিপাসা।
দক্ষিণের হাওয়ায় চিনচিনে ব্যথা।
বালিতে কাদা হয় না জানি, কিন্তু তীব্র যন্ত্রণা তাপে লোহাও গলে।
জুমাইরা সৈকতের ঢেউয়ে ঢেউয়ে ধাক্কা দেখেই যদি মেঘের গল্প মনে পড়ে, তাহলে আমার বৃষ্টি হওয়া, না হওয়াতে বাতাসের কল নড়বে না।
কারবালার আকাশের মতো জলহীন মেঘ কোনো একদিন উদ্ধত চোখেও জমবে।
তাই, নিশ্চিন্তে চিন্তা কমে…
নাম অথবা বেনামের আমরা
দীর্ঘশ্বাস বেয়ে নেমে যায় জীবন
তারা পরস্পর অন্ধ আবেগ
বুকে কবিত্ব নিয়ে হেঁটে যাওয়া অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি
যার অদ্যপ্রান্ত বুনো জমিন, রহস্য জল, সরু নদী
কিশোরের অবাধ বিচরণ, নুয়ে পড়া পুরাতন বৃক্ষ
টালমাটাল ভোর যেখানে আমি তুমি প্রচণ্ড প্লাবনে হেরে যাই রোজ, সিটকে পড়া কণ্ঠস্বর, কাতরানো পুঁটিমাছ
আচমকা শুকনো জমিনে জানের উঠানামা।
নামতার খাতায় অসহায় শিশু মুখ,
যেখানে জন্ম থেকে মুখস্থ না হওয়ার অপরাধে
স্কুল পালানো ধারাপাত হয়ে বেঁচে থাকা।
এই সব গল্প কবিতার খাতায় তুমি আর আমি
পরস্পর লিখে যাই জীবন।
অতঃপর নাম দিই দীর্ঘশ্বাস।
তিথি আফরোজ– কবি। জন্ম- ৬ অক্টোবর ১৯৮৭, নওগাঁ । প্রকাশিত কবিতার বই : ছন্দপতনের শব্দ, ওড়ার কৌশল, তিথির তিরিশ, তিথিতীর্থমায়া,দ্যা ব্লাইন্ড গড, ফেইস ইনসাইড দি মাস্ক ইত্যাদি। সম্পাদনা– পুনশ্চ (যৌথ), ধূলিপথ। সম্মাননাঃ কবি জসীমউদ্দিন স্মৃতি পুরস্কার ( চব্বিশ পরগনা, ভারত) । প্রিয় বাসিনি অ্যাওয়ার্ড ( ঢাকা)