Friday, May 9, 2025
  • Login
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ
No Result
View All Result
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ
No Result
View All Result
No Result
View All Result
Home গল্প

দীর্ঘগল্প।। জানালাটা খোলা ছিল ।। তওহিদ মাহমুদ হোসেন।। প্রথম পর্ব।।

Chatal by Chatal
May 16, 2022
in গল্প
A A
0
দীর্ঘগল্প।। জানালাটা খোলা ছিল ।। তওহিদ মাহমুদ হোসেন।। প্রথম পর্ব।।

এক.

শব্দটা হলো ধপ্ করে, চাপা ধরনেরও। আর সাথে সাথেই বিচ্ছিরি একটা ‘ক্যাঁ…ও’ চিৎকার, বিড়ালের।

এক মনে রান্না করছিল তুবা। খুব সাবধানে ডিমের খোসাটা আলগা করে সাদাটা ঢালতে হয়। হাত কাঁপলেই কুসুম গড়িয়ে ভেঙ্গে যাবে। আচমকা আওয়াজটায় তুবার বুকে ততক্ষণে ধুপধাপ হাতুড়ির বাড়ি।

ঘড়িতে সাড়ে নটা বাজছে। কিন্তু বাইরে তাকালে মনে হবে মফস্বলের মধ্যরাত। একদম নিকষ অন্ধকার না হলেও ক্ষয়াটে চাঁদের আলোয় বাইরেটা প্রায়ান্ধকার। মনুষ্যসৃষ্ট আলো বলতে রাস্তার সবেধন নীলমনি স্ট্রিটল্যাম্পটার আলো। বাকিগুলো অনেক আগেই ফিউজ হয়ে গিয়েছে। কর্পোরেশনের দায় নেই ঠিক করার; মহল্লাবাসীরও নেই আগ্রহ। কয়েকটা বাড়ির জানালা চুঁইয়ে ছিটকে আসা আলোয় চারপাশের অন্ধকার যেন আরও গাঢ় হয়েছে।

মফস্বল না জায়গাটা; শহরের মধ্যেই। কিন্তু মনে হবে, সময় যেন খুব জোরে দৌড়ে যেতে যেতে এখানটায় এসে খেই হারিয়ে ফেলেছে। স্কাইস্ক্র্যাপারের যুগে পুরো একটা মহল্লায় এখনও সবচেয়ে উঁচু বাড়িটা ছতলার, এটা ভাবলেই ভুরু আপনাতেই কপালে উঠে যায়। কিন্তু এই আটত্রিশ নম্বর জুম্মন কোচোয়ান লেন সেই কপালে ওঠা ভুরুর থোড়াই কেয়ার করে। এই রাস্তায় এমনিতেই লোক চলাচল বেশ কম। কানা লেন বলে বাইরের লোকও ঢোকেটোকে না বিশেষ। যে দুচারটে শাখা বেরিয়েছে, সেগুলোও চক্রাকারে ঘুরে আবার এই জুম্মন কোচয়ান লেনেই এসে মিশেছে।

 

তুবার বুকের ধুকপুকানি কমেছে না। বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে পাশের জানালাটার দিকে তাকাচ্ছে। চুলোর ঠিক পাশেই অন্ধকার আঁটা একটা ফ্রেম রেখে রান্না করতে গেলে সবসময়ই মনে হয়, এই বুঝি গ্রিল বেয়ে কেউ উঠে এসে জানালার চৌকাঠে লম্বা লম্বা নখওয়ালা আঙ্গুলগুলো বিছিয়ে ধরবে। কিন্তু জানালা বন্ধ করেও তো রাখা যায় না। যে গরম। তুবা অবশ্য এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে শব্দের উৎসটা কী। এ হল জানালার উল্টোদিকের আফ্রাদের ছাদ থেকে আরেকটা ইঁট খসে পড়ার শব্দ। নিশ্চয়ই এ পাড়ার হার্মদ বিড়াল বুলেট; ছাদের পাঁচিল ডিঙ্গাতে গিয়েছিল। পুরোনো রেলিংটার কোনো ইঁট বুলেটের গায়ের ধাক্কায় আলগা হয়ে যাওয়া ইঁট-সিমেন্টের পলেস্তারায় আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি।

মিরাজ এখনও ফেরেনি। তুবা ঘড়িটা দেখল একবার – সাড়ে আটটা বাজে। ফোন করে কথা বলা যায়। কিন্তু খুব জরুরি না হলে মিরাজ বিরক্ত হবে। হয়তো এই মুহূর্তে কলিগদের সাথে আছে নয় বাসে ঘর্মাক্ত অবস্থায় ফিরছে। কিন্তু তুবার খুব ইচ্ছা করছে কারও সাথে কথা বলতে। আফ্রাকে করবে? ভাবতে ভাবতে ফোনটা হাতে তুলে নেয় ও। মাথায় তখনও ঘুরছে প্রশ্নটা – আজও দেরি করছে কেন মিরাজ?

 

দুই.

বিচির ক্লাসে গৌতম বুদ্ধও মনোযোগ ধরে রাখতে পারবেন না তো আফ্রা। ক্লাসের প্রতিটা ছেলেমেয়ে যে দড়ি ছেঁড়া ছাগলের মতো অস্থির হয়ে উঠেছে, সেটা বিচির বোঝার কথা না। এখন পড়াচ্ছেন থ্রি-ডিমেনশন্যাল জিওমেট্রি। একঘেয়ে স্বরে বারবার বলে যাচ্ছেন তিনটা ডাইমেনশন কল্পনায় ধরে রাখতে। আরে, দশ সেকেন্ড কনসেন্ট্রেশানই থাকছে না তো তিন ডাইমেনশন। কি ভীষণ আজাব!

বদরুদ্দিন চাকলাদারকে যে ছেলেমেয়েরা ‘বিচি’ করে নিয়েছে, তা কেবল নামের আদ্যাক্ষরের জন্যই নয় বরং ডায়াসে দাঁড়িয়ে পড়ানো সময়ে নিজের নিম্ন-মধ্যাঙ্গে অবস্থিত বিশেষ প্রত্যঙ্গ সংলগ্ন এলাকা চেতনে ও অবচেতনে অবলীলায় চুলকানোর জন্যও।

এক ঘন্টার ক্লাস যখন পৌনে দুঘন্টায় শেষ হলো, তখন আফ্রার মাথায় একটাই চিন্তা – কখন বাসায় ফিরে বিছানায় লাফ দিয়ে পড়বে। ঘন্টাদুই না ঘুমালে আগামীকালের কুইজ চিত্তির। মাথায় তো কিছুই ঢোকেনি। শাহনাজের ক্লাসনোট আর সলভ করা চোথাটা ফোটোকপি করে এনেছিল দুদিন আগে। আজ এসপার-ওস্পার করতেই হবে। এই ক্লাসটেস্টটা ওর এখন এসিড টেস্ট।

ঘুমটা ভেঙ্গে গেল ঠিক চারটায়। জানালার বাইরে চোখ পড়তেই কেন যেন মনটা হঠাৎ খুব ভালো লাগতে শুরু করলো আফ্রার। আজ সূর্য ডোবা পর্যন্ত ছাদভ্রমণ করবে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো। এরকম সোনারঙা সুয্যিমামাকে তো সবসময় পাওয়া যায় না।

শীত আসি আসি করছে। আফ্রাদের এই পাড়াটা একটেরে, তাই বেশ খোলামেলাও। ছাদে দাঁড়ালে এখনও ভাগে অনেকটা আকাশটা পাওয়া যায়। হেমন্তের ঝকঝকে আকাশ। প্রতিদিন বিকেলে তাই ছাদের কোণে যে সিঁড়িটা ওভারহেড ট্যাংকে ওঠার জন্য গাঁথা, সেখানে বসে বসে রেলিংএ পা তুলে ঘন্টাখানেক বই পড়ে, নয় গান শোনে।

সবজেটে সিটি শর্টস আর ফিকে নীল ঢোলা গেঞ্জিটা বদলে একটা ক্যালোত পরে গায়ে চড়ালো কুর্তাটা। হাতে ইসমত চুগতাইয়ের ছোট গল্প আর মোবাইল।

মা’র ঘরের দরজাটা ভেজানো। উঁকি দিয়েই নিঃশব্দে হেসে ফেললো। রেশমা আক্তার এক মনে হাতের মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেন। কোভিড মাকে পুরোপুরি নেটফ্লিক্সে ঢুকিয়ে ফেলেছে।

মা, ছাদে যাচ্ছি। তুমি আসবে?

কথার কথা যদিও। আফ্রা খুব ভালো করেই জানে, মা যাবে না। ওসব আকাশ, রোদ, খোলা হাওয়া, এসবের থেকে বিছানায় পা ছড়িয়ে বসে সিরিয়াল আর মুভি দেখাই তার পছন্দ। রেশমা আক্তার শুধু একবার ভাসাভাসাভাবে চোখ তুলে তাকালেন মেয়ের দিকে। এরপর অন্যমনস্কভাবে মাথা নেড়েই না-হ্যাঁ এর মাখামাঝি একটা ভঙ্গি করলেন। আফ্রা বুঝলো, মা এখন ক্লাইম্যাক্সে।

 মিনা খালা এলে আমাকে চা দিয়ে আসতে বোলো। আমি গেলাম।

কথাটা বলেই আফ্রা বেরিয়ে এল। এই ফ্লিপফ্লপটা পরলে পায়ে নয়, পুরো শরীর জুড়ে আরাম লাগে। ছাদের গেটটা ঠেলে খুলে ফেলতেই বিকেলের সোনারঙা রোদ যেন খলবল, ছলবল করতে করতে দৌড়ে এলো। আহ্!

ছাদে উঠলে প্রথমেই চোখে পড়বে অনেক বড় একটা আকাশ, নিচে একটা এবড়ো থেবড়ো নিচু জমি, শেষ হয়েছে অনেকগুলো বড়-মাঝারি গাছের পায়ের কাছে। ওই সবুজ ঝোপড়ার মধ্যে থেকে গজিয়ে উঠেছে একটা চার্চের চূড়া। এখানে এককালে অনেক ক্রিশ্চিয়ান থাকতো। এখনও আছে। ওটার পাশেই কিছুটা জায়গা ছেড়ে আরেকটা মিনার। ওখানেই মসজিদটা। হঠাৎ দেখলে মনে হয়, দুটো বাচ্চা যেন বাগানে লুকোচুরি খেলতে খেলতে হাত উঁচু করে  ডাকছে একে অন্যকে। একরাশ মিঠে রোদ পুরো ছাদটা ভরিয়ে দিচ্ছে। ওদের বাড়িটাই এই লেনের শেষ বাড়ি। উক্টোদিকেরটা তুবাদের। তাই পানির ট্যাংকটার ওপাশটায় দাঁড়ালেই এপাশের বাড়িগুলোর ছাদ আড়ালে পড়ে যায়, কেবল তুবাদেরটা ছাড়া।

ট্যাংক ঘুরে নিজস্ব বসার জায়গাটায় চোখে পড়তেই মেজাজটা খিঁচড়ে গেল আফ্রার। একটা ছেলে বসে আছে। পিছন ফিরে বসা, তাই চেহারাটা নজরে না এলেও মাথার ওপরে ধোঁয়া দেখে সিগারেটের প্রবল অস্তিত্ব টের পেতে কোন সমস্যা হলো না। বোঝাই যাচ্ছে, বান্দা এখানে বেশ কিছুক্ষন ধরে আছে। কারণ সামনে রেলিং ঘেঁসা টবগুলোয়, যেখানে আফ্রার প্রিয় গাছগুলো লাগানো, কয়েকটা দগ্ধ সিগারেটের অবশিষ্টাংশ পড়ে আছে। মাথা গরম হয়ে উঠতে এর থেকে বেশি কী লাগে?

 

তিন.

চৌদ্দ বছর আগে তুবার বয়স ছিল দশ। সেই সময় জামালুর রেজা স্ত্রী সুলতানা আর একমাত্র সন্তান তুবাকে নিয়ে এই আটত্রিশ নম্বর জুম্মন কোচোয়ান লেনে চলে আসলেন। শৈশবের প্রতিটা জিনিসের সাথে যে মাত্রার সংযোগ তৈরি হয়, সেটা পরবর্তীতে আর কোনো কিছুর সাথেই হয় না। তাই তো ছেলেবেলার জায়গাগুলো সবসময়ের প্রিয়, ছোটবেলার স্কুল সবচেয়ে স্মৃতিকাতরতার জায়গা আর ছোটবেলার বব্ধুটাই সত্যিকারের প্রাণের বন্ধু; তুবার যেমন আফ্রা।

দশ আর সাত বছরের দুটো মেয়ে এ বাড়ি ও বাড়ি করে বেড়াতো। একটা সময়ে দেখা গেল, দিনের বেশিরভাগ সময় হয় তুবা কাটাচ্ছে আফ্রার বাড়িতে নয় আফ্রাকে খুঁজে বের করতে হচ্ছে তুবার বাসা থেকে। জামালুর রেজার ছিল ট্যুরের চাকরি। একা তাই নতুন জায়গায় সুলতানা বেশ হিমশিম খেতেন। তখন থেকেই সুলতানার সংসারের ছোটখাট দরকারগুলো কিভাবে যেন আফ্রার মা রেশমা আক্তার তুলে নিলেন নিজের কাঁধে। আর সেই থেকে দুই পরিবারে ঘনিষ্ঠতার শুরু।

এর মধ্যে বছর গড়ালো। তুবা যখন আস্তে আস্তে কুঁড়ি থেকে ফুল হয়ে ফুটে উঠছে, তখনই প্রথম ধাক্কা। ট্যুর থেকে ফেরার পথে ডাকাতের সামনে অহেতুক বিরত্ব দেখাতে গিয়ে সুলতানাকে বিধবা করলেন জামালুর রেজা। মাঝরাস্তার ঘটনা; পুরো বাসে একটাই খুন। তুবারা সেই লাস পেল তিনদিন পর। তা-ও আফ্রার বাবা সরাফ উদ্দিনের দৌড়াদৌড়ি না থাকলে সেটা আদৌ হতো কিনা সন্দেহ।

এরপরই সুলতানার মধ্যে খুব সুক্ষ্মভাবে অসংলগ্নতা দেখা দেয়। দিনে এমনিতে আপাত দৃষ্টিতে স্বাভাবিক। কিন্তু রাতে মোটেও ঘুমান না। ওঁর দৃঢ় বিশ্বাস, স্বামীর ফিরতে রাত হচ্ছে। কাজেই দরজা খুলে দেয়ার জন্য জেগে থাকতে হবে।

সবার চোখের সামনেই তুবা ক্রমশ গুটিয়ে যাচ্ছিল নিজের মধ্যে। কিন্তু সেটা কেউ খেয়ালই করে নি। মাকে ছেড়ে তো আর বাইরে থাকা যায় না। ফলে তুবার ক্লাসে ফাঁক পড়তে লাগলো। যোগাযোগটাও কেমন ছাড়া ছাড়া হয়ে গেল আফ্রার সাথেও, যদিও ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে বাড়িদুটো। আফ্রারও ততদিনে আরও বেশ কয়েকটা বন্ধু হয়েছে। সদ্য কলেজ পেরোনো আফ্রা তখন নতুন দুনিয়ায়। তুবার সাথে আর দিনভর আড্ডা হয় না। মন খুলে কথা বলার মতো আরও কয়েক জোড়া কানও ওর তৈরি হয়েছে। তুবার মতো না অবশ্য কেউ। কিন্তু সেই আগেকার আঠাটা আর নেই।

তুবার এই একটাই মেলে ধরবার জায়গা ছিল নিজের জন্য। সেটাও আস্তে আস্তে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। বিষন্নতা এমনই একটা ধুসর চাদর যেটা একবার মাথার ওপর চাপালে আর নামিয়ে রাখা যায় না নিজে থেকে। দিন দিন চাদরটা লম্বা আর ভারি হতে থাকে। না নেয়া যায় ঠিকমতো দম, না দেখা যায় সীমানা যে হাত দিয়ে তুলে ধরবে। তুবার ডিপ্রেশনের সেই হলো সূচনা।

অন্য কেউ খেয়াল না করলেও ব্যাপারটা চোখে পড়েছিল রেশমা আক্তারের। স্বামীর সাথে আলোচনা করে তখন রেশমাই ঠিক করলেন, তুবার দায়িত্ব একজোড়া শক্ত হাতে এই বেলাই তুলে দিতে হবে। সুলতানার সাথে আলোচনা বৃথা। ততদিনে তার মধ্যে মানসিক অসুস্থতার পুরো লক্ষণ প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। তা-ও প্রস্তাবটা দিলেন। ওঁর বড় ছেলে অক্ষরের ক্লাসমেট মিরাজ। তুবার সাথে একদিন দেখাও করিয়ে দিলেন। দুজনের কারোই আপত্তির কিছু ছিল না। ফলে বিয়েটা হয়ে গেল। বিয়ের পর মিরাজ মেস ছেড়ে উঠে এলো তুবাদের বাসায়। সুলতানাকে রেখে তো অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই নিজের পরিচিত পাড়াটাতেই রয়ে গেল ওরা।

রেশমা আক্তার কাজটা খুব বুদ্ধিমানের মতোই করেছিলান। কারণ বিয়ের চার মাসের মাথায় সুলতানার রাতের পর রাত না ঘুমানো শরীর একদিন জবাব দিয়ে দিল ব্রেইন স্ট্রোক করে। তবে অন্তত মরার আগে মেয়ের যে একটা সংসার হয়েছে, এটা দেখে যেতে পেরেছিলেন তিনি। এই বা কম কী?

 

চার.

কয়েক সেকেন্ড ভেবে নিয়ে আফ্রা মৃদুভাবে কাশলো একবার। কাশির শব্দেও ছেলেটার কোনো হেলদোল নেই। এবার আফ্রা গলা তুললো,

এক্সকিউজ মি। হ্যাল্লো ও ও।

আজব! এবারও কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সেই একই ভঙ্গিতে বাম পা টা লম্বা করে ছেলেটা সিগারেট ফুঁকে চলেছে। ইগনোর করছে ইচ্ছে করে? চন্ করে মাথায় রক্ত উঠে গেল আফ্রার। আর তখনই চোখে পড়লো, দুটো সরু তার কান থেকে বেরিয়ে একসাথে হয়ে ডান হাতের পাঞ্জায় লুকিয়ে গিয়েছে। আচ্ছা, হেডফোন।

এবার আফ্রা সটান হেঁটে গিয়ে ছেলেটার সামনে দাঁড়ায়। ওমা! চোখ বন্ধ করে মাথা নেড়ে নেড়ে হেব্বি মৌজে গান গাইছে এবং সেটা ওর নিজেরও খুব প্রিয়; আইয়ুব বাচ্চুর ‘জানি না, কেন অন্ধকারে তুমি একা।’ গলাটা তো বেশ ভালো। দেখতেও মন্দ নয়। এক পলকে যা দেখার জরিপ করে নিলো ও। টিপিক্যাল লাইট স্কাই ব্লু ফেডেড জিন্স পরা। চুলগুলো মাঝারি লম্বা, বাতাসে এলোমেলো হয়ে আছে। মুখটা একটু লম্বা ধরণের, তাতে দু দিনের না কামানো দাড়ির ঝাড়। হুম! নট ব্যাড।

রিস্ট ওয়চের দিকে চোখ এমনিতেই চলে গেল। গেইজের যে এডিশানটা পরে আছে, সেটা স্পর্টস-ওয়চ হলেও চিনতে এক মুহূর্তও লাগলো না। কারণ এই একই এডিশানের লেডিজ ভার্সনটা ওর নিজেরই আছে। ঘড়ির প্রতি আফ্রা সবসময়ই একটু দূর্বল। কয়েক ধাপ সিঁড়ি জুড়ে প্রায় শোয়ার ভঙ্গিতে বসা বলে স্ট্রাকচার সম্পর্কেও ধারণা পেয়ে গেল। লম্বায় অন্তত পাঁচ নয় বা দশ হবে। ওর থেকে ইঞ্চি তিনেক লম্বা তো বটেই। লোকাস্টের বাকল কোমর পেঁচিয়ে আছে। সুতরাং ফ্যাশন টেস্ট একদম খারাপ না।

হঠাৎ মনে পড়লো, কোথায় ছেলেটাকে ঝাড়বে, তা না, অ্যানালিলিস করে যাচ্ছে। এইসব ভাবাবাবির মধ্যে ওর খেয়াল হয় নি যে, ওর ছায়া ছেলেটের চোখেমুখে পড়া রোদকে আড়াল করে রেখেছে। ফলে একটু পর ছেলেটাও অলস ভঙ্গিতে চোখ খুলেই ধড়মড় করে উঠে বসলো।

জাস্ট একটু কল্পনা করুন। আপনি চোখ খুললেন। ফুট তিনেক সামনে বুকের ওপর দুই হাত জড়ো করে স্কারলেট জোহানসেন আর অ্যানা হ্যাথওয়ের একটা ক্লোন আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। তাতে আবার এক মুঠো কাজলের বাঙ্গালিয়ানার মাদকতা জমিয়ে দেয়া। মাথা ঝাঁপিয়ে কার্লি চুল কাঁধের সামনে এবং পিছনে নেমে গিয়েছে। আপনি কী করবেন অথবা ভাববেন?

এ ক্ষেত্রেও অবধারিতভাবেই ছেলেটা আক্ষরিকঅর্থেই হাঁ হয়ে গেল। এরপর অটোম্যাটিক রিফ্লেক্সে সোজা হতে গিয়ে ছোট্ট একটা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলল। পায়ের ওপর রাখা স্মার্টফোনটা ঠাঁই করে ছিটকে দুটো দুর্দান্ত ড্রপ খেয়ে ল্যান্ড করলো ছাদের খরখরে সারফেসে। এসব ক্ষেত্রে বড় পর্দার ফোনের যা হয়, সেটাই হয়েছে মার্ফির ল অনুসারে। নিঁখুত তিনটে ক্র‍্যাক, যেটা কিনা ছেলেটা আরও পরে খেয়াল করবে। আপাতত আচমকা ছাদে নেমে আসা মানবীরূপী সূর্যের তাপে তার দু চোখ ধাঁধিয়ে গেছে।

‘আপনি আমার জায়গায় বসে আছেন।’ – আফ্রা গলাটা যদ্দুর সম্ভত ততটা খরখরে করে বললো। উচিৎ হচ্ছে না জানে। কিন্তু বিরক্তিও চেপে রাখতে পারছে না।

মা…ম্মানে…?

বলছি যে, এটা আমার জায়গা। আপনি যেটা দখল করে বসে আছেন যেখানে, সেটা।

আ…আপনার জায়গা…? মানে, কিসের দখল?

সিঁড়িটার যে জায়গাটায় আপনি বসে বসে সিগারেট ফুঁকছেন এবং আমারই গাছের টবে ছুঁড়ে ফেলছেন, ওখানে আমি প্রতিদিন বসি। তাই…।

আফ্রা একটু পজ দিলো। বুদ্ধি থাকলে এইবার ছেলেটার উঠে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখনও সে সেই একই জায়গায় বসে আছে। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে, জীবনেও কখনও কোন মেয়ের সামনে পড়েনি। ন্যাকা। বোকা বোকা ভাব দেখানোর এই ট্রিক অনেক দেখেছে ও। কাজেই আর কোন কথা না বলে চোখ সরু করে তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে।

ছেলেটা এবারে একটু নড়ল। চোখটা আফ্রার থেকে প্যান করে চলে গেছে ছাদে পড়ে থাকা মোবাইলটার দিকে। দু ধাপ নেমে নিচু হয়ে সেটটা হাতে নিয়ে দেখল একবার ভুরুদুটো কুঁচকে। তারপর প্যান্টের সাথে ধীরেসুস্থে মুছে নিয়ে আবার বসে পড়লো ধাপটায় এবং আফ্রার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আবার সিগারেট টানতে শুরু করলো। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে অনেকটাই।

এবার আর ধৈর্য রাখতে পারলো না আফ্রা। মেজাজ সপ্তমে উঠেছে। বেলা বয়ে যাচ্ছে। কোত্থেকে এক জুটল এই আপদ? নতুন ভাড়াটে? কোন বাসায় বেড়াতে এসেছে? পরে দেখা যাবে। আপাতত গলায় যথেষ্ঠ পরিমান বিরক্তি ঢেলে বললো,

য়্যুড য়্যু মাইন্ড?

‘নট অ্যাট অল। কেন মাইন্ড করব? সুন্দরী মেয়েদের ওপর আমি মাইন্ড করি না।’ – মুচকি হাসি চোখের কোণে খেলা করছে ছেলেটার।

কিন্তু আমি করি। অভদ্র এবং অসভ্য লোকদের দেখলে আমি মাইন্ড করি। মাথায় রক্ত উঠে যায়। তাই জিজ্ঞেস করছি, ওই জায়গাটা থেকে এক্ষুনি উঠবেন কিনা এবং এজন্য আপনি মাইন্ড করলেও আমার কিছু এসে যায় না।

ও আচ্ছা। উঠে যেতে হবে, আমাকে। কিন্তু আপনি বললেই আমাকে উঠতে হবে কেন? জায়গাটা কি আপনার ব্যক্তিগত? যদ্দুর জানি, ছাদটা কমান স্পেস।

আমার ব্যক্তিগত কিনা, সেটা জানা জরুরি নয়। জরুরি যেটা সেটা হলো ছাদে সিগারেট খাওয়া নিষেধ। আর সেটা ছুঁড়ে গাছের টবে ফেলাটা নোংরামো। আর হ্যাঁ, আমি বললেই এখান থেকে উঠে যেতে হবে। কারণ এখানেই আমি প্রতিদিন বসি। সেটা এই বিল্ডিং এর সবাই-ই জানে, মনে হচ্ছে একমাত্র আপনি ছাড়া। বাই দ্য ওয়ে, আপনাকে এত ব্যাখ্যা দিচ্ছি কেন? আপনি কে বলুন তো? আগে দেখিনি তো।

ফাইভ এ তে থাকি। গত সপ্তাহে এসেছি। – ছেলেটা স্পষ্টতই এবার কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছে। এরকম আগুনমার্কা একটা মেয়ের চোখ আর মুখ থেকে আগুন বর্ষণের জন্য অন্তত প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করে সরে যেতেও আত্মসম্মানে বাধছে। তাই মুখ খুললো যাচ্ছিল কিন্তু আবার থেমে যেতে হলো আফ্রার বাক্যবানে।

ও আচ্ছা, আপনিই সেই যার জন্য রাতবিরাতে আমার মাথার ওপর ধুড়ুমধাড়াম আওয়াজ হয় চেয়ার-টেবিল টানার। দু বার আপনি বারান্দা থেকে পানি ফেলেছেন। বাসায় ছিলাম না বলে বুঝতে পারিনি কোত্থেকে এলো।

আপনার মাথার ওপরে আওয়াজ? তার মানে আপনি ফোর এ তে। দেখুন, আওয়াজটার জন্য আমি দুঃখিত। বুঝতে পারিনি, এতটা শব্দ হবে। আর পানিও আসলে আমি ফেলিনি। নতুন বাসায় ওঠার পর হয়তো আমাদের কাজের মেয়েটা মেঝে ধুতে গিয়ে ভুল করে পানি উপচে ফেলেছে। যাই হোক, সবগুলো ঘটনার জন্য আবারও স্যরি। জানতাম না, জায়গাটা আপনার। চলে যাচ্ছি। আপনি বসুন।

কথাটা বলে ছেলেটা উঠে দাঁড়ায় এবার। লোফারটা পায়ে গলিয়ে হাঁটা দিতে গিয়েও একটু থমকে দাঁড়ায় একবার।

যাওয়ার আগে অন্তত পরিচিত হয়ে যেতে বাধা নেই নিশ্চয়ই? আমি ইফতি, হাসিব ইফতেখার। আপনি…?

থ্যাংক য়্যু ফর লিভিং মাই প্লেস। যাওয়ার আগে আপনার ফেলে যাওয়া সম্পদগুলো নিয়ে যাবেন দয়া করে।

মুখ ঘুরিয়ে কথাটা বলে সিঁড়িতে বসে পড়ে আফ্রা। নিজের নাম বলে এ রকম ছ্যাবলাদের সাথে আলাপ বাড়ানোর কোনো ইচ্ছেই নেই ওর। এদেরকে চেনা আছে খুব ভালো করে। প্রথমে নাম, তারপর খুচরো আলাপ টানবে। স্যরি-ট্যরি বলেছে তো, এবার সুযোগ দিলেই চুইংগামের মতো টানবে সেটা। লাস্টে চাইবে হোয়্যাটস অ্যাপ নম্বর নয় ফেসবুক আইডি। ফাজিল যত্তসব।

ছেলেটাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বইটা খুলে বসলো আফ্রা। ওর দিকে কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে রইলো ইফতি। সিগারেটের টুকরোগুলো অবশ্য কুড়িয়ে নিয়েছে মুঠোর মধ্যে। কোঁকড়া চুলের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে খুব হালকা একটা অবাক ভাব হাসি ফুটি ফুটিকরছে। আরেহ্! অদ্ভুত তো মেয়েটা! ইফতি এরকম কাউকে দেখেনি এর আগে।

                                                                                                                                                                     চলবে…

 

তওহিদ মাহমুদ হোসেন-১৯৭৭-এ জন্ম; বেড়ে ওঠা ঢাকার মিরপুরে। লেখালিখির হাতেখড়ি স্কুল ম্যাগাজিনে, এরপর লিটলম্যাগে। দীর্ঘ বিরতির পর নিয়মিত লিখছেন অন্তর্জালের বিভিন্ন সাহিত্যদলে, ব্লগ এবং ম্যাগাজিনে। শৈশব থেকেই বইপোকা। পড়ার ক্ষেত্রে প্রিয় ধারা রম্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, ভৌতিক, এবং থ্রিলার। লিখতে বেশি স্বচ্ছন্দ থ্রিলার এবং ভ্রমণকাহিনী। শখ আবৃত্তি এবং ফোটোগ্র‍্যাফি। পড়েছেন বুয়েটের পুরকৌশলে; এরপর আইবিএ-তে। আপাতত ব্যাংকে চাকরি করছেন। বিসিএস ক্যাডার শিক্ষিকা স্ত্রী এবং টিনএজার দুই ছেলেকে নিয়ে বর্তমানে বাস করছেন রাজধানীর নিকেতনে।
সংকলনে প্রকাশিত গল্প: পোস্টবক্স (২০১৮), রূপালী শব্দের জোছনারা (২০১৯), মলাটবদ্ধ আবেগ (২০১৯), অপারাজিত নিরানব্বই (২০১৯), এবং আনন্দ ভৈরব (২০২২)।
প্রথম একক গল্পগ্রন্থ: আদমখোরেরা এখানেও এসেছিল (২০২২)
Tags: চাতালতওহিদ মাহমুদ হোসেনদীর্ঘগল্পপ্রথম পর্ব
Previous Post

কবিতা।। দীপায়ন পাঠক

Next Post

কবিতা।। অমিতাভ দেব চৌধুরী

Chatal

Chatal

Next Post
কবিতা।। অমিতাভ দেব চৌধুরী

কবিতা।। অমিতাভ দেব চৌধুরী

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • About
  • Advertise
  • Privacy & Policy
  • Contact
বাংলামটর, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
ই-মেইল: [email protected]

© 2021 Chatalbd - Design & Developed By Developer Rejwan.

No Result
View All Result
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ

© 2021 Chatalbd - Design & Developed By Developer Rejwan.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In