Friday, May 9, 2025
  • Login
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ
No Result
View All Result
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ
No Result
View All Result
No Result
View All Result
Home বই আলোচনা

জ্ঞান না প্রজ্ঞা : একটি দার্শনিক বিতর্ক।। শেখ সুজন আলী

Chatal by Chatal
September 2, 2021
in বই আলোচনা
A A
0
জ্ঞান না প্রজ্ঞা : একটি দার্শনিক বিতর্ক।। শেখ সুজন আলী

 

যখন আমি ছোট ছিলাম, কিছু কিছু প্রশ্নে বা জিজ্ঞাসায় বিস্মিত না হয়ে পারতাম না! যেমন, উত্তর জানা না থাকলেও বন্ধুরা প্রশ্ন করত: ডিম আগে না মুরগি? আচ্ছা, কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবী কিংবা সৌরজগৎ? এই সৌরজগতের সৃষ্টিকর্তাই-বা কে? সৌরজগতের সৃষ্টিকর্তা যদি হয় ঈশ্বর তবে পাল্টা প্রশ্ন আসাটা খুব একটা অযৌক্তিক হবে না যে, ঈশ্বরকে কে সৃষ্টি করেছে? পৃথিবীতে মানুষের জন্ম হল কবে এবং কীভাবে? মানুষের মন কী? আর এই মন মহাশয় থাকেই বা কোথায়? জন্মের আগে মানুষ কোথাও কি ছিল? নাকি ছিল না? মৃত্যুর পর কি মানুষ কোথাও থাকবে? নাকি মৃত্যুর পর বলে কিছু নেই? এরকম সহস্র প্রশ্ন মানুষের মনে উঁকি দিলেও উত্তর খোঁজার প্রয়াস পেয়েছেন কিছু ব্যতিক্রমধর্মী চিন্তাশীল মানুষ, যাদের বুকে সিল দেওয়া হয়েছে দার্শনিকের। সৃষ্টিজগৎ কিংবা সৃষ্টি নিয়ে সাধারণ মানুষ বিস্মিত হলেও ততটা নয় যতটা একজন দার্শনিক। নরওয়েজীয় লেখক ইয়স্তাইন গোর্ডার (Jostein Gaarder) তাঁর বিখ্যাত বই ’সোফির জগৎ’ (Sofies Verden) এ বলেছেন, ’ভালো দার্শনিক হওয়ার জন্য একমাত্র যে জিনিসটি আমাদের প্রয়োজন তা হল বিস্মিত হওয়ার ক্ষমতা’। একথা অনস্বীকার্য যে, বর্তমান দুনিয়ার সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম, চিকিৎসা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ইত্যাদি শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট শিক্ষা-বৃক্ষটির মূল শেকড় প্রোথিত রয়েছে দর্শন ভূমিতে। আজকের শিক্ষা বৃক্ষটি যতটুকু পল্লবিত পুস্পিত হয়েছে তার সবটুকু কৃতিত্বই দর্শন ভূমির অমৃত জীবনীরসের। উপন্যাসের ঢঙে লেখা ’সোফির জগৎ’ ( অনুবাদ- জি এইচ হাবীব) বইটিতে লেখক দর্শন, দর্শন-ইতিহাস বিশেষ করে দর্শনের পাশ্চাত্য ইতিহাস এবং জগতে প্রভাব বিস্তারকারী দার্শনিকদের দর্শন-ভাবনা তুলে ধরেছেন। সেই দর্শন-সমুদ্র থেকে জ্ঞান-প্রজ্ঞা মৎস্য-তর্কটি ছেঁকে তোলার ক্ষুদ্র প্রয়াস এই লেখাটি।

আচ্ছা, জ্ঞান কী? আর প্রজ্ঞাই-বা কাকে বলে? একটি মানুষ তার জন্ম থেকে শুরু করে বর্তমান সময় অবধি আশপাশের পরিবেশ থেকে দেখে, শুনে এবং পড়ে নানাবিধ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে। এই সঞ্চিত অভিজ্ঞতার নির্যাসই হচ্ছে জ্ঞান যার সাহায্যে মানুষটি দৈনন্দিন জীবন-যাপন এবং নিজেকে পরিচালিত করে। প্রজ্ঞা হল জ্ঞানেরই উচ্চতর পর্যায়। প্রজ্ঞা মানুষের অর্জিত নানাবিধ জ্ঞানের নির্যাস। জ্ঞান-ভূমি থেকে রস টেনে টেনে নিয়ে যে বৃক্ষটি মহিরূহ হয়ে ওঠে তারই নাম প্রজ্ঞা। জ্ঞানের গর্ভেই প্রজ্ঞার জন্ম আবার প্রজ্ঞার সাহায্যেই জ্ঞান পরিমাপ করা হয়। এখন প্রশ্ন হল, প্রজ্ঞা কি কেবল বাস্তব জগৎ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান থেকেই আসে? প্রজ্ঞা মানুষের সহজাত নয় কি? নাকি তা আসে অন্য কোন জগৎ থেকে?

মানুষ স্বভাবতই চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে তাঁর পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে প্রত্যক্ষণ করে এবং প্রত্যক্ষণ প্রক্রিয়া শেষে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা থেকে ঘটনার ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু আপন ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষত বিষয়ের ব্যাপারেও সকল সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না বলে মনে করতেন সক্রেটিস-পূর্ব দার্শনিক পার্মেনিদেস (Parmenides, আনু. ৫৪০-৪৮০ খ্রি. পূ., ভেলিয়া, ইটালি)। কারণ তাঁর ধারণা, ইন্দ্রিয়গুলো আমাদের সামনে একটি ত্রুটিপূর্ণ ছবি তুলে ধরে আর সেহেতু ঘটনা প্রত্যক্ষণে বিভ্রম সৃষ্টি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। পার্মেনিদেস বলেছেন, ইন্দ্রিয়ের অভিজ্ঞতা নয় বরং প্রজ্ঞার সাহায্যেই সঠিক সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া যায়। মানুষের প্রজ্ঞার ওপর এই যে অটল আস্থা এটাকে বুদ্ধিবাদ (rationalism) বলে। যারা মনে করেন প্রজ্ঞাই জগৎ সম্পর্কে জ্ঞানলাভের প্রাথমিক উৎস তারাই বুদ্ধিবাদী। বুদ্ধিবাদীরা প্রজ্ঞাকেই জ্ঞানলাভের মূল উৎস হিসেবে মনে করেন। তারা বিশ্বাস করেন যে মানুষের মনে কিছু সহজাত ভাব রয়েছে এবং কোনো ধরনের বাস্তব অভিজ্ঞতার পূর্বেই এসব ভাবের জন্ম। মানুষের মনে এসব ভাব যতই স্বচ্ছ এবং স্পষ্ট হয়ে উঠবে ততোই তারা নিশ্চিত হবে যে ভাবগুলোর সাথে বাস্তবের একটা যোগ রয়েছে। যে সকল দার্শনিক বুদ্ধিবাদের ধারণা দেন পার্মেনিদেস ছিলেন তাঁদের অগ্রদূত। একথা বললে ভুল হবে না যে, প্রজ্ঞা জ্ঞানের অনেক অনেক উপরের একটি স্তর। এবং এই স্তরটি যে অনেকগুলো প্রজ্ঞা-স্তরের সমন্বয়ে তৈরী বা এই স্তরের পুরুত্ব যে অসীম সে ভাবনাকেও মিথ্যা ভেবে উড়িয়ে দেবার সুযোগ নেই। দার্শনিক হেরাক্লিটাস (Heraclitus, আনু. ৫৪০-৪৮০ খ্রি. পূ., তুরস্ক) তো মনে করতেন প্রজ্ঞাই ঈশ্বর। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের প্রজ্ঞা-মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন কাজেই হেরাক্লিটাস বলেছেন, ’নিশ্চয়ই কোনো এক ধরনের বৈশ্বিক প্রজ্ঞা রয়েছে যার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকৃতির সব কিছু ঘটে।’ জগতের প্রত্যেক জীব-জন্তু নিজস্ব প্রজ্ঞা দিয়েই নিজেকে পরিচালিত করে। ধর্মবিশ্বাসীদের মতে, জীব-জন্তুর জন্ম, মৃত্যু এবং জীবনের সকল কাজকর্ম নিয়ন্ত্রিত এবং পরিচালিত হয় ঈশ্বরের নির্দেশেই। সুতরাং এই বৈশ্বিক প্রজ্ঞাই যে ঈশ্বর হেরাক্লিটাসের এই বিশ্বাসটি গ্রহণযোগ্যতা পাবার যৌক্তিকতা রয়েছে।

’যে জানে যে সে কিছুই জানে না সে-ই সবচেয়ে জ্ঞানী।’ সক্রেটিস (Socrates, ৪৭০-৩৯৯ খ্রি. পূ., এথেন্স, গ্রীস) এই কথা বলে হয়তো এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, প্রত্যেক মানুষেরই জ্ঞানের একটা মজবুত ভিত্তি তৈরী হওয়া দরকার। মানুষের বিচারশক্তির ভেতরেই জ্ঞানের এই ভিত্তি রয়েছে বলে তিনি মনে করতেন। তিনি মনে করতেন মানুষের বিবেক-ই কেবল ন্যায় অন্যায়ের সঠিক বিচার করতে পারে। এথেন্সের সোফিস্টদের* মতে ন্যায়-অন্যায় একটি আপেক্ষিক বিষয়। তারা মনে করতেন ন্যায়-অন্যায়ের ধারণা সমাজ, রাষ্ট্র এবং প্রজন্মভেদে একেক রকম। সক্রেটিস কিন্তু সোফিস্টদের সাথে একমত হতে পারেননি। সক্রেটিস শাশ্বত ও পরম নীতির অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি মনে করতেন প্রজ্ঞা শাশ্বত এবং অপরিবর্তনীয় এবং মানুষ তাঁর প্রজ্ঞার সাহায্যে কোনটি ন্যায় আর কোনটি অন্যায় তা সমাধান করতে পারে। কাজেই একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, দার্শনিক সক্রেটিসও ছিলেন একজন বুদ্ধিবাদী।

* সোফিষ্ট (Sophist:) গ্রীক শব্দ যার অর্থ জ্ঞানী মানুষ এবং সকল বিষয়েই জানাশোনা আছে এমন ব্যক্তি। সোফিষ্টরা মূলত ছিলেন একদল ভাম্যমান শিক্ষক এবং দার্শনিক যারা খ্রিস্ট পূর্ব চতুর্থ এবং পঞ্চম শতাব্দীতে গ্রীসের বিভিন্ন উপনিবেশ থেকে এসে এথেন্সে অবস্থান করতেন। সোফিস্টরা এথেন্সবাসীদের দর্শন, বিজ্ঞান, গণিত, সঙ্গীত ইত্যাদি বিষয়ে অর্থের বিনিময়ে শিক্ষা দিতেন এবং এভাবে অর্জিত অর্থ দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করতেন।

বিশ্ব বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস তেমন কিছু লিখে রেখে যাননি। তবে তাঁর সুযোগ্য ছাত্র প্লেটো (Plato, ৪২৮-৩৪৭ খ্রি. পূ., এথেন্স, গ্রীস) শিক্ষক সক্রেটিসের দর্শন-চিন্তা লিখে যান। দার্শনিক প্লেটোর ভাবতত্ত্বকে (Theory of ideas) যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে বাধ্য হন এথেন্সবাসী। তিনি মনে করতেন, বাস্তবতার দুটো জগৎ রয়েছে: বস্তুজগৎ আর ভাব-জগৎ। প্রকৃতিতে আমরা যেসব জিনিস ইন্দ্রিয় দিয়ে স্পর্শ করি সেগুলোর অবস্থান হল বস্তুজগতে। আর এই বস্তুজগতের স্পর্শযোগ্য সকল জিনিসেরই একটা শাশ্বত এবং অপরির্তনীয় ’আকার’ রয়েছে ভাব-জগতে। জ্ঞানের অবস্থান বস্তুজগতে আর ভাব-জগতে প্রজ্ঞার। প্লেটোর বক্তব্য অনুযায়ী ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের সবকিছু খুবই ক্ষণস্থায়ী কাজেই এই ক্ষণস্থায়ী বা নিয়ত পরিবর্তশীল কোন জিনিস সম্পের্কে প্রকৃত জ্ঞানলাভ করা সম্ভব নয়। ভাব-জগতে যে ’আকার’ রয়েছে তা বুঝতে প্রজ্ঞার প্রয়োজন। এবং সে-সব বিষয়েই প্রকৃত জ্ঞানলাভ সম্ভব যে-সব বিষয় প্রজ্ঞা দিয়ে বুঝতে হয়। মানুষের সবগুলো ইন্দ্রিয়ই দেহের অংশ। এবং দেহটি বস্তুজগতের একটা জিনিস কাজেই ইন্দ্রিয়গুলোও। আর ইন্দ্রিয়গুলোর মাধ্যমেই মানুষ তথাকথিত জ্ঞান আহরণ করে। যে ইন্দ্রিয়গুলোর ওপরেই কোন আস্থা রাখা চলে না সে ইন্দ্রিয়গুলোর মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানের ওপর আস্থা রাখা বোকামী ছাড়া কিছুই না। প্লেটোর মতে মানুষের একটা আত্মা আছে যা শাশ্বত এবং এই অমর আত্মাটিই হল প্রজ্ঞার রাজ্য। আত্মা যেহেতু দেহ-নির্ভর বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় সেহেতু সেটির ওপর ভরসা করা চলে। এই আত্মার সাহায্যে ভাবজগতে অবস্থানরত বস্তুজগতের সকল জিনিসের আকার নির্ভুলভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। সুতরাং একথা বলা যায় যে, জ্ঞান হল প্রজ্ঞার অস্পষ্ট একটা ধারণা বা ছায়া মাত্র।

বুদ্ধিবাদের বিষয়ে সক্রেটিস এবং প্লেটোর সাথে একমত প্রকাশ করে দার্শনিক রেনে দেকার্ত (Rene Decartes, ১৫৯৬-১৬৫০ খ্রি., ফ্রান্স) বলেন, শুধুমাত্র প্রজ্ঞার সাহায্যেই বিশেষ কিছু জ্ঞানলাভ করা সম্ভব। আমাদের ইন্দ্রিয় কিংবা প্রাচীন বই-পত্তর কোন কিছুর ওপরই আমরা ভরসা করতে পারি না। যুগ যুগ ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের মধ্যে যে জ্ঞান বয়ে যাচ্ছে তার ওপর বিশ্বাস করার তেমন কোন কারণ নেই। বিশ্লেষণাত্মক জ্যামিতির জনক বলা হয় রেনে দেকার্তকে। তিনি গাণিতিক পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে তাঁর দর্শন চিন্তা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। দর্শনগত মতের সত্যতা প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছিলেন ঠিক সেভাবে যেভাবে গাণিতিক উপপাদ্য প্রমাণ করা হয়। জ্যামিতিক মাপজোকের জন্য যেমন প্রয়োজন স্কেল, কম্পাস তেমনি তিনি যে যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন তার নাম প্রজ্ঞা কারণ তিনি মনে করতেন একমাত্র প্রজ্ঞাই আমাদের নিশ্চিতি দিতে পারে। দার্শনিক প্লেটোও মনে করেছিলেন, ইন্দ্রিয়ের প্রত্যক্ষণ নয় বরং অঙ্ক এবং সংখ্যাগত অনুপাতকেই আমরা বেশি বিশ্বাস করতে পারি। দেকার্ত গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন যে, একজন দৈহিক মানুষের তুলনায় একজন চিন্তাশীল মানুষ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং এই চিন্তাশীল মানুষটি আমাদের ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষত বস্তুজগতের চেয়েও বেশি বাস্তব। বাস্তব জগতে নিখুঁত এমন কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। আবার আমরা যেহেতু নিখুঁত নই সেহেতু আমাদের মনে নিখুঁতত্বের ধারণা আসাটা অসম্ভব। কিন্তু দেখা যায় যে, নিখুঁত না হওয়া এবং বাস্তব জগতে নিখুঁত কোন কিছুর অস্তিত্ব না থাকা সত্বেও আমাদের মনে একটা নিখুঁত সত্তার ধারণা বিদ্যমান। দেকার্ত এখান থেকেই সেই সত্যটি খুঁজে পেয়েছেন যে, একটি নিখুঁত সত্তা অবশ্যই অস্তিত্বশীল। তিনি মনে করেন, এই নিখুঁত সত্তাটির ধারণাও এসেছে একটি নিখুঁত কোন সত্তার কাছ থেকে এবং সেই সত্তাটি হল ঈশ্বর। শুধুমাত্র জ্ঞান দিয়ে নিখুঁত কোন সত্তার অর্থাৎ ঈশ্বর সম্পর্কে কোন ধারণা পাওয়া সম্ভব নয় কারণ এই ধারণাটির অবস্থান প্রজ্ঞার রাজ্যে। দেকার্তের মতে প্রজ্ঞা এবং ঈশ্বরের ধারণা সহজাত।

’ঈশ্বরই সব, সবই ঈশ্বর। ঈশ্বর জগৎটাকে সৃষ্টি করেছেন সেটির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবার জন্য নয়। না, ঈশ্বরই হলেন জগৎ।’ যা প্রকৃতি, যা জগৎ তাই ঈশ্বর এমনই মত প্রকাশ করেছেন বারুচ স্পিনোজা (Baruch Spinoza, ১৬৩২-১৬৬৭ খ্রি., আমস্টার্ডাম, নেদারল্যান্ড)। স্পিনোজা রেনে দেকার্তের ঈশ্বর ভাবনাকে স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, একটি সত্তাই কেবল সম্পূর্ণত এবং কেবল সেই সত্তাই সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। সেই নিখুঁত সত্তা বা ঈশ্বর বা প্রকৃতি ছাড়া আর কোন কিছুই এরকম মুক্ত হতে পারে না। মানুষ যতই চেষ্টা করুক না কেন সে কখনোই ’স্বাধীন ইচ্ছা’ অর্জন করতে পারবে না। বাস্তব জগতের কোন অভিজ্ঞতার মধ্যেই ঈশ্বরের অস্তিস্ব নেই কাজেই স্পিনোজার ঈশ্বর চিন্তা জ্ঞান-সৃষ্ট হতে পারে না বরং তা শুধুই প্রজ্ঞাজাত।

এদিকে একদল দার্শনিক আছে যারা বুদ্ধিবাদীদের সাথে বিরোধিতা করে আসছে একেবারে দর্শনের সেই শুরু থেকেই। তারা মনে করেন ইন্দ্রিয়গুলোর সাহায্যে প্রত্যক্ষ করা হয়নি এমন কোনো কিছুই মানুষের মনের ভেতর নেই। আর এধরনের দৃষ্টিভঙ্গিকে বলা হয় অভিজ্ঞতাবাদ (empiricism)। অভিজ্ঞতাবাদীরা মনে করেন জাগতিক সমস্ত জ্ঞান আসে মানুষের ইন্দ্রিয়গুলো থেকে পাওয়া তথ্য থেকে। অভিজ্ঞাতাবাদের এই ধ্রুপদী ধারণাটি আসে খোদ অ্যারিস্টটল (Aristotle, ৩৮৪-৩২২ খ্রি. পূ., মেসিডোনিয়া, গ্রীস) এর কাছ থেকে। তিনি বলেন, ’মনের মধ্যে এমন কিছু নেই ইন্দ্রিয়গুলোতে যা প্রথমে ধরা পড়েনি।’  অ্যারিস্টটল ছিলেন প্লেটোর ছাত্র। সেই অ্যারিস্টটলই শিক্ষকের সমালোচনা করে বলেন প্লেটো পুরো ব্যাপারটা একদমই উল্টে দিয়েছেন। জগতের সবকিছুই পরিবর্তশীল এবং প্রত্যেক জিনিসেরই একটা শাশ্বত ও অপরিবর্তনীয় ’আকার’ রয়েছে একথা মেনে নিলেও এই শাশ্বত ’আকার’ যে সহজাত সেকথা তিনি মানতে পারেননি। তিনি বলেন বাস্তব জগতের যে-জিনিসের শাশ্বত আকার মানুষ মনের মধ্যে ধারণ করে তা একই প্রজাতির বেশ কিছু সে-জিনিস দেখার পর তার একটা শাশ্বত আকার মানুষের মনের মধ্যে সৃষ্টি হয়। অ্যারিস্টটলের মতে মানুষের মনের মধ্যে ঘোড়ার যে শাশ্বত আকার আছে তা তৈরী হয়েছে বাস্তব জগতের বেশ কিছু ঘোড়া দেখার পর এবং অনেকগুলো ঘোড়ার বৈশিষ্ট্যগুলোর সমন্বয়ে। ঘোড়া সম্পর্কে এই যে জ্ঞান সেটির ওপর ভিত্তি করেই আজকের যে অশ্ব ’প্রজাতি’ তার সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়েছে। অ্যারিস্টটলের বক্তব্য হল, মানুষ তার ইন্দ্রিয়গুলো দিয়ে যা প্রত্যক্ষ করে সেটিই সর্বোচ্চ স্তরের বাস্তবতা । মানুষের আত্মায় যে-সব জিনিস রয়েছে সেগুলো প্রকৃতিতে যে-সব জিনিস রয়েছে সেগুলোর প্রতিবিম্ব ছাড়া আর কিছুই না। অপরদিকে, প্লেটো বলেছিলেন সর্বোচ্চ স্তরের বাস্তবতা হল তাই যা মানুষ তার প্রজ্ঞা দিয়ে অনুভব করে। মানুষ প্রকৃতিতে যে-সব জিনিস দেখে সেগুলো ভাব জগতে বা মানুষের আত্মায় থাকা জিনিসগুলোর প্রতিবিম্ব। জন্ম থেকেই প্রকৃতির সমস্ত জিনিসেরই একটা শাশ্বত আকার মানুষের আত্মায় বিরাজমান। অ্যারিস্টটল বলেন, প্লেটো সেই পৌরাণিক জগতেই আটকে ছিলেন যে জগতে মানুষের কল্পনাগুলোকে বাস্তব বলে ভাবা হতো। তিনি স্বীকার করেন যে মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল প্রজ্ঞা তবে তাদের ইন্দ্রিয়গুলো কোনো কিছু প্রত্যক্ষ করার আগ পর্যন্ত প্রজ্ঞার ঘটে আসলে কিছুই জমে না। অতএব মানুষের যে সহজাত কোনো ’ভাব’ নেই সে ব্যাপারে তাঁর অবস্থান খুবই স্পষ্ট।

মানুষের ভেতরে ধারণাগুলো কোথা থেকে আসে এবং ইন্দ্রিয়গুলো যে-সব তথ্য দেয় সে-সব বিশ্বাসযোগ্য কিনা এসব ভাবনা ধরে এগিয়েছেন দার্শনিক জন লক (John Locke, ১৬৩২-১৭০৪ খ্রি., ইংল্যান্ড)। ১৬৯০ সালে প্রকাশিত তাঁর ’এসে কনসার্নিং হিউম্যান আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ বইতে ভাবনাগুলোর একটা সমাধান দেবারও চেষ্টা করেছেন তিনি। লক লিখেছেন, মানুষ ইন্দ্রিয়গুলোর সাহায্যে যে-সব জিনিস আহরণ করে সে-সব থেকেই মানুষের মনে একটা স্বতন্ত্র চিন্তা-চেতনা ধ্যান-ধারণা উদ্ভূত হয়। কোন কিছু প্রত্যক্ষ করার আগ পর্যন্ত মানুষের মনটা থাকে একটা ’শূন্য স্লেট’ কিংবা আসবাবপত্র রাখা হয়নি এমন একটা ফাঁকা কামরা। জন্মের পর থেকে শুরু করে মানুষ জগৎটাকে এক এক করে দেখে, গন্ধ নেয়, স্বাদ নেয়, স্পর্শ করে, শোনে। এভাবে প্রত্যক্ষণের মাধ্যমেই ফাঁকা কামরা বা ’শূন্য স্লেট’ পূর্ণ হতে থাকে। লকের মতে, আর এভাবেই জন্ম নেয় ইন্দ্রিয়ের সরল ধারণা (simple ideas of sense)। কোন বস্তু প্রত্যক্ষণের সময়ে মানুষ আসলে বস্তুটির ধারাবাহিক কিছু ’সংবেদন’ লাভ করে যেমন আকার, রং, স্বাদ, গন্ধ ইত্যাদি। একই সাথে মানুষের মন একের পর এক আসা সংবেদনগুলোকে শ্রেণিবিন্যাস এবং প্রক্রিয়াজাত করে যেটিকে তিনি বলেছেন ’অনুচিন্তন’। অর্থাৎ লক মনে করেন জাগতিক কোন কিছুর বিষয়ে জ্ঞানলাভ ’সংবেদন’ এবং ’অনুচিন্তন’ এই দুইভাবে হয়ে থাকে। তিনি বলেন মানুষ জাগতিক জ্ঞানের উপাদানগুলো সংবেদনের মাধ্যমেই পেয়ে থাকে সুতরাং যে-জ্ঞানের মূলে কোন সরল সংবেদন নেই সে-জ্ঞান মিথ্যা জ্ঞান এবং তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। ’ঈশ্বর অস্তিত্বশীল’ দার্শনিক দেকার্ত এই বিষয়ে যে নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন লকের বক্তব্যে সে বিষয়ে সন্দেহ সুস্পষ্ট। ভাব যেহেতু সহজাত নয় কাজেই মানুষের মনে যদি এমন কোন ভাব থেকে থাকে যার সঙ্গে বাস্তব জগৎ থেকে অভিজ্ঞতালব্ধ কোনো তথ্যের সম্পর্ক নেই তাহলে সে ভাব মিথ্যা। কাজেই, যেহেতু জগতে কারও অভিজ্ঞতাতেই ঈশ্বর নেই তাই ’ঈশ্বর অস্তিত্বশীল’ একথা বলাটা প্রজ্ঞার অপব্যবহার মাত্র।

পৃথিবীতে যে ক’জন অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক এসেছেন ডেভিড হিউম (David Hume, ১৭১১-১৭৭৬ খ্রি., ইংল্যান্ড) ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি মানুষকে স্বতঃস্ফূর্ত অভিজ্ঞতার কাছে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, কোনো দার্শনিকই ’কখনো আমাদেরকে দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার পেছনে নিয়ে যেতে পারবেন না, বা এমন কোনো আচরণবিধি প্রদান করতে পারবেন না যা আমরা দৈনন্দিন জীবনের অনুচিন্তন থেকে পাই না।’ তিনি একথা বোঝাতে চেয়েছেন যে, একজন মানুষ একই সাথে ইন্দ্রিয় সংবেদন এবং ভাব নামে দুটো ভিন্ন প্রত্যক্ষণ এর অধিকারী। বাহ্যিক বাস্তবতার প্রত্যক্ষ সংবেদনকে ’ইন্দ্রিয় সংবেদন’ আর ’ভাব’ বলতে তিনি ইন্দ্রিয় সংবেদনের অনুস্মৃতিকে বুঝিয়েছেন। আসলে ইন্দ্রিয় সংবেদনটিই মনের ভেতর সংরক্ষিত ভাবটির প্রত্যক্ষ কারণ। হিউমের ভাষায়, মন ’এক ধরনের থিয়েটার যেখানে অসংখ্য প্রত্যক্ষণ একের পর এক আভির্ভূত হয়; আসে, আবার আসে, পিছলে যায়, বিন্যাস আর অবস্থার এক অন্তহীন বৈচিত্রে মিশে যায় একে অন্যের সঙ্গে।’ ঈশ্বর প্রশ্নে অভিজ্ঞতাবাদী লক যেখানে দেকার্তের দর্শনের বিরোধিতা করছেন সেখানে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই সেই প্রমাণ খোঁজার কোনো চেষ্টাই করেননি হিউম। এব্যাপারে তাঁর বক্তব্য ছিল খুবই স্পষ্ট। তিনি বলেন, ধর্ম এবং ঈশ্বর এদুটোই বিশ্বাস সংক্রান্ত বিষয় কাজেই ধর্মীয় বিশ্বাসকে মানবীয় প্রজ্ঞা দিয়ে প্রমাণ করতে যাওয়াটা হবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাওতাবাজি।

অভিজ্ঞতাবাদ দর্শনকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে সবাইকে একেবারে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন আইরিশ দার্শনিক জর্জ বার্কলে (George Berkeley, ১৬৮৫-১৭৫৩ খ্রি., আয়ারল্যান্ড)। তিনি বলেন, জগতে কেবল সে-সব জিনিসেরই অস্তিত্ব আছে যে-সব জিনিস মানুষ ইন্দ্রিয়গুলো দিয়ে প্রত্যক্ষ করে। তবে যা প্রত্যক্ষ করে তা কোনো ’উপাদান’ বা ’বস্তু’ নয়! কোনো জিনিসকেই মানুষ স্পর্শযোগ্য জিনিস হিসেবে প্রত্যক্ষ করে না। মানুষ যে-সব জিনিস প্রত্যক্ষ করে সেগুলোর নিজস্ব ভিত্তিস্বরূপ ’সারবস্তু’ আছে বলাটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। কারণ এধরনের দাবি করার মতো কোনো অভিজ্ঞতাই মানুষের নেই। তাহলে মানুষ প্রতিনিয়ত যে-সব জিনিস প্রত্যক্ষ করে সেগুলো আসলে কী? বার্কলের মত অনুযায়ী মানুষ যা কিছুই দেখে, অনুভব করে, স্পর্শ করে তার সবই ’ঈশ্বরের শক্তির একটা প্রকাশ।’ কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, ঈশ্বর ’আমাদের চেতনায় খুবই প্রবলভাবে উপস্থিত আর প্রতিনিয়ত আমরা যে অসংখ্য ধারণা আর প্রত্যক্ষণের মুখোমুখি হচ্ছি সেগুলো সে-কারণেই অর্থাৎ আমাদের চেতনায় ঈশ্বরের প্রবল উপস্থিতির কারণেই সম্ভব হচ্ছে।’ মানুষের জীবন এবং চারপাশের সমস্ত জগৎ রয়েছে ঈশ্বরের ভেতরেই। যা কিছু অস্তিত্বশীল তার একমাত্র কারণ তিনি-ই। মানুষ শুধু রয়েছে ঈশ্বরের মনের মধ্যে।

প্রজ্ঞা না জ্ঞান অথবা বুদ্ধিবাদ না অভিজ্ঞতাবাদ, পৃথিবীর দার্শনিকেরা যখন এই দুই দৃষ্টিভঙ্গিতে বিভক্ত, বিতর্কে লিপ্ত ঠিক তখন মডারেটরের ভূমিকায় আসেন দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট (Immanual Kant, ১৭২৮-১৮০৪ খ্রি., জার্মানি)। তিনি বলেন দুটো দৃষ্টিভঙ্গি-ই আংশিক সঠিক এবং আংশিক ভুল। জগৎ সম্পর্কে আমাদের ধারণায় ইন্দ্রিয়গুলোর সাহায্যে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা দুটোরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অভিজ্ঞতাবাদীদের মতে জগৎ সম্পর্কে মানুষের যাবতীয় জ্ঞানের একমাত্র উৎস হল ইন্দ্রিয়গুলোর সাহায্যে প্রত্যক্ষণলব্ধ অভিজ্ঞতা। কিন্তু বুদ্ধিবাদীরা বলে, না অভিজ্ঞতা নয় সেই একমাত্র উৎসটি হল প্রজ্ঞা এবং যা মানুষের সহজাত। অভিজ্ঞতাকে জ্ঞানের উৎস মেনে নিয়ে কান্ট দাবি করেন মানুষের প্রজ্ঞার মধ্যে এমন কিছু নিস্পত্তিমূলক উপাদান আছে যা মানুষ তার চারপাশের জগৎটাকে কীভাবে প্রত্যক্ষ করবে তা নির্ধারণ করে দেয়। কাজেই অভিজ্ঞতা বা প্রজ্ঞা কোনোটিই এককভাবে জগৎ সর্ম্পকে সম্পূর্ণ ধারণা দিতে পারে না। সম্পূর্ণ ধারণা আসে কেবল এ দুটোর সমন্বয়েই। কান্ট বলেছেন, কেবল মানুষের মন-ই ঘটনার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয় না, প্রত্যক্ষণও মনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে যখন বুদ্ধিবাদ আর অভিজ্ঞতাবাদের মধ্যে তর্ক চলছিল তখন কান্ট দাবি করেন, প্রজ্ঞা কিংবা অভিজ্ঞতা কোনোটিই ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে নিশ্চিত ভিত্তি নয়। তাঁর মতে, প্রজ্ঞা এবং অভিজ্ঞতা দুটোই যখন ব্যর্থ হয় তখন একটি শূন্যস্থান সৃষ্টি হয় আর সেই শূন্যস্থান পূরণ করা হয় বিশ্বাস (faith) দিয়ে।

’বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।’ একথা বিশ্বাস করে অনেকেই বলেন, সন্দেহে সৃষ্টি হয় সমস্যা। কাজেই বিশ্বাস করে যাও। ’সন্দেহ না-করাই মঙ্গল’ হল তাদের পরামর্শ।  প্রকৃতপক্ষে বাস্তবতা সে কথা স্বীকার করে না। এমনকি সে কথা মানতে নারাজ জ্ঞানী এবং প্রজ্ঞাবানরাও। সমস্যাইতো সমাধানের পথ সৃষ্টি করে। আর প্রতিটি সমাধান হল অগ্রগতি-সিঁড়ির এক-একটি মূল্যবান সোপান। আজকের এই পৃথিবী সন্দেহাতীতভাবে সন্দেহজাত সমস্যা সমাধানের সোনালি ফসল। একটু গভীরভাবে তাকালে খুবই স্পষ্ট দেখা যায় যে, কেবল পৃথিবীর উন্নতিতে নয় পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনেও সন্দেহের অবদান অনস্বীকার্য। সন্দেহ সম্পর্ককে সুসংহত করে। তবে শর্ত থাকে যে সন্দেহ দূর করার চেষ্টা করতে হবে এবং তা করতে হবে বাস্তবতার আলোকে, জ্ঞান এবং প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে। মানুষের চলার সবগুলো পথই সন্দেহ ঢালাইয়ে তৈরী নয় কি? সন্দেহ-পায়ে ভর দিয়ে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই হেঁটে চলে না? ঈশ্বর আছে অথবা নেই! আমরা কি মানুষ? ঈশ্বর কি মানুষ সৃষ্টি করেছে না মানুষ ঈশ্বরকে? ’জীবন একটি স্বপ্ন’ আর পৃথিবীটা স্বপ্নের জগৎ! কোনটি সত্য- জ্ঞান, প্রজ্ঞা নাকি বিশ্বাস?  নাকি কোনটাই নয়? এ রকম হাজারো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে, হাজারো সন্দেহ ধরে তর্ক-বিতর্ক করতে করতে দার্শনিকেরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীকে শতাব্দী থেকে শতাব্দীতে। আমরা বাংলাদেশীরা, বর্তমানে কেউই আমাদের পা খুঁজে পাচ্ছি না, পাচ্ছি না পথও। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাম্প্রদায়িক চোরাবালির দিকে তাকিয়ে আছি শুকনো চোখে। আমরা শুধু সেই-সব প্রশ্নই করি যে-সব প্রশ্নের উত্তর অনেকেরই মুখস্থ। এখানে তর্ক-বিতর্কের ছোট্ট প্রান্তরটির চারিধারেও বসানো হয়েছে কাঁটা তারের বেড়া।  আমাদের উচিৎ হবে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা যে পরিবেশ বিতর্ককে উস্কে দেয়; সেই প্রশ্নটির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠা যে প্রশ্নটির উত্তর পৃথিবীতে এখনো অজানা; সেই সন্দেহটির প্রতি আকৃষ্ট হওয়া যে সন্দেহটি নতুন আর একটি সন্দেহ সৃষ্টির যোগ্যতা রাখে।

 

শেখ সুজন আলী-শিক্ষক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।
Tags: ইয়স্তান গোর্ডারবই আলোচনাশেখ সুজন আলীসোফির জগৎ
Previous Post

বেয়ারিং চিঠি।। ফৌজিয়া খাতুন রানা

Next Post

কবিতা।। মুহাম্মদ রফিক ইসলাম

Chatal

Chatal

Next Post
কবিতা।। মুহাম্মদ রফিক ইসলাম

কবিতা।। মুহাম্মদ রফিক ইসলাম

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • About
  • Advertise
  • Privacy & Policy
  • Contact
বাংলামটর, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
ই-মেইল: [email protected]

© 2021 Chatalbd - Design & Developed By Developer Rejwan.

No Result
View All Result
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ

© 2021 Chatalbd - Design & Developed By Developer Rejwan.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In