Friday, May 9, 2025
  • Login
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ
No Result
View All Result
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ
No Result
View All Result
No Result
View All Result
Home অনুবাদ সাহিত্য

একটি পার্সিয়ান রূপকথা।। মায়াবী বিড়াল।। অনুবাদ : মোস্তাফিজুল হক

Chatal by Chatal
May 31, 2021
in অনুবাদ সাহিত্য
A A
0

সুদূর পূর্বপার্সিয়া সীমান্তে এক সময় বিশাল এক রাজ্য ছিল। সেই রাজ্যের উত্তম শাসক ছিলেন সুলতান আবু হাফিজ। রাজ্যটা ছিল সুফলা আর ধনসম্পদ ও বাণিজ্য সমৃদ্ধ। রাজ্যের প্রজারা ছিল সুখী মানুষ।

হ্যাঁ, রাজ্যের প্রায় সবাই সুখে আর আনন্দে থাকলেও একমাত্র দুখী ব্যক্তি সুলতান নিজেই! তিনি দুখীর চেয়েও বেশি দুখী। তিনি তাঁর জাঁকালো রাজবাড়ির দেহলিতে হাঁটতেন আর সাজানো বাগান এড়িয়ে যেতেন। তিনি কখনও হাসতেন না। এমন কি দৃষ্টিনন্দন ঝর্ণার স্বচ্ছজল বা সোনালি মাছ দেখেও না।

যেদিন তাঁর সুন্দরী সুলতানা আরিজাদকে মৃত অবস্থায় বাড়িতে আনা হল সেদিন থেকে প্রিয় সুলতান আবু হাফিজ কখনই হাসেননি।

সুলতানা একদিন তাঁর সাথীদের সাথে হাঁটতে বের হলেন। তিনি যখন রাজবাড়ির বাগানের একেবারে গেইটের কাছে এলেন, তখন এক বিশাল দানব তাঁর পথরুদ্ধ করলো। ফলে সুলতানা এতটাই ভয় পেলেন যে, তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন! তিনি আর চেতনাই ফিরে পেলেন না। বিশ্বস্ত বাদীরা তাদের প্রিয় সুলতানার হুঁশ ফিরে পেতে যথাসাধ্য চেষ্টাও করল। তবে তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হল। মিতাচারী সুলতানা মারা গেলেন। তারা সুলতানের কাছে সুন্দরী সুলতানার মৃতদেহ বয়ে নিয়ে এলো।

সুলতান হতাশায় তাঁর দাড়ি ছিঁড়লেন আর দাফনের কাপড় কেনালেন। তিনি তাঁর দরবারকে শোক পালনের নির্দেশ দিলেন। এরপর বেশ কয়েক মাস ধরে কেউ সুলতানের প্রিয়মুখ দেখেননি। বেশ কিছুদিন পর রাজকীয় ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর মনোযোগ দেওয়া দরকার মনেকরে তিনি আবার দরবারে হাজির হলেন। তিনি তাঁর চিরচেনা নরম ও দয়ালু মনোভাব নিয়ে গরিব প্রজাদের দাবি শুনতে লাগলেন। তবে তাঁকে আর হাসিখুশি দেখা যায় না। এমন কি তাঁর ছোট ছেলেটাও কখনোই তাঁকে হাসতে দেখেনি।

শেষাবধি তাঁর এই অবসাদ গভীর থেকে আরও গভীরতর হতে থাকলো। তাঁর প্রজারা ভয় পেতে শুরু করলেন। শেষ পর্যন্ত এই শোকই সুলতানের মৃত্যুর কারণ হয় কি না! তাই ভয়ানক উদাসীনতা থেকে তাঁকে মুক্ত করার জন্য তাঁর মন্ত্রীরা সভার আয়োজন করলেন। সভায় সিদ্ধান্ত হল, সুলতানের কাছে প্রধান উজির বিন আহমেদ দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবেন।

দুই-একদিন পর উপযুক্ত সময়ে বিন আহমেদ সুলতানকে কুর্নিশ করে বললেন,

“জাঁহাপনা, ক্ষমা করুন। আপনার উপর আস্থা রেখেই বলছি, আপনার এখন শোক ভুলে যাবার সময় হয়েছে। আপনার এই অসীম শোকের কারণে সমস্ত প্রজার হৃদয় ব্যথিত। এর প্রভাব পুরো জাতির উপর পড়তে পারে। রাজ্যে আনন্দ নেই। এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্যও স্থবির। জাঁহাপনা, আপনার শোকমুক্ত হওয়া একান্ত জরুরি। অতএব, রাজ্যের সমস্ত প্রজার পক্ষে সবিনয়ে প্রার্থনা করছি, আপনি আবার পরমাসুন্দরী এক রাজকন্যাকে বিয়ে করুন। যিনি আপনাকে আনন্দে উৎফুল্ল করে শোকমুক্ত করবেন।”

বলাবাহুল্য, প্রথমে সুলতান প্রস্তাব নাকচ করলেন। অবশেষে তাঁর প্রজাদের কথা ভেবে তিনি আবারও বিয়ে করতে রাজি হলেন। তবে কনেকে সুলতানার মতো সুন্দরী ও গুণবতী হতে হবে। সুতরাং উজির তাঁর সুলতান আবু হাফিজের সুলতানা হতে যোগ্যতা রাখে এমন ললনাকে খুঁজে বের করার জন্য কাছের ও দূরের দেশে দূত পাঠালেন। শেষে বহুদূরের দেশ ঘুরে এক দূত এমন এক রাজকন্যার দেখা পেলেন, যিনি তাঁর রূপে, ঐশ্বর্যে ও প্রজ্ঞায় সুবিখ্যাত। তিনি যুদ্ধে নিহত এক যুবরাজের বিধবা পত্নী। যিনি কি না আবু হাফিজের সুলতানা ও তাঁর ছেলের সৎমা হওয়ার উপযুক্ত।

তবে এ বিয়েতে কিছুটা বিপত্তিও আছে। রাজকন্যার আগের তরফের একটি ছেলে রয়েছে। যাকে তিনি ছাড়তে রাজি নন। এদিকে চিঠিতে দূত সুলতানের কাছে পাত্রীর অপূর্ব সৌন্দর্য, মায়াবী কণ্ঠ, বিচক্ষণতা আর সদাচরণের এক অতুল্য বর্ণনা দিয়েছিলেন। অবশেষে সুলতান কনেকে তাঁর সুলতানা হিসেবে গ্রহণ করতে রাজসিক নিয়মে অনুরোধ জানানোর ইচ্ছে প্রকাশ করলেন। তিনি এক হাজার দূতকে ব্যয়বহুল উপহারসহ কনের রাজ্যে পাঠালেন। পুত্রসহ রাজকন্যাকে বয়ে আনতে রাজ্যের তিন শয়ের অধিক সেরা ও সাহসী সৈন্য দিয়ে গার্ড অব অনারের ব্যবস্থা করলেন। রাজপ্রাসাদে এক জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজনও হল। বিয়ে উপলক্ষে পুরো নগরী সুসজ্জিত করা হল। রাজকন্যাকে স্বাগত জানাতে দারুণ এক ভোজের আয়োজন করা হল।

সুলতান তাঁর উজিরকে নগরের প্রবেশ পথে অভ্যর্থনার দায়িত্ব দিলেন আর তিনি নিজেই রাজবাড়ীর প্রবেশ পথে কনেকে স্বাগত জানালেন। দূত রাজকন্যার যে বর্ণনা দিয়েছিলেন, তিনি তারচেয়েও বেশি শালীন আর অতুল্য সুন্দরী। সুলতান আবু হাফিজ খুবই বিমোহিত হলেন। হাত ধরে তিনি তাঁকে ভোজসভায় নিয়ে গেলেন। তাঁকে সিংহাসনের পাশে সোনার চেয়ারে বসালেন। তাঁর কথা বলার ধরন রূপলাবণ্যকেও হার মানায়। নতুন সুলতানা তাঁর মধুর কণ্ঠস্বর আর বেশ নির্ভুল ও বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনায় সবাইকে মাতালেন।

তিনদিন ধরে এই উৎসব চলল। নতুন সুলতানার সম্মানে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও জমজমাট উৎসব শেষ হল।  অতিথিরা বাড়িতে ফিরে যাবার পর সালতানাতে আবার স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হল।

নতুন সুলতানা তাঁর মনের অজান্তেই অকালপ্রয়াত সুলতানার পদাধিকারী হলেন। মহৎ সুলতান আবু হাফিজের দরবার ও রাজ্যের ওপর সীমাহীন প্রভাবের অধিকারীও হলেন।

নতুন সুলতানা অত্যন্ত গর্বিত। তবে তিনি খুব উদার হলেও অতিথিদের ভালোবাসা অর্জন করতে পারলেন না। তার লাস্যময় রূপের মুগ্ধতা হ্রাস পেল। প্রজারা খেয়াল করল, তাদের নতুন রানি ধীরে ধীরে নিজের ছেলের প্রভাব বাড়াতে চাইছেন। সিংহাসনের দাবিদার ন্যায়ত সুলতানপুত্র সুদর্শন যুবরাজের। রাজকর্মচারী আর প্রজাদের ধারণা, যুবরাজ তাঁর বাবার ন্যায়বিচার ও প্রজ্ঞার অনুসারী হবেন।

সুলতানের ছেলের জনপ্রিয়তায় সুলতানা খুব ঈর্ষা করতে লাগলেন। আবু হাফিজের অজান্তে রাজপুত্রকে বিপদে ফেলতেও যুগপৎ চেষ্টা চালালেন। যুবরাজ সবসময়ই তাঁর বাবার সাথেই থাকেন। ফলে বিশ্বাসী ও একনিষ্ঠ দেহরক্ষী দ্বারা বেষ্টিত থাকায় তাঁকে আঘাত করাটা প্রায় অসম্ভবই।

একসময় সুলতান বুড়ো হয়ে গেলেন। তিনি তাঁর রাজ্যের দায়দায়িত্ব পালনে অপারগ হয়ে পড়লেন। তাই একদিন তিনি তাঁর স্ত্রী ও পুত্রকে ডেকে কাছে বসালেন। তিনি তাঁদের জানালেন যে, তিনি শাসন ক্ষমতা ছেড়ে দেবার জন্য নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করেছেন। তিনি চান সালতানাতের উত্তরাধিকারী যুবরাজকে খুব শীঘ্রই বিয়ে করাবেন। পাত্রী হতে হবে তাঁর মায়ের মতোই সুন্দরী। যাতে করে যুবরাজ সময়ের সেরা জ্ঞানী ও ন্যায়নিষ্ঠ শাসক হয়ে উঠতে পারেন।

এই পরিকল্পনা সুলতানার ধারণার সাথে মিলল না। অল্পবয়সী যুবরাজ আল হাফিজ যদি একবার সিংহাসন আরোহন করেন, তবে তাঁকে গদি থেকে নামানো খুবই কঠিন ও প্রায় অসাধ্যই।

সে রাতেই সুলতানা ও তাঁর পুত্র বিন হারুন তাঁদের ইচ্ছে পূরণ করতে দীর্ঘ আলোচনা করলেন। যুবরাজ আল হাফিজ এই ফাঁকে দরবারে এক মিষ্টি কনেকে নিয়ে হাজির হলেন। কিছুদিন হল তিনি তাঁর প্রেমে পড়েছেন।কনে পছন্দ হওয়ায় সুলতান বিয়ের সম্মতি দিলেন। তিন দিনের ভেতর তাঁদের বিয়ে হয়ে গেল।

বিয়ের পর আবু হাফিজ সিদ্ধান্ত নিলেন আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর ছেলেকে রাজমুকুট পরিয়ে দিয়ে স্ত্রী ও সৎ ছেলেকে নিয়ে অবসরে যাবেন। অবসরে গিয়ে তিনি সাধারণ জীবনযাপন করবেন।

এ যে অত্যন্ত সংকটময় মুহূর্ত! তাই সুলতানা ও বেন হারুন সুলতানের এই ইচ্ছে বাতিলের শপথ নিলেন।

সেইরাতে প্রাসাদের সবাই যখন গভীর ঘুমে, তখন তারা বাইরে চলে গেলেন। সুলতানার বিশ্বস্ত অনুচর দূরপ্রাচ্যের বিখ্যাত জাদুকর আব্রাদুজকে নিয়ে এসেছে। তাঁরা তার সাথে পরামর্শ করলেন।

তাঁরা দেখলেন, আব্রাদুজ গুহার ভেতরে অদ্ভুত পেয়ালায় জাদুর মিশ্রণ তৈরি করছে। তার মাথায় উঁচু টুপি আর বেশ লম্বা দাড়ি। তিনি যেখানে বসেছেন তার চারপাশের মাটিতে লম্বা দাড়ি ছড়িয়ে পড়েছে।

জাদুকর চোখ না তুলেই সুলতানাকে বললেন,

“আমি জানি আপনি কী চান। আর এটাও জানি যে, আজ রাতে এখানে কেন এসেছেন। যুবরাজ হাফিজকে খতম করতে চান। আমি তা করতে পারব না। জাদুবলে হত্যা করা যায় না। তবে অনেক কিছুই করা যায়।”

সুলতানার চোখ রাগে জ্বলজ্বল করছে। তিনি বললেন, “আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আমি তাঁকে হত্যা করার জন্য আপনাকে আদেশ করছি। যদি মন্ত্রবলে তাঁকে হত্যা করা না যায়, তবে আমার এই ধারালো খঞ্জরের আঘাতে আপনার প্রাণ যাবে।”

বুড়ো বলল, “আমি ওসবে ভয় পাই না। তবে আপনাকে সাহায্য করব। কারণ আপনারা সবাই আমার সাথে ভালো আচরণ করেছেন। আর আমি জানি, যুবক রাজকুমার জাদুকরদের ঘৃণা করেন। তিনি একবার সুলতান হয়ে গেলে সম্ভবত আমাদেরকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবেন। কিন্তু আমি তাঁকে মেরে ফেলতে পারি না। সে ক্ষমতা নেইও। যাহোক, আমার কাছে একটি মিশ্রণ আছে। সেই মিশ্রণটার ওটার একফোঁটা যুবরাজের চলার পথে রাখতে হবে। তিনি চলাফেরা করতে গিয়ে তাতে পা ফেললেই কালো বেড়ালে পরিণত হবেন। মনে রাখবেন, একটা বেড়ালকে সহজেই শেষ করা যায়। তবে এটাও মনে রাখবেন, প্রতি অমাবস্যার রাতে আমার শক্তি ফুরিয়ে যায়। ফলে সেসব রাতে রাজকুমার ছয় ঘণ্টার জন্য তার মানবরূপ ফিরে পাবেন। সুতরাং, আপনাকে পরিকল্পনায় সাবধানী হতে হবে। তবে, একবার বেড়াল মারা গেলে কেউই জানতে পারবে না, এই কাজে কারা ভূমিকা রেখেছিল।”

কথা শেষে প্রবীণ জাদুকর লম্বা রশি বের করলেন। তা দিয়ে একটা খুলির চারপাশে মায়াচক্র গড়লেন। এবার তিনি বৃত্তের ভেতরে কিছু কালো তরল পদার্থ ঢেলে দিলেন। তিনি তার মন্ত্র পড়া শুরু করলেন। সুলতানা ও তাঁর পুত্র গভীর কৌতূহল নিয়ে তা দেখছেন। তিনি জাদুর বুলি আওড়ে তরল বস্ততে ব্যাঙের পা, ডোরাকাটা সাপের চামড়া, হাঙরের দাঁত ও পঙ্খীরাজ ঘোড়ার শিঙের গুঁড়ো মেশালেন। মেশানো শেষ হলে তিনি খুলিটি সুলতানার হাতে তুলে দিলেন। সুলতানা মূল্যবান বস্তুটা তাঁর প্রাসাদে নিয়ে গেলেন।

গভীর রাত। প্রাসাদে কেউই নেই। সুলতানা আর ধৈর্য্য ধরতে পারলেন না। তিনি কালো গাউনে নিজেকে ঢেকে যুবরাজ আল হাফিজের দরজার কাছে গেলেন। যদিও দু’জন বিশ্বস্ত নিগ্রো দ্বার পাহারায়, যাতে কেউ তাদের মালিকের ঘরে ঢুকতে না পারে। অবশ্য ওরা দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়েছিল। সুলতানা সতর্কতার সাথে খুলির কিছু মিশ্রণ চৌকাঠের ওপর দ্রুত ঢেলে দিয়ে চুপিসারে নিজের ঘরে চলে এলেন।

পরদিন প্রাসাদের সবাই গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় হতবিহ্বল। কারণ যুবক যুবরাজ আল হাফিজ নিখোঁজ! পৃথ্বী যেন তাঁকে গ্রাস করে ফেলেছে! তাঁর দুজন নিগ্রো দাস দৃঢ়তার সাথেই বলল, কেউই সে রাতে তাঁর ঘরে ঢুকেনি। তবে তাঁরা তাঁকে ঘর থেকে বের হতে দেখেছিল। তারপরের কী ঘটেছিল, তার সঠিক বিবরণ দিতে পারলো না। তরুণ যুবরাজের কোনও খোঁজ নেই! ধরে নেওয়া হল, তিনি একেবারেই নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন। সমস্ত রাজ্যে অনুসন্ধান চালানো হল। এমনটা কী করে হয়? সালতানাতের তরুণ উত্তরাধিকারী অদৃশ্য হয়ে গেল! সুন্দরী যুবরানি আর সুলতান শোকে পাগলপ্রায়! কিছুতেই কেউ তাঁদের সান্ত্বনা দিতে পারছেন না। প্রাসাদে প্রথম সুলতানার মৃত্যুর চেয়েও বেশি শোক নেমে এলো!

এতকিছুর পরও অসহায় সুলতানের একমাত্র আনন্দের বিষয় হল এক অদ্ভুত সুন্দর কালো বেড়ালের প্রতি স্নেহ। যা কি না যুবরাজের অন্তর্ধানের পর থেকেই প্রাসাদে ঢুকেছে। সেই মায়াবী বেড়ালটা তাঁর হাঁটুর উপর কয়েক ঘণ্টা বসে থাকে। চোখ বড় করে কী যেন এক অনুযোগ নিয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে। সুলতান বেড়ালের নরম পশমে হাত বুলান। কেন জানি ওটাকে দেখলেই তাঁর হারানো ছেলের কথা মনেপরে যায়।

সুলতানা সংগত কারণেই এতে খুশি নন। অমাবস্যার রাত দ্রুত এগিয়ে আসছে। নিশ্চয়ই বেড়ালটাকে তার আগেই মুক্ত করতে হবে। কাজটাও খুবই কঠিন। সুলতান যে বেড়ালকে তাঁর চোখের আড়ালে যেতে দেন না। এটি দিনের বেশিরভাগ সময় তাঁর হাঁটুতেই বসে থাকে। রাতে বিছানায় তাঁর পায়ের কাছেই শুয়ে থাকে।

এক রাতে সবকিছুই যেন সুলতানার অনুকূলে। সেই রাতে যেমন গরম পড়েছিল, তেমনি ঘুটঘুটে আঁধার নেমেছিল। ছেলে নিখোঁজের পর থেকে সুলতান অস্থিরতায় রাত কাটান। তাই তাঁকে সুস্থ রাখতে ঘুমের ওষুধ খেতে করতে রাজি করানো হল। সুলতানা প্রাসাদ নীরব না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। তারপর চুপিচুপি সুলতানের খাটের পাশে গেলেন। এরপর ঘুমন্ত সেই বেড়ালের মাথা একটা মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেললেন। হায়, ছোট্ট বেড়াল! সে কার হাতে পরেছে তা বুঝেই লড়াই করতে চেষ্টা করল। পাজি সুলতানা তাড়াতাড়ি জানালার কাছে ছুটে গেলেন। তিনি উপর থেকে সতর্কতার সাথে প্রাসাদের বাইরের চত্বরটা দেখে নিলেন। এরপর বেড়ালের পা চেপে ধরে চৌকাঠ পেরিয়ে দূরের দিঘিতে ফেলে দিয়ে এলেন।

সুলতানা বেড়ালের মিউমিউ আর জলের ঝাপটানি শুনেও বাইরে তাকানোর সাহস পেলেন না। বরং চুপচাপ শুয়ে পড়লেন। তিনি পরদিন সকালে খুশিমনে ঘুম থেকে উঠলেন। ভাবলেন  অপ্রিয় সৎপুত্র চিরকালের জন্য তাঁর পথ থেকে দূরে সরে গেল! ভোরে তিনি খুশিমনে মরমর পাথরে সাজানো প্রাসাদ চত্বরে হাঁটছেন। এমন সময় হঠাৎ দেখতে পেলেন, মনের আনন্দে বেড়ালটা রোদে বসে ভেজা পশম শুকিয়ে নিচ্ছে। তিনি অবাক বা ভীত না হয়ে বরং ঘটনা জানার আশায় রইলেন।

আল হাফিজের যুবরানি সে রাতে দাসিদের নিয়ে স্নানে বেরিয়ে গোল হয়ে জলকেলি করছিল। হঠাৎ তাঁরা দেখলো, একটা অসহায় বেড়াল ডুবে যাচ্ছে। তবে তার আগে একটা হাঁস পেয়েও সেই বেড়াল শিকার করেনি।  এটা দেখে তাঁদের কপাল কুঁচকে ওঠলো। তাই তাঁরা ওটাকে তুলে আনেন। সূর্য ওঠার পর বেড়ালের পশম শুকিয়ে স্বাভাবিক হতে কয়েক ঘণ্টা লেগেছিল।

এই ঘটনা শুনে সুলতানা তার রাগ গোপন রাখতে পারলেন না। সেদিন থেকে কালো বেড়ালের প্রতি তাঁর ঈর্ষা আর লুকানোর চেষ্টা করেননি। এমনকি এই পোষা প্রাণী যাতে হত্যার শিকার না হয়, তার জন্য সুলতানের নজরদারির প্রয়োজন হল।

পূর্ণিমার রাত খুব কাছাকাছি চলে এলো। সুলতানা তাঁর সৎপুত্রকে নিয়ে বহু জল্পনাকল্পনা করলেন। তবে তিনি প্রতিবারই ব্যর্থ হলেন। এর কারণ হল, বেড়ালটা খুবই চতুর। সবসময় তার শত্রুদের হাত থেকে গা বাঁচিয়ে চলে। শুধু সুলতান নয়, যুবরানিও বেড়ালটার খোঁজ রাখতেন।

শেষে অমাবস্যা ফুরোবার রাত নেমে এল। একটু পড়েই চাঁদ উঠবে। এবার একটা কিছু করতেই হবে। ভাগ্য যেন সুলতানার অনুকূলে। সুলতান তখন রাজ্যসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধান উজিরের সাথে আলোচনায় মত্ত। বেড়ালটা যুবরানির খোঁজে প্রাসাদে ঘোরাফেরা করছে। এদিকে যুবরানি মাঝরাতে ঘোরাঘুরি করতে বেরিয়েছেন। আর যুবরাজ বেন হারুন দিঘি থেকে বেশ লোভনীয় একটা রুইমাছ ধরে এনেছেন। মাছটা তিনি তাঁর বর্শি থেকে না খুলে ঝুলিয়ে রেখেছেন। তিনি ও তাঁর মা বারান্দায় থামের পেছনে লুকিয়ে রইলেন।

বেড়াল বেরিয়ে এলো। ভাবলেন, তাজা রুইয়ের গন্ধ শুঁকেই বারান্দায় চতুরের মতো হাঁটছে কি না? তা দেখতে বেন হারুন রুইয়ের স্থলে রুপার মাছ ঝুলালেন। বেড়ালের কাছে মাছটাকে বেশ শক্ত মনে হল। তাই সে কিছুটা দূরে সরে গেল। একটু পরেই তাজা রুইয়ের গন্ধে আবার ফিরে এলো।

‘মাছটা খুবই উদ্ভট! তবে খুবই লোভনীয়। তবে কী এই রহস্যময় থামের কাছে যাওয়া কি খুব নিরাপদ হবে?’ বেড়াল চিন্তা করল। তারপরও সে মুহূর্তেই রুইয়ের মোহে পড়ে যায়।

হায়! মূহুর্তেই সে ধরা পড়ল। তার মাথা কালো কাপড়ে ঢেকে ফেলা হল। সবচেয়ে খারাপ লাগছিল যে, তার ঘাড়ে একটা ভারী পাথর জুড়ে দেওয়া হল। এবার তাকে দিঘির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ধস্তাধস্তি, চেচামেচি আর কামড়েও কিছুই হল না! শত্রুর দয়া ছাড়া উপায়ও নেই! এমন কি আশেপাশে কাউকেই চোখে পড়ল না।

সুলতানা বললেন, ‘তাড়াতাড়ি যাও! পূবদিকে একটা আলো দেখতে পাচ্ছি। চাঁদ উঠার আগেই ওটাকে দিঘিতে ফেলে দিয়ে এসো।’

সমস্ত আশা নিরাশায় ডুবে গেল! তাঁর মাথা থেকে কাপর সরিয়ে নেওয়া হল। সুলতানা বদচোখে অবাক হয়ে দেখছেন। বেন হারুন তাকে জলে ফেলে দেবার জন্য প্রস্তুত। অসহায় বেড়ালটা এত ছোট আর এতটা দুর্বল যে, তার লড়াই অকাজের! তাই বুঝে নিলো যে, তার শেষ পরিণতি এসে গেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে অমাবস্যা শেষে সরু ফ্যাকাশে অর্ধচন্দ্র পুবের মেঘ ভেদ করে উদিত হল। বেন হারুন ও তাঁর সৎভাই আল হাফিজ লড়াই শুরু করল। সুলতানা তা দেখেই ভয়ে পালিয়ে গেলেন। আল হাফিজের দেহে দৈত্যের শক্তি অনুভূত হল। অল্পতেই তিনি বেন হারুনকে বন্দি করে ফেললেন।

সুলতান তাঁর সৎপুত্র ও সুলতানার খলপনার গল্প শুনে ভীষণ ক্রুদ্ধ হলেন। তিনি তাদের আদেশ জারি করলেন, ‘এদের কোনোই রাজকীয় অধিকার নেই। দোষীদের খুব দ্রুত প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করা হোক।’

পরদিন ভোরে শয়তান জাদুকরকেও প্রাণদণ্ড দেওয়া হল। প্রিয় বন্ধুরা, এটা যে তার জন্য যথার্থ ছিল।

প্রবীণ মহৎ সুলতান তাঁর পুত্রকে মৃত ভেবেছিলেন। আবার তাঁকে ফিরে পেয়ে তিনি ভীষণ খুশি হলেন। তাঁর অতীতের সব দুঃখও ভুলে গেলেন। যুবরাজ ও যুবরানির জন্য প্রাসাদে আবারও বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। সন্দেহ নেই, পূর্ব পার্সিয়ার সেই দূর সীমান্ত রাজ্যে গেলে সুলতান আবু হাফিজ, যুবরাজ আল হাফিজ, তাঁর যুবরানি আর তাঁর প্রিয় উজির বেন আহমেদের সুখী-সমৃদ্ধ জীবনের গল্প উপভোগ করা যাবে।

মোস্তাফিজুল হক
জন্ম ৩০ ডিসেম্বর ১৯৭৪। শেখহাটি, শেরপুর।
প্রকাশিত গ্রন্থ:
শিশুকিশোর ছড়াগ্রন্থ: ‘ইচ্ছে ডানার পাখি(২০১৭)’, ‘মধুমতির তীরে’, ‘পরির মেয়ে (২০১৮), ‘মেঘ নিয়ে যা শঙ্খচিল’ (২০২১)।
Tags: অনুবাদ গল্পএকটি পার্সিয়ান রূপকথামোস্তাফিজুল হক
Previous Post

গল্প।। অতপর একটি পোর্ট্রেট।। পুরবী সম্মানিত

Next Post

গল্প।। দেবযানীর হাতটা ছুঁয়ে।। হাসান ইকবাল

Chatal

Chatal

Next Post

গল্প।। দেবযানীর হাতটা ছুঁয়ে।। হাসান ইকবাল

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • About
  • Advertise
  • Privacy & Policy
  • Contact
বাংলামটর, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
ই-মেইল: [email protected]

© 2021 Chatalbd - Design & Developed By Developer Rejwan.

No Result
View All Result
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ

© 2021 Chatalbd - Design & Developed By Developer Rejwan.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In