Friday, May 9, 2025
  • Login
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ
No Result
View All Result
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ
No Result
View All Result
No Result
View All Result
Home গল্প

একটি ঘটনার বিবরণ।। আনোয়ার হাসান

Chatal by Chatal
December 3, 2021
in গল্প
A A
0
একটি ঘটনার বিবরণ।। আনোয়ার হাসান

কুমিল্লার সীমান্তবর্তী গ্রামে– নিজেদের গ্রাম– বছরে একবার এরা লম্বা সময়ের জন্য আসে, টুকটাক কাম-গিরস্থি,বাড়ি ঘরের এটাসেটা কাজ সেরে আবার দেশান্তরী হয় — এরা করাতি দল। অত্যন্ত পরিশ্রমী করাতি দলটি, সিফাতুল্লাহ মুন্সির বৈঠক ঘরকেই নিশ্চিত নির্ভর আস্তানা হিসেবে বেচে নিয়েছিল, বিনা ভাড়ায় — তখনকার দিনে গ্রামে ভাড়া দেওয়ার রেওয়াজই ছিল না — একাত্তরের যুদ্ধ শুরু হওয়া মাত্র এরা চলে গিয়েছিল, দীর্ঘ সময় এদের কোনো হদিস মেলেনি।

এরা আবার এল, যখন দেশে এরশাদের সামরিক শাসন চলছে, এটাই তাদের শেষ আসা। তখন মদন বাজারে সো মিলের পত্তন ঘটে গেছে। এরা মাত্র দুই মাস ছিল তখন।

এরা ফিরে আসে কুমিল্লায়, সেই নিজেদের গ্রামে, ওবায়দুল্লাহ ঐ করাতি দলের সাথে চলে আসে — তখনকার বৃহত্তর কুমিল্লার কুলাউড়া রেলস্টেশন পেরিয়ে বর্ডার সংলগ্ন ছোট্ট শহর ফুলতলা যেতে আগের গ্রামটি, গ্রামটির নাম এখন আর মনে করতে পারছে না।

ওখানেই শুনে — আগরতলার শহরতলীতে, খুব কাছেই, কিন্তু ওপাড়, মানে আরেক দেশ — আগামী শনিবার দিবাগত রাতে দেবী সুলতানা যাত্রা পালা মঞ্চস্ত হতে চলেছে, সুতরাং ওবায়দুল্লাহ যাবেই। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে এপার ওপার যাওয়া-আসা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়।

যেহেতু সামরিক শাসন, আর বর্ডারেও বেশ কড়াকড়ি হচ্ছে, ওবায়দুল্লাহকে সবাই মানা করল, বিশেষ করে করাতি দলের সর্দার, যাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে, এদেরই সবার বড় ভাই — করাতি দলে আপন চার ভাই, আরেক জন প্রতিবেশী মিলে এরা পাঁচজন — যার হাতে সিফাতুল্লা মুন্সি তার একরোখা পুত্রকে তুলে দিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছিল, সেই সর্দার তাকে অনেক বুঝালো, সে নীরব, বুঝ মানলো কি মানলো না, কিছুই বুঝার উপায় নেই। অবশ্য তার নিরীহ স্বভাব কারো অস্বস্তির কারণ হয় না।

ওবায়দুল্লার মতো যাত্রা পালা দেখার এমন দুর্নিবার আকর্ষণ খুব কম মানুষের থাকে। এরও কারণ আছে — সিফাতুল্লাহ মুন্সির বয়স যখন আটত্রিশ বছর পেরিয়ে গেছে, তখন পুত্র সন্তান লাভ হয়। এমনতর খুশির ঘটনায় নিজের গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামেও জিলাপি বিতরণ করা হয়। এই পুত্র সন্তান লাভ খুব সহজ ছিল না, তার স্ত্রীকে নগরের হাফিজ সাব হুজুরের অনেক তাবিজ-কবচ আর পানি পড়া খেতে হয়েছে। সুতরাং হাফিজ সাব হুজুরের নির্দেশ অনুযায়ী ওবায়দুল্লাহকে কোরানে হাফেজ হতেই হবে। কিন্তু এত আদরের সন্তান ত্রিশ পাড়া কোরান মুখস্ত করার মত কঠিন কাজটি আর তারে দিয়ে হলো না।

মদন আলিয়া মাদ্রাসায় দাখিল ক্লাসে পড়াকালীন বাজারের আলোকোজ্জ্বল রঙ্গমঞ্চে সে প্রথম যখন দেবী সুলতানা যাত্রা পালা দেখে, মুগ্ধ হয়ে যায়, বুঝতে পারে এ হলো জীবনের আরেক রূপ, প্রচুর আনন্দ আছে, বেদনা আছে, জীবনের উপলব্ধির গভীরতর কি যেন একটা আছে ওখানে।

সেই থেকে শুরু হল যাত্রা পালা দেখার দুর্নিবার নেশা। দেবী সুলতানা বই হলে তো কথাই নেই, সেটা পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক, তবে পড়া লেখাটা আর বেশী দূর অগ্রসর হলো না।

উদাসীন ঘুরে বেড়ানো তার স্বভাবের একটা গুরুতর দিক, সবে কৈশোর উত্তীর্ণ যুবক,লম্বা সুঠাম দেহের একহারা গড়ন, বড় বড় চোখ দু’টি কেমন মায়া জাগানিয়া, এ চোখের সামনে পুরো পৃথিবী তার আবাসভূমি –

সে কাউকে না জানিয়ে বর্ডার ক্রস করে শনিবার বিকেলের দিকে গিয়ে হাজির হয়।

সম্পূর্ণ অপরিচিত জায়গা –অপরিচিত জায়গার প্রতি তার বড় আকর্ষণ — ঘুরেফিরে চারপাশে দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে, যাত্রা মঞ্চের অদূরে, একটা কাঁচা রাস্তার পাশে ঘন গাছপালায় আড়াল করা বৈদ্যুতিক আলোতে আবছা অন্ধকার তৈরী করেছে, এমন একটা স্থানে দাঁড়িয়ে, অনেকক্ষণ ধরে পেশাব করে পেট খালি করে দিয়ে, বেশ স্বস্তি পাচ্ছে। পেশাব করা শেষ হলে, ডান পাশের প্রকাণ্ড কড়ই গাছটার নীচে গিয়ে দাঁড়ায়, এখান থেকে যাত্রা মঞ্চ একটু দূরে হলেও পরিস্কার দৃশ্যমান থাকে, কোলাহল শুনা যায়, অথচ জায়গাটা নির্জন ; সিগারেট ধরানোর সময় অত্যন্ত নাটকীয় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যার সাথে সাক্ষাৎ ঘটে তার নাম মিহির ঘোষ, নামটা সে অনেক পরে জানতে পেরেছিল।

সিগারেট ধরানোর পর জ্বলন্ত দিয়াশলাই কাটি অলক্ষ্যে ফেলতে গেলে, তা গিয়ে পড়ে মিহির ঘোষের গায়ের উপর — মিহির ঘোষের বাসা থেকে দোকানে যাওয়ার সহজ এবং সংক্ষিপ্ত পথ হলো এই নির্জন কড়ই গাছের তল মাড়িয়ে যাওয়া। প্রত্যহ দুপুরে যখন খেতে আসে, দীর্ঘ বিশ্রাম নিয়ে কিংবা বাসাবাড়ির প্রয়োজনীয় কাজ সেরে, একেবারে সন্ধ্যার পর এই সংক্ষিপ্ত পথেই আবার দোকানের দিকে ফিরে চলে, সঙ্গে থাকে কর্মচারী ছেলেটার জন্য খাবারের বাটি, রাত দশটার পর মিহির ঘোষ চলে আসে বাসায়, কর্মচারী ছেলেটা দোকান পাহারায় সেখানেই থাকে ; এই হলো প্রাত্যহিক রুটিন — মিহির ঘোষ তার মাতৃভাষার আঞ্চলিক টানে আচমকা খেঁকিয়ে উঠলে ওবায়দুল্লাহ ঘাবড়ে যায়, খুব তাৎক্ষণিক ঘটে যায় বিষয়টা, তবে মিহির ঘোষের ভাষা তাকে আশ্বস্ত করে।

ওবায়দুল্লাহ থতমত খেয়ে যখন অপরাধীর মত করে দু:খ প্রকাশ করে, দু:খ প্রকাশের কথা গুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারও সেই নির্দিষ্ট আঞ্চলিক ভাষার উচ্চারণে উদগীরণ হয়, তখন পরস্পরের প্রতি উভয়ের মনযোগ তৈরী হয় এবং তখন বিস্মিত হয়ে একে অপরকে দেখে, অবস্থাদৃষ্টে যে কারো মনে হবে, দীর্ঘ দিন পরে হারিয়ে যাওয়া কোনো আপন জনের আকস্মিক মহা মিলন ঘটে গেছে।

মিহির ঘোষ খুঁটে খুঁটে ওবায়দুল্লার মুখটা দেখে, আর কি যেন ভাবে, কারো মুখে কথা নেই, নীরব নিস্তব্ধ, সামান্য দিয়াশলাই’র কাঠির বিষয়টা এখন আর কারো মনে নেই, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি, স্কুলের মাঠে যাত্রা মঞ্চকে কেন্দ্র করে ক্রমবর্ধমান জমে উঠা ভীড়ের কোলাহল সন্ধ্যার এই অপ্রত্যাশিত স্তব্ধতা ভেঙে দিতে চাইছে, কোন্ অতল গভীর থেকে জেগে উঠে মিহির ঘোষ প্রথম কথা বলে, এখন আর রাগের কোন লক্ষ্মণ নেই, বরং বিস্ময় আর আগ্রহ মিলে একটা প্রশ্ন ;

” বাংলাদেশ তে আইচো?” তার এই জানতে চাওয়া সন্ধ্যার অন্ধকারে একটা তরঙ্গের মত খেলে যায়, ওবায়দুল্লাহ সে তরঙ্গের তালে দোলতে দোলাতে শুধু বলে,” জি! “

” হ, হেই ডাই ভাবছিলাম। ” মিহির ঘোষের অনুমান সত্য হয়ে গেলে ভেতরে ভেতরে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে এবং আবার প্রশ্ন করে,

” কোন্ ডিস্টিক?”

“ময়মনসিং “– পুরনো অভ্যাস বশত: বলে বটে, এর সাথে আবার যুক্ত করে, ” অহন নেত্রোনা জেলা অইছে।”

নেত্রকোনা নতুন জেলা হলো কি হলো না, মিহির ঘোষের এটা কোনো আগ্রহের বিষয় না হলেও মাথা নাড়িয়ে , মৃদু হেসে আনন্দ প্রকাশ করে ; মূলতঃ নেত্রকোনা নামটা শোনার পর তার জানার আগ্রহ আরও গভীরতর হয়, সুতরাং সে আবার প্রশ্ন করে,

” কোন্ গাঁও? কোন্ তানা? “

ওবায়দুল্লাহ বিস্মিত হয়, কেমন যেন আশাপ্রদ সব ব্যাপার ঘটে চলেছে।

“মদন তানা, ভাটগাও।”

খুব পরিচ্ছন্ন তার উত্তর।

” ভাট গাঁও! ” মিহির ঘোষ কথাটা এমনভাবে উচ্চারণ করে, ভাট গাঁও শব্দবন্ধটি যেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কিছু, সে কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে আবার জিজ্ঞেস করে,

” সিফাতুল্লাহ মুন্সিরে চিনো? “

প্রশ্নটা করে গভীর উৎসুক নিয়ে, সন্ধ্যার আলো-আঁধারির মধ্যে ওবায়দুল্লাহর উপলব্ধি হয়,ভদ্রলোক খুব দ্রুত উত্তর প্রত্যাশা করছেন।

” উনি আমার বাবা।” প্রথমে অবাক হলেও অত্যন্ত গর্বের সাথে জবাব দিল। জবাব শুনে মিহির ঘোষের ভাবখানা এমন হয় যে — ” সিফাতুল্লার পোলা! বলে কি রে হালার পুত”। এটা তো ভেতরের অনুভূতি, বিস্ময়ে তার চোখ দু’টি ছলছল করে উঠে, ওবায়দুল্লার চোখেও স্পষ্ট হয়েছে।

বি এস এফ এর তাড়নায় ওবায়দুল্লার ভেতরে এতক্ষণ যে ভয় সক্রিয় ছিল, তা এখন কোথায় যেন উড়ে গেল। সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না, সুদূর আগরতলায়, অন্য এক দেশে, কোনো একজন তার বাড়িঘর সহ বাবাকেও চেনেন, কে এই ভদ্রলোক? অতি আপনজন হবেন অবশ্যই।

স্বভাবতই সে কম কথা বলে, কিন্তু এখন যেন কথার ঝোলাটাই হারিয়ে ফেলেছে। বড় বড় চোখ করে শুধু ফ্যাল ফ্যাল তাকিয়েই থাকে।

মিহির ঘোষ আবেগে এতটাই আপ্লুত হয়েছে, ইচ্ছে করছে ছেলেটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে, কিন্তু বাপের মত অত্যধিক লম্বা গড়ন লক্ষ্য করে অনুমান করে, বড়জোর তার চুল হীন গোলগাল মাথা ছেলেটার বুকের সাথে গিয়ে মিলতে পারে। সুতরাং মনের গভীরে আবেগঘন ইচ্ছেটা নিবৃত্ত করে অন্য মনস্ক হয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল,বিএসএফ সিপাইদের টহল চলছে, বেশ আনাগোনা হচ্ছে। সে ভাবে, ছেলেটা হয়তো বিএসএফের তাড়া খেয়ে গাছপালার আড়ালে অপেক্ষাকৃত নির্জন এদিকটায় এসে থাকতে পারে, ভাবে, সুদূর নেত্রকোনা থেকে কেনই বা এলো? কি করে এলো? এরা যে আগরতলায় বসতি করেছে, এ উদ্দেশ্যেই কি এলো? আবার ভাবে, জানার তো কথা নয়, কোনো যোগাযোগ তো নেই একদমই, কত সংগ্রাম গেছে, টিকে থাকার সংগ্রাম, একটু ভালো থাকার সংগ্রাম, নিজেদের গণ্ডির বাইরে কতটাই বা আর সুযোগ পাওয়া গেলো।

মিহির ঘোষ খেয়াল করে, বিএসএফ সিপাইদের লক্ষ্য করে ছেলেটা কেমন চুপসে গেছে। এখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট না করে টহলরত সিপাইদের ফাঁকি দিয়ে সরু গলি পথে ওবায়দুল্লাহকে সঙ্গে করে নিয়ে নিজের ঢেরায় ফিরে আসে। কোনো প্রশ্ন না করে সেও সুবোধ বালকের মতো মিহির ঘোষকে অনুসরণ করেছে।

মাঝারি ধরনের টিনের চৌচালা ঘর, পাকা ভিটা, দুটো কক্ষ, সে যে কক্ষে আছে, বেশ বড়, সাজানো গোছানো, পরিপাটি। ছোট কক্ষের দরজায় একটা রঙিন পর্দা ঝুলছে, ঠিক এর উল্টো দিকে আরেকটা দরজা খোলা, যা সম্ভবত রান্নাঘরের সাথে যুক্ত, রান্না বান্নার ঝাঁঝালো গন্ধ আসছে, পুরো ঘরে পাতলা ধোঁয়া ছড়িয়ে রয়েছে, চোখ কেমন জ্বালা জ্বালা করছে।

মিহির ঘোষ খোলা দরজার দিকে তাকিয়ে সবিতার মাকে ডাকলো। সবিতার মা পাকঘর থেকে দ্রুত ছুটে এসে ওবায়দুল্লাহকে দেখা মাত্র দরজাতেই থমকে দাঁড়িয়ে মাথার ঘোমটা ঠিক করে নেয়, সিঁথিতে আঁকা সিঁদুরের উজ্জ্বলতা অবশ্য ঢাকা পড়ে না।

মহিলা লজ্জা পেয়েছে ভেবে তার দৃষ্টি ঘুরে গিয়ে ওপাশে বাঁশের দরমার — পার্টিশনের–উপর পড়লে, যেখানে ঝুলানো রাধাকৃষ্ণের একটা বাজারি ছবি, তখন সে বুঝতে পারে এটি একটি হিন্দু পরিবার, তাকে সঙ্গে করে যিনি নিয়ে এসেছেন, তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক।

পরস্পরের মধ্যে পরিচিত হওয়ার পর — সিফাতুল্লাহ এবং মিহির ঘোষ শৈশবের বন্ধু, কোনো অলস অবসরে সিফাতুল্লাহর কথা মনে পড়ে এখনো, ভাটগাঁও আর রানীগাঁর মাটিতে মিশে আছে যে শৈশব, শিখর শুদ্ধ এসে হাজির হয়।

হায়রে একাত্তর! পাশের দেশ ভারত অভিমুখে শরণার্থীর ঢল, তার অসুস্থ বৃদ্ধা মা, পোয়াতি বউ, কি সাংঘাতিক সময়! মা মরে গেল শেষমেশ, চারিদিকে শিয়াল-কুকুরের খাদ্য হচ্ছে মানুষের লাশ, অথচ মায়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান ভালো ভাবেই সম্পন্ন হলো, বলা যায় সম্ভব হলো একমাত্র সিফাতুল্লাহর জন্যই। এর পরের ঘটনা সে ভাবতে পারে না, ভাবতে চায় না, শুধু অনুমান করে, পরদিন ভোর বেলা সিফাতুল্লাহ হয়ত খুব মন খারাপ করে, সীমাহীন বিস্ময় নিয়ে শূন্য ভিটায় নির্বাক দাঁড়িয়েই থাকে অনেক ক্ষণ, এই কষ্ট তাকে পীড়া দেয় –

পুরো ঘরের পরিবেশে একটা আবেগঘন মুহূর্তের অবতারণা করে। এই আনন্দময় পরিবেশে মিহির ঘোষ তার একমাত্র সন্তান সবিতা ঘোষকেও ডেকে আনে।

মেয়েটি মায়ের মতোই সুন্দরী, ওবায়দুল্লাহ অনুমান করে মা হয়তো প্রথম যৌবনে ওরকমই সুন্দরী ছিল, কিন্তু অতীতের কোনো এক সময় এদের দেখেছে, কিংবা চিনতো এমনতর কোনো ঘটনাই মনে করতে পারছে না।

কার্যত এই পুরো ঘটনায় সে বিস্মিত হয়, অভিভূত হয়, আনন্দিত হয়, শেষে এক স্বপ্নময় রাজ্যে ঢুকে গিয়ে কেমন বোকা বনে যায়। সে হত-বিহবল হয়ে এরা যা-ই বলছে তাই করছে — পাজামা পাল্টে লুঙ্গি পড়ে নিয়েছে, পেছনের দরজা খুলে কল পাড়ে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে এসেছে, রাতের খাবার সেরে নিয়েছে ইত্যাদি –

যাত্রানুষ্ঠানের কোলাহল ক্ষীণ ধারায় শোনা যাচ্ছে, ওবায়দুল্লাহ ভাবছে, একটু ঘুমিয়ে নিলে ভাল হয়। মিহির ঘোষ দোকান বন্ধ করে মাত্র ফিরেছে, খাবারের খালি বাটি গুলো টেবিলের উপর রাখতে রাখতে ওবায়দুল্লাহর দিকে না তাকিয়েই বলে, ” লও বাবা যাত্রা দেখি গা, ” তার বলার মধ্যে এমন একটা প্রশান্তি লক্ষ্য করা যায়, দিন ব্যাপি পেছনের সমস্ত কাজগুলো সফলতার সাথে শেষ হয়েছে, সুতরাং এখন একমাত্র লক্ষ্য যাত্রা দেখা, যে লক্ষ্য সম্পাদনের জন্য ওবায়দুল্লাহ ঝুঁকি নিয়ে এতদূর এসেছে। ” মাত্র তো দশ-টা বাজে, ” ওবায়দুল্লাহর এই ক্লান্তি মিশানো জবাবে মিহির ঘোষ কথা বলতে গিয়ে টেবিলের উপর টর্চ লাইটটা খাড়া করে রাখতে পারছে না, কাজেই টর্চ রাখার কাজটা বন্ধ রেখে ওবায়দুল্লাহর দিকে তাকিয়ে গলার স্বর আরেকটু নরম করে বলে, ” হ, এদিকটায় একটু সকাল সকাল শুরু হয়া যায়, বাইরে ভারি শীত, গায়ের চাদরডা দিয়া বালা কইরা গা ডাইক্কা লও,কেউ যেন্ চিনতো না পারে।”

কেউ বলতে বিএসএফকে বুঝানো হয়েছে, ওবায়দুল্লাহ তা বুঝতে পারে, তাই মাপলার পেচিয়ে মাথা ঢেকে, সারা শরীর চাদর দিয়ে ভালো করে মুড়িয়ে নেয়।

যাত্রা পালা দেখে তারা যখন ফিরে, রাত প্রায় শেষের দিকে। সবিতার মা মনে হয় অপেক্ষাতেই ছিল, মাত্র একবার ডাকতেই দরজা খুলে দিয়ে ঘুমকাতুরে ঢুলুঢুলু চোখ কচলাতে কচলাতে ছোট কক্ষে সবিতার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ার সময় সবিতার ঘুম ভেঙে গেলে হঠাৎ গুঙিয়ে উঠে, তখন ওকে ছোট্ট শিশুর মতোই আহলাদি মনে হয়।

এদিকে ওরাও যখন শুবার আয়োজন করছে, অমনি কড়া নাড়ার শব্দ হলো।

” অহন আবার কেডা আইলো!” ওপাশ থেকে বিরক্ত হয়ে সবিতার মা হাই ছাড়তে ছাড়তে বলে, ” সবিতার বাপ দেহ তো।”

মিহির ঘোষও বিরক্ত হয়, একটা সন্দেহ থেকে দরজার পাশে কান পাতে। অপর পাশের কথা বার্তার ধরন শুনে আতঙ্কিত হয়ে ওবায়দুল্লার দিকে তাকায়।

সে বুঝতে পেরেছে, নির্ঘাত বি এস এফের আগমণ ঘটে গেছে, মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা, ছেলেটাকে বুঝি আর রক্ষা করা গেল না, নিজেদেরই কি হাল হয় বুঝতে পারছে না।

আবার কড়া নাড়ার শব্দ হলো, বেশ জোরেশোরে হলো, ” সবিতার বাপ কি শুনছো না!” সবিতার মা এবার চিৎকার দিল। সবিতার মা’র চিৎকারে কোনো জবাব না দিয়ে বরং তার মাথায় তাৎক্ষণিক যে বুদ্ধিটা খেলে গেল, এরই বাস্তবায়নে তৎপর হয়, সে ওবায়দুল্লাহকে ডান হাতের কবজির উপর মুটি করে ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে ঢুকে ছোট কক্ষের ভেতর, যেখানে সবিতা ও সবিতার মা শুয়ে আছে। হাতের ঈশারায় সবিতার মাকে চুপ করিয়ে দিয়ে, তাকে উঠিয়ে সবিতার পাশে ওবায়দুল্লাহকে শুইয়ে দেয় এবং ফিস ফিস করে বলে, ” বাবা তোমার বইনের সাথে শুইয়া তাকো। “

সবিতা ও সবিতার মা’র যেন বাক রুদ্ধ হয়ে যায়, ওবায়দুল্লাহরও একই অবস্থা হয়। এ সময় মিহির ঘোষের চোখে মুখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার এমন একটা ছবি ফুটে ওঠে, এরা সবাই বুঝতে পারে একটা ভয়ানক সংকটের মধ্যে ডুবে গেছে সকলে। সুতরাং এ মুহূর্তে মিহির ঘোষ যা বলছে, যা করছে, তা নিয়তি মনে করে এরা অবশের মতো অনুসরণ করে চলেছে।

অত:পর মিহির ঘোষ দরজা খুলে দেয় গভীর আত্মবিশ্বাস নিয়ে, তার পিছন পিছন সবিতার মা আসে। বিএসএফ সিপাইরা ঘরের এদিকটায় তল্লাশি চালিয়ে ছোট্ট কক্ষের দিকে এগোয়,

” এইদিগে যাইন্না যে উস্তাদ, আমার মেয়ে আর জামাই ঘুমাইছে “,মিহির ঘোষ তল্লাশিকারী নেতার উদ্দেশ্যে বলে, কিন্তু তার ভেতরটা মুহূর্তে মূছড়ে যায় যেন — সবিতার মা স্বামীর পাশেই দাঁড়িয়ে — কি বলতে গিয়ে কথা আটকে যায় তারও, একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি অতিক্রম করছে সবাই,

তবু ভেতরে ঢুকলো সিপাইরা, একই খাটে মশারির নীচে পাশাপাশি দু’জনকে শুয়ে থাকতে দেখে পরস্পর পরস্পরের দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকায় এবং একটা অপরাধবোধ নিয়ে শুধু “দু:খিত” কথাটা উচ্চারণ করে তারা চলে যায়।

সঙ্গে সঙ্গে মিহির ঘোষের শরীর থেকে, সবিতার মা’র শরীর থেকে, সবিতা ঘোষের শরীর থেকে, এমনকি ওবায়দুল্লাহর শরীর থেকে ঘাম ঝেড়ে জ্বর ভালো হয়ে যায়।

এরপর ওবায়দুল্লাহ ওদের এখানে ছয়দিন ছিল, জামাই না হলেও জামাই আদরেই ছিল, পরম বিশ্বস্ত আত্মীয় হিসেবেই ছিল।

 

আনোয়ার হাসান-জন্ম:২৭ মার্চ,১৯৬৭খ্রি:,গ্রাম -আইমা দেবী পুর, উপজেলা -আটপাড়া, জেলা -নেত্রকোনা। তিনি ১৯৮৯খ্রি:, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উপর এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি জোবাইদা রহমান মহিলা ডিগ্রী কলেজ, মদন, নেত্রকোণায় অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বসবাস করেন জেলা শহর নেত্রকোনায়। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন পদ্য লেখার মধ্য দিয়ে তার লেখা- লেখির জগতে প্রবেশ। তার প্রকাশিত বই, দু’টি উপন্যাস – গাঙপাড়ের মানুষ, রেমন পাবলিশার্স,ঢাকা, ২০০৯খ্রি: ; বিচ্ছিন্নতার গল্প, রেমন পাবলিশার্স, ঢাকা,২০১২খ্রি:।পাণ্ডুলিপি আকারে (অপ্রকাশিত) আছে- একটি ছড়া,একটি কাব্য, একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ। দীর্ঘ বিরতির পর আবার লেখালেখি শুরু করেছেন।

Tags: আনোয়ার হাসানগল্পচাতাল
Previous Post

সিদ্ধার্থ অভিজিতের ‘হেমলকে চুম্বন’ : পাঠ ও পাঠান্তর ।। তানভীর দুলাল

Next Post

কবিতা।। নিমাই জানা

Chatal

Chatal

Next Post
কবিতা।। নিমাই জানা

কবিতা।। নিমাই জানা

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • About
  • Advertise
  • Privacy & Policy
  • Contact
বাংলামটর, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
ই-মেইল: [email protected]

© 2021 Chatalbd - Design & Developed By Developer Rejwan.

No Result
View All Result
  • হোম
  • পরিচিতি
  • প্রবন্ধ
  • কবিতা
  • গল্প
  • সাক্ষাৎকার
  • বই আলোচনা
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিবেদন
  • অনুবাদ সাহিত্য
  • বিশেষ আয়োজন
  • বিবিধ
  • কবি-লেখকবৃন্দ

© 2021 Chatalbd - Design & Developed By Developer Rejwan.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In